ইউক্রেনের সমর্থনে রাশিয়ার আগ্রাসন বন্ধের দাবিতে সান্তিয়াগো, ভ্যাঙ্কুভার প্যারিস এবং নিউইয়র্ক সহ একাধিক শহরের হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভে সামিল হলেন। বিক্ষোভকারীরা শনিবার রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিনের আক্রমণের বিরুদ্ধে সমাবেশ করেন। ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ইউক্রেনের ওপর হামলা শুরু হয়েছে রাশিয়া এবং যত দিন যাচ্ছে বাড়ছে বোমা হামলার পরিমাণ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমান অনুযায়ী, ফ্রান্সের একাধিক শহরে ১১৯ টি বিক্ষোভে প্রায় ৪১ হাজার ৬০০ মানুষ অংশ নিয়েছিলেন ।প্যারিসেই, প্লেস দে লা ব্যাস্টিলে ১৬ হাজার মানুষ জমায়েত করেছিলেন। প্যারিসের রাস্তায় প্রতিবাদ করার সময়ে এক ফ্রাঙ্কো-ইউক্রেনীয় নাটালিয়া কাঁধে ইউক্রেনীয় পতাকা লাগিয়ে বলেন, ” এত আঘাত সত্ত্বেও আমরা জিতবই। ”ইউক্রেনে তার ছেলের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের কারণে তিনি তার পুরো নাম বলতে অস্বীকার করেছেন। ইউক্রেনের মানুষের সাহস, তাদের সংকল্পের জন্য তিনি গর্ব করেন বলে জানিয়েছেন নাটালিয়া। স্ট্যান্ড উইথ ইউক্রেনের অন্যতম সদস্য অ্যালাইন লে বেইল-ক্রেমার জোর গলায় বলেন, ”আমরা প্রতি সপ্তাহান্তে এভাবেই বিক্ষোভ চালিয়ে যাবো যতক্ষণ না পুতিন তার ট্যাঙ্কগুলি নিয়ে পিছু হটছেন।
” সুইজারল্যান্ডের এটিএস নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, রাশিয়ান আগ্রাসনের দশম দিনে ইউক্রেন থেকে রাশিয়ার সৈন্য প্রত্যাহারের দাবিতে বৃহত্তম সমাবেশগুলির মধ্যে একটি ছিল জুরিখে, যেখানে ৪০ হাজার লোক অংশ নিয়েছিল বলে অনুমান। বৃহত্তম সুইস শহরের বিক্ষোভকারীরা অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ করে শান্তির আহ্বান জানান। ইউক্রেনীয়দের সমর্থনে লন্ডনেও শত শত লোক রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছিলেন। বছর ছত্তিরিশের ওলেনা মার্সিনিউক তার ২ সন্তানকে নিয়ে মধ্য লন্ডনের ট্রাফালগার স্কোয়ারে একটি বিক্ষোভে যোগ দিয়ে বলেন, ” ইউক্রেনকে সমর্থন করার জন্য আমাদের একতাবদ্ধ হতে হবে । রাশিয়ার কাছে এই বার্তা পৌঁছে দিতে হবে যে গোটা বিশ্ব ইউক্রেনের পক্ষে”।
রোমের কেন্দ্রে, ইউনিয়ন এবং সংগঠনগুলি একটি বড় “শান্তি মিছিল”-এর আয়োজন করেছিল ,যেখানে পুতিনের বিরুদ্ধে ও ন্যাটোর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয় । রামধনুর রঙে একটি বড় পতাকা হাতে নিয়ে শান্তিবাদীরা স্লোগান দিতে থাকেন , “কোন ঘাঁটি নেই, সৈন্য নেই, ইতালি ন্যাটোর বাইরে।” ইতালীয় কার্টুনিস্ট, অভিনেতা এবং লেখক ভাউরো সেনেসির মতে , শহরের বুকে এটি সম্ভবত শান্তির জন্য প্রথম বাস্তব বিক্ষোভের মধ্যে একটি। অন্যদিকে এক হাজারেরও বেশি মানুষ ক্রোয়েশিয়ার রাজধানী জাগরেবে ব্যানার হাতে বিক্ষোভ করেছেন। তাদের বলতে শোনা গেছে ” যুদ্ধ বন্ধ করুন, ইউরোপ বাঁচান এবং ইউক্রেনের গৌরব ফিরিয়ে দিন।” আটলান্টিক মহাসাগর পেরিয়ে কয়েক হাজার মানুষ নিউ ইয়র্কের টাইমস স্কোয়ারে জড়ো হয়েছিলেন। রাশিয়ান সন্ত্রাস বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে তারা সূর্যমুখী ফুল হাতে নিয়ে বিক্ষোভ দেখান , যা ইউক্রেনের জাতীয় ফুল । একটি মঞ্চে, বেশ কয়েকজন বক্তা ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির ইউক্রেনের উপর নো-ফ্লাই জোন করার আহ্বানকে প্রতিধ্বনিত করেছিলেন, যা রাশিয়ার সাথে সরাসরি সংঘর্ষ শুরু করার ভয়ে ন্যাটো এখনও পর্যন্ত সমর্থন করেনি । নো-ফ্লাই জোন এবং ইউক্রেনের জন্য সামরিক সহায়তার দাবিতে ওয়াশিংটনের হোয়াইট হাউসের বাইরেও শত শত লোক জড়ো হয়েছিলেন । চিলির সান্তিয়াগোতে, রাশিয়ান দূতাবাসের সামনে একটি যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ দেখা গেছে , অন্যদিকে ইউক্রেনীয় সম্প্রদায়ের সদস্যরা রাজধানী বোগোটায় কলম্বিয়ার রাশিয়ান দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ করেন । ভ্যাঙ্কুভার আর্ট গ্যালারির সামনে হাজার হাজার মানুষকে ইউক্রেনের পক্ষে তাদের সমর্থন জানান । এদিকে আক্রমণের পরপরই, বিশিষ্ট রাশিয়ানরা তাদের যুদ্ধের বিরোধিতার পক্ষে মত জানিয়ে জনসমক্ষে এসেছিলেন এবং সারা দেশে সমাবেশের জন্য ১,৮০০ জনেরও বেশি লোককে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। গত সপ্তাহান্তে, রাশিয়া, জার্মানি, স্পেন, ফিনল্যান্ড এবং চেক প্রজাতন্ত্র সহ ইউরোপজুড়ে কয়েক হাজার মানুষ হলুদ এবং নীল রঙের পতাকা হাতে রাস্তায় নেমে আসেন ।
সূত্র : www.theguardian.com