দেশবাসীকে বৃষ্টির পানির সংরক্ষণের অনুরোধ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে নদী যেন দূষণ না হয় সেদিকেও দৃষ্টি রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন সরকারপ্রধান।
বুধবার (১৬ মার্চ) দুপুরে চট্টগ্রাম ওয়াসা কর্তৃক বাস্তবায়িত ‘শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার-২’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটা অনুরোধ আমার থাকবে, সেটা হলো বৃষ্টির পানি সংরক্ষণে আপনারা ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। প্রতিষ্ঠান তৈরি করবেন। প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের একটা ব্যবস্থা আপনাদের নিতে হবে। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করা এবং সেটা ব্যবহার করা এটা একান্তভাবে দরকার।’
নদী দূষণ রোধে দৃষ্টি রাখার নির্দেশ দিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘আরেকটা বিষয় আমি এর সঙ্গে বলতে চাই, কর্ণফুলী নদীর আশপাশে যেহেতু ব্যাপকভাবে শিল্পায়ন হচ্ছে, কাজেই কর্ণফুলী নদী, হালদা, সাঙ্গুসহ যে কটা নদী আছে এই নদীগুলো যেন কোনভাবে দূষণ না হয়, সেজন্য এগুলো রক্ষা করতে হবে। অন্যদিকে শিল্প প্রতিষ্ঠান এখন থেকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা দিকে আমরা দৃষ্টি দিয়েছি। সেটা করা হচ্ছে। এটা যেন ঠিকভাবে চলে সেটার দিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে।’
চট্টগ্রাম নগরী নানা সমস্যাগ্রস্ত ছিল উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘চট্টগ্রামের মানুষের অনেক অসুবিধা ছিল। বিশেষ করে পানির অনেক হাহাকার ছিল। এটা শুধু চট্টগ্রাম না, দেশের প্রায় অনেক জেলায় এ সমস্যাটা ছিল। আমরা সরকারে আসার পর থেকে প্রচেষ্টা চালাচ্ছি, এ সমস্যাগুলো সমাধান করার জন্য।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৯৬ সালে যখন সরকার গঠন করি তখন চট্টগ্রামের মানুষের পানি সমস্যা সমাধানে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করি। আমরা ব্যবস্থা করি পানি শোধন করে পাইপলাইনের মাধ্যমে চট্টগ্রামবাসীকে যেন আমরা পানি সরবরাহ করতে পারি। ১৯৯৯ সালে কর্ণফুলী নদীর পানি পরিশোধন করে চট্টগ্রাম শহরে সরবরাহ করার জন্য প্রকল্প গ্রহণ করি এবং সমীক্ষা করে ২০১১ সালে কর্ণফুলীর পানি সরবরাহ প্রকল্প ফেজ-১ আমরা বাস্তবায়ন শুরু করি।’
বঙ্গবন্ধুকন্যা আরও বলেন, ‘২০০১ সালে আমরা সরকারে আসতে পারিনি। ফলে কাজটা আমরা সম্পন্ন করতে পারিনি। দ্বিতীয়বার সরকারে আসার পর থেকে আমরা আবারও উদ্যোগ নেই। ২০১১ সালে আবার আমরা কাজ শুরু করি। চট্টগ্রামে ২০১৭ সালে প্রথম পানি শোধনাগার উদ্বোধন করি যাতে চট্টগ্রামের ওয়াসার পানি সরবরাহ বৃদ্ধি পায় এবং এলাকাবাসীর পানি যেন পায় সে ব্যবস্থা আমরা করি। তবে স্বাভাবিকভাবে মানুষের চাহিদা বাড়তে থাকে। আর সে কারণে পরবর্তীতে আবার আরেকটা উদ্যোগ নেই যে চট্টগ্রাম শহরে চাহিদা পূরণে দৈনিক নয় কোটি লিটার ক্ষমতাসম্পন্ন পানি শোধনাগার উদ্বোধন করি।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমরা চট্টগ্রামের পয়োনিষ্কাশনের জন্য বিশেষ প্রকল্প দিয়েছি। সেটা বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে।’
রাজধানীতে পানির সমস্যা নেই উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘পানির সমস্যা শুধু চট্টগ্রামে না, ঢাকা শহরেও ছিল। ঢাকা শহরে এখন আর পানি সমস্যা আল্লাহর রহমতে নেই। যেখানে আমাদের দৈনিক প্রায় ২৩৫ কোটি লিটার পানির চাহিদা। সেখানে আমরা ইতিমধ্যে ২৪৫ কোটি লিটার পর্যন্ত পানি শোধন করতে পারি।’
রাঙ্গুনিয়ার সরফভাটা এলাকায় কর্ণফুলী নদী থেকে পানি উত্তোলন করে পরিশোধনের পর চট্টগ্রাম শহরে সরবরাহ করার লক্ষ্য নিয়ে প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়। প্রকল্পটি উৎপাদনে গেলে ওয়াসার পানি সরবরাহ বাড়বে দৈনিক আরও ১৪ দশমিক তিন কোটি লিটার।
চট্টগ্রাম নগরীর গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের অর্থনীতির প্রাণশক্তিই চট্টগ্রাম। যদিও এর আগে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য বিষয়ক অনেক অফিসের প্রধান কার্যলয় চট্টগ্রামেই ছিল, দুর্ভাগ্য আমাদের ৭৫ পরবর্তীতে যারা ক্ষমতায় এসেছিল, তারা সব কিছুই ঢাকা শহরে নিয়ে আসে। ফলে চট্টগ্রাম অনেকটা অবহেলিত থেকে যায়।’
প্রসঙ্গত, শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার-২ চট্টগ্রাম ওয়াসার এ যাবতকালের সবচেয়ে বড় প্রকল্প। এর মাধ্যমে চট্টগ্রাম শহরে ওয়াসার চব্বিশ ঘণ্টা পানি সরবরাহ নিশ্চিত হতে যাচ্ছে।
২০১৬ সালে প্রকল্প কাজ হাতে নেয় চট্টগ্রাম ওয়াসা। ২০২০ সালের জুনে প্রকল্প কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কোভিডের কারণে তা পিছিয়ে যায়।
রাঙ্গুনিয়ার সরফভাটা এলাকায় কর্ণফুলী নদী থেকে পানি উত্তোলন করে পরিশোধনের পর চট্টগ্রাম শহরে সরবরাহ করার লক্ষ্য নিয়ে প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়। প্রকল্পটি উৎপাদনে গেলে ওয়াসার পানি সরবরাহ বাড়বে দৈনিক আরও ১৪ দশমিক তিন কোটি লিটার।
চট্টগ্রাম ওয়াসার ভাষ্য, বর্তমানে দৈনিক ৩৬ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করে চট্টগ্রাম ওয়াসা। এ প্রকল্প চালু হলে দৈনিক ৫০ কোটি লিটারের বেশি পানি সরবরাহ করতে পারবে সংস্থাটি।