প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় মানব জীবন দিনকে দিন অধিক প্রযুক্তি নির্ভর ও সহজতর হচ্ছে। অনলাইন স্বাস্থ্য সেবা তার মধ্যে অন্যতম। বিশেষত বৈশ্বিক মহামারি করোনার প্রভাবে ঘর বন্দি মানুষ অনলাইন স্বাস্থ্যসেবার প্রতি অনেক ঝুঁকে পড়েছে। লকডাউনে মানুষ খুব প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বের হতে পারছে না এবং চিকিৎসক দেখানোর প্রয়োজন হলেও এ সময়ে হাসপাতালে যাওয়া অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।

এ অবস্থায় সরাসরি চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে ইন্টারনেট ও মোবাইলের মাধ্যমে অনলাইন বা ই-স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করছে। এ সেবার মাধ্যমে সশরীরে চিকিৎসকের কাছে না গিয়েই সেবা প্রত্যাশীরা দেশি-বিদেশের অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের থেকে স্বাস্থ্য পরামর্শ ও সেবা নিচ্ছেন।

যে সকল সেবা পাচ্ছেন রোগীরা

১. টেলিমেডিসিন সেবা

টেলিমেডিসিন সেবা ই-স্বাস্থ্যসেবা পরিপূরক শব্দই বলা যায়। কেননা ই-স্বাস্থ্য সেবার একটি বড় অংশ জুড়েই রয়েছে টেলিমেডিসিন সেবা। করোনাতে আক্রান্ত লক্ষণহীন বা মৃদু লক্ষণ রয়েছে এমন রোগীদের জন্য সরকার প্রথম এ সেবা চালু করে। স্বাস্থ্য সেবা অধিদপ্তরের সেই পরিষেবা পরবর্তীতে বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার উদ্যোগে সার্বজনীন সেবায় পরিণত হয়।

বিভিন্ন সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কর্মরত চিকিৎসকরা এখন মোবাইল ফোনে স্বাস্থ্য পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এজন্য দেশের সকল সরকারি হাসপাতালে একটি করে মোবাইল ফোন দেওয়া হয়েছে। দেশের যেকোনো নাগরিক এভাবে যে কোনো চিকিৎসকের পরামর্শ পেতে পারে। বর্তমানে দেশের অনেক বেসরকারি হাসপাতাল ও প্রতিষ্ঠান টেলিমেডিসিন সেবা চালু হয়েছে। এর মাধ্যমে রোগী উপজেলা থেকে জেলা সদরে না এসেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সেবা ও পরামর্শ পাচ্ছেন। ইতিমধ্যে দেশে অনেক প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্যসেবা সাইট বা অ্যাপের মাধ্যমে অডিও বা ভিডিও কলের মাধ্যমে সরাসরি রোগীর সঙ্গে কথা বলে চিকিৎসা সেবা প্রদান করছে।

২. ডিজিটাল প্রেসক্রিপশন

ডিজিটাল প্রেসক্রিপশন ই-স্বাস্থ্য সেবায় নতুন মাত্রা এনে দিয়েছে। ডিজিটাল প্রেসক্রিপশন তৈরির লক্ষ্যে ইতিমধ্যে সফটওয়্যার তৈরি করা হয়েছে। এর মাধ্যমে একজন চিকিৎসক খুব সহজে রোগীর জন্য আধুনিক স্মার্ট প্রেসক্রিপশন তৈরি করতে পারেন। এটি হাতে লিখিত না হওয়ায় রোগীদের জন্য ওষুধের নাম ডোজ বুঝতে সমস্যা হয় না। এতে নির্দিষ্ট কোম্পানির নাম না থেকে ওষুধের জনরা নাম লিখা থাকায় ফার্মেসিতে গিয়ে ওষুধ পেতে ভোগান্তি কমে যায়।

৩. ওষুধ ডেলিভারি

করোনা মহামারিতে লকডাউনের ফলে সরাসরি ফার্মেসিতে গিয়ে ওষুধ কিনার পরিবর্তে অনলাইনে ওষুধ ক্রয়ের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। অনলাইনে প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ওষুধ অর্ডার দিলেই তা চলে আসছে বাসায়। এতে রোগীর ভোগান্তি হ্রাস পেয়েছে। একইসঙ্গে সংক্রামক রোগে আক্রান্ত রোগীরা বাইরে না যাওয়ায় সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকিও হ্রাস পাচ্ছে।

৪. বাসায় থেকেই বিভিন্ন টেস্টের সুযোগ

করোনাকালে সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাসায় বসেই করোনা পরীক্ষার সুযোগ তৈরি করা হয়েছিল। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও প্রতিষ্ঠান ওয়েবসাইট ও অ্যাপের মাধমে এ সেবা পরিচালনা করছে।  নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি প্রদানের মধ্যমে অ্যাপে বিস্তারিত তথ্য প্রদান করলে স্বাস্থ্যকর্মী বাসায় এসে নমুন সংগ্রহ করে এবং পরীক্ষার ধরন অনুযায়ী রিপোর্ট প্রদান করে।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version