একসময় নতুন পাসপোর্ট পেতে ভোগান্তি পোহাতে হত। পাল্টেছে দিন। এখন পাসপোর্টের আবেদন এবং টাকা জমা দেওয়া যায় ঘরে বসেই। এরপর শুধু নির্দিষ্ট দিনে নির্ধারিত পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে ফিঙ্গারপ্রিন্ট এবং ছবি তুলে আসতে হবে। তারপর পুলিশ ভেরিফিকেশন শেষে পাসপোর্ট নিয়ে আসার এসএমএস পাবেন।

ই-পাসপোর্টের খরচ

আবেদনের ধরন ও পাসপোর্টের পৃষ্ঠা সংখ্যার উপর ভিত্তি করে পাসপোর্ট ফি বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। ৫ বছর মেয়াদী ও ৪৮ পৃষ্ঠার পাসপোর্টের ফি  ৪০২৫ টাকা।  একই মেয়াদের ৬৪ পৃষ্ঠার পাসপোর্টের খরচ পড়বে ৬৩২৫ টাকা।

১০ বছর মেয়াদী ৪৮ পৃষ্ঠার পাসপোর্টের  ফি ৫৭৫০ টাকা, একই মেয়াদের ৬৪ পৃষ্ঠার পাসপোর্টে খরচ ৮০৫০ টাকা।

এই ফি নিয়মিত ডেলিভারির ক্ষেত্রে। এভাবে আপনি ২১ দিনের মধ্যে পাসপোর্ট পাবেন। এছাড়াও ৭ দিনে জরুরি এবং ২ দিনে অতি জরুরি পাসপোর্টও পাওয়া যায়, তবে সেক্ষেত্রে খরচ অনেকটা বাড়বে।

ই-পাসপোর্টের আবেদন যেভাবে

ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করবেন  https://www.epassport.gov.bd/onboarding এই ঠিকানায়।

পাসপোর্ট ফি জমা দেয়ার উপায়

১. ব্যাংকে পাসপোর্ট ফি জমা দেয়া

আপনার আশেপাশে প্রায় সব ব্যাংকেই চালানের মাধ্যমে পাসপোর্টের টাকা জমা দিতে পারবেন। তবে সব ব্যাংক নাও নিতে পারে। তাই আগে জেনে নিন আপনার সুবিধাজনক কোন ব্যাংকে পাসপোর্ট ফি জমা নেয়। তারপর নিচের ডকুমেন্টস নিয়ে ফি জমা দিন।

ক. এনআইডি বা জন্ম নিবন্ধন সনদ (যেটা দিয়ে পাসপোর্ট আবেদন করেছেন)
খ.  অ্যাপ্লিকেশন সামারি পেইজ
গ. আর ব্যাংকে একটা ফর্ম দেবে পূরণ করতে

২. এ চালানের মাধ্যমে নিজে জমা দেয়া

এছাড়া আপনি চাইলে রকেট, বিকাশ, ডিবিবিএল নেক্সাস বা অন্যান্য ব্যাংকের ভিসা ও মাস্টার কার্ড দিয়ে অনলাইনে ও এ-চালানের অ্যাপে পাসপোর্ট ফি দিতে পারবেন।

ওয়েবসাইটের মাধ্যমে দিতে https://ibas.finance.gov.bd/acs/general/sales এই লিংক গিয়ে পাসপোর্ট ফি সিলেক্ট করে আবেদনের প্রকৃতি ও বিতরণের প্রকৃতি সিলেক্ট করে পছন্দমত ব্যাংকের গেটওয়ে সিলেক্ট করে ফি দিন। এই সাইটে ফি দিতে কোন রেজিস্ট্রেশনের দরকার নাই।

একই ভাবে এ-চালানের মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমেও ফি দিতে পারবেন। অ্যাপ ডাউনলোড করুন। অ্যাপে রেজিস্ট্রেশন করে পাসপোর্ট ফি সিলেক্ট করে এনআইডি নম্বর দিলে অটো নাম ও ঠিকানা সার্ভার থেকে চলে আসবে ও শেষের দিকে পেমেন্ট অপশন পাবেন।

দুইভাবেই পেমেন্ট সম্পন্ন হলে চালান ডাউনলোড করতে পারবেন। চালান ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে নিন। চালান চাইলে ভেরিফাই করতে পারেন এই সাইট থেকে। পাসপোর্ট আবেদনকারীর নাম ও চালানের নাম একই দিতে হবে। না হলে আবেদন নেবে না। চালানে ডট (.) থাকা বা না থাকায় কোন সমস্যা হবে না।

ই-পাসপোর্টের সরকারি নির্দেশনা

ই-পাসপোর্ট করার ক্ষেত্রে সরকারি নির্দেশনাসমূহ নিম্নরূপ:

১. ই-পাসপোর্টের আবেদনপত্র অনলাইনে পূরণ করা যাবে।
২. ই-পাসপোর্ট আবেদনের ক্ষেত্রে কোন কাগজপত্র সত্যায়ন করার প্রয়োজন হবে না।
৩. ই-পাসপোর্ট ফরমে কোন ছবি সংযোজন এবং তা সত্যায়নের প্রয়োজন হবে না।
৪. জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) অথবা অনলাইন জন্ম নিবন্ধন (BRC) সনদ অনুযায়ী আবেদন পত্র পূরণ করতে হবে।
৫. অপ্রাপ্ত বয়স্ক (১৮ বছরের কম) আবেদনকারী যার জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) নাই, তার পিতা অথবা মাতার জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) নম্বর অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে।

৬. জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) অথবা অনলাইন জন্ম নিবন্ধন (BRC) সনদ নিম্নোক্ত বয়স অনুসারে দাখিল করতে হবে-
ক. ১৮ বছরের নিম্নে হলে অনলাইন জন্ম নিবন্ধন (BRC) সনদ।
খ. ১৮-২০ বছর হলে জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) অথবা অনলাইন জন্ম নিবন্ধন (BRC) সনদ
গ. ২০ বছরের উর্ধে হলে জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) আবশ্যক । তবে বিদেশে বাংলাদেশ মিশন হতে আবেদনের ক্ষেত্রে অনলাইন জন্ম নিবন্ধন (BRC) সনদ গ্রহণযোগ্য হবে।

৭. উপরের ক্রমিক নম্বরগুলো অবশ্যই পূরণীয়।

৮. দত্তক/অভিভাবকত্ব গ্রহণের ক্ষেত্রে পাসপোর্টের আবেদনের সঙ্গে সুরক্ষা সেবা বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হতে জারিকৃত আদেশ দাখিল করতে হবে।
৯. আবেদন বর্তমান ঠিকানা সংশ্লিষ্ঠ বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস/আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস/বিদেশস্থ বাংলাদেশ মিশনে দাখিল করতে হবে।
১০. ১৮ বছরের নিম্নের এবং ৬৫ বছরের উর্ধ্বে সকল আবেদনে ই-পাসপোর্টের মেয়াদ হবে স৫ বছর এবং ৪৮ পৃষ্ঠার।
১১. প্রাসঙ্গিক টেকনিক্যাল সনদসমূহ (যেমন- ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ড্রাইভার ইত্যাদি) আপলোড/সংযোজন করতে হবে।
১২. প্রযোজ্য ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক জিও (GO)/এনওসি (NOC)/ প্রত্যয়নপত্র/ অবসরোত্তর ছুটির আদেশ (PRL Order)/ পেনশন বই আপলোড/সংযোজন করতে হবে যা ইস্যুকারী কর্তৃপক্ষের নিজ নিজ Website এ আপলোড থাকতে হবে।

১৩. প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বিবাহ সনদ/নিকাহনামা এবং বিবাহ বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে তালাকনামা দাখিল করতে হবে।
১৪. দেশের অভ্যন্তরে আবেদনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ফি এর উপর নির্ধারিত হারে ভ্যাট (VAT) সহ অন্যান্য চার্জ (যদি থাকে) অতিরিক্ত হিসাবে প্রদেয় হবে। বিদেশে আবেদনের ক্ষেত্রেও সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ফি প্রদেয় হবে।

১৫. কূটনৈতিক পাসপোর্টের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কনস্যুলার ও ওয়েলফেয়ার উইং (Consular and Welfare Wing) অথবা ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় বরাবর আবেদনপত্র দাখিল করতে হবে।

১৬. বৈদেশিক মিশন হতে নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করা হলে স্থায়ী ঠিকানার কলামে বাংলাদেশের যোগাযোগের ঠিকানা উল্লেখ করতে হবে।
১৭. অতি জরুরি পাসপোর্টের আবেদনের ক্ষেত্রে (নতুন ইস্যু) নিজ উদ্যোগে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সনদ সংগ্রহ পূর্বক আবশ্যিকভাবে আবেদনের সঙ্গে দাখিল করতে হবে।

১৮. (ক) দেশের অভ্যন্তরে অতি জরুরি পাসপোর্ট প্রাপ্তির লক্ষ্যে আবেদনের সঙ্গে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স দাখিল করা হলে অন্যান্য সকল তথ্য সঠিক থাকা সাপেক্ষে ২ কর্মদিবসের মধ্যে পাসপোর্ট প্রদান করা হবে।
খ. দেশের অভ্যন্তরে জরুরি পাসপোর্ট প্রাপ্তির লক্ষ্যে আবেদনের সঙ্গে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স দাখিল করা হলে অন্যান্য সকল তথ্য সঠিক থাকা সাপেক্ষে ৭ কর্মদিবসের মধ্যে পাসপোর্ট প্রদান করা হবে।
গ. দেশের অভ্যন্তরে রেগুলার পাসপোর্ট প্রাপ্তির লক্ষ্যে আবেদনের সঙ্গে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স দাখিল করা হলে অন্যান্য সকল তথ্য সঠিক থাকা সাপেক্ষে ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে পাসপোর্ট প্রদান করা হবে।

১৯. আবেদনের সময় মূল জাতীয় পরিচয়পত্র (NID), অনলাইন জন্ম নিবন্ধন (BRC) এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে টেকনিক্যাল সনদ, সরকারি আদেশ (GO)/অনাপত্তি (NOC) প্রদর্শন/দাখিল করতে হবে।
২০. পাসপোর্ট রি-ইস্যুর ক্ষেত্রে মূল পাসপোর্ট প্রদশন করতে হবে।
২১. হারানো পাসপোর্টের ক্ষেত্রে মূল জিডির কপি প্রদর্শন/দাখিল করতে হবে।
২২. ৬ বছর বয়সের নিম্নের আবেদনের ক্ষেত্রে ৩ আর (3R Size) সাইজের ( ল্যাব প্রিন্ট গ্রে ব্যাকগ্রউন্ড ) ছবি দাখিল করতে হবে।
২৩. পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে অথবা চুরি হলে দ্রুত নিকটস্থ থানায় জানাতে হবে। নতুন পাসপোর্টের ক্ষেত্রে পুরাতন পাসপোর্টের ফটোকপি, জিডি কপিসহ আবেদন দাখিল করতে হবে ।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version