দ্যা মেইল বিডি / খবর সবসময়

; ;

দ্যা মেইল বিডি ডট কম

তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধিত অনলাইন পত্রিকা, নিবন্ধন নং- ১১

স্টাফ রিপোর্টার:
একজন নারীকে কেটে ছয় টুকরো করে হত্যার পরও হত্যাকাণ্ডের স্থলের পাশেই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছিলেন অভিযুক্তরা। আতঙ্কের কোনো ছাপ ছিল না তাদের চেহারায়। এ তো সিনেমা বা নাটকের গল্পকে হার মানায়।
এমন ঘটনা ঘটেছে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি বুধবার ওষুধ কেনার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয়েছিলেন এক সৌদিপ্রবাসীর স্ত্রী। পরদিন পৌর শহরের একটি তালাবদ্ধ ফার্মেসি থেকে ওই নারীর ছয় টুকরা মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে মামলার প্রধান আসামি ফার্মেসির মালিক জিতেশ চন্দ গোপসহ (৩০) তিনজনকে গ্রেপ্তার করে ঢাকার অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। শনিবার সিআইডির পক্ষ থেকে জানানো হয় হত্যাকাণ্ডের কারণ।
জড়িত তিনজনের মধ্যে জিতেশ ঘটনার পর পলাতক ছিলেন। তাকে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ঢাকায় গ্রেপ্তার করে সিআইডি। অপর গ্রেপ্তারকৃত অনজিৎ গোপ ও অসিত- এ দুজন বীভৎস এই হত্যাকাণ্ডের পরও স্বাভাবিকভাবে ব্যবসা পরিচালনা করছিলেন নিজ নিজ দোকানে।
রোববার জগন্নাথপুর বাজারের ব্যবসায়ী ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নিহত নারীর মরদেহ উদ্ধারের সময় ফার্মেসির পাশেই নিজ মুদি দোকানে ব্যবসা পরিচালনা করছিলেন অনজিৎ গোপ। অন্যান্য দিনের মতোই স্বাভাবিক ছিলেন তিনি। তার মতো স্বাভাবিক ছিলেন পাশের দোকানের অরূপ ফার্মেসির মালিক অসিত গোপও। শুক্রবার রাতে দুজনকে সিআইডি পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। হত্যাকাণ্ডে এ দুজন জড়িত এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে হতবাক হয়ে যান ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা।
স্থানীয় এক ব্যক্তি জানান, মরদেহ উদ্ধারের সময় ফার্মেসির পাশেই মুদি দোকানে অনজিৎকে দেখেছি একদম স্বাভাবিক। জিতেশ ঘটনার রাতে সাড়ে ৯টার দিকে তার দোকান থেকে আলু কিনে নিয়ে গেছে বলে অনজিৎ জানান আমাদের। এ খুনের ঘটনায় অনজিৎও জড়িত শুনে হতবাক আমি। কী করে এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ডে জড়িত থেকেও মানুষ অতি স্বাভাবিক থাকতে পারে!
গোবিন্দ নামের এক ব্যবসায়ী জানান, লাশ উদ্ধারের সময় অসিত তার ওষুধের দোকানে স্বাভাবিক অবস্থায় ছিলেন। একটি বীভৎস হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে এত স্বাভাবিক থাকতে পারা বিশ্বাসই হয় না। এমন ঘটনায় সিনেমাকেও হার মানায়।
জগন্নাথপুর বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাহির উদ্দিন জানান, লোমহর্ষক এ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের ফাঁসি দাবি করছি।
প্রসঙ্গত, ১৬ ফেব্রুয়ারি বুধবার বিকেলে অভি মেডিক্যাল হল নামের ফার্মেসিতে ওষুধ কেনার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন গৃহবধূ শাহনাজ পারভীন। গৃহবধূর ভাই হেলাল মিয়া তার বোন বাসায় ফেরেননি জানতে পেরে ওই ফার্মেসিতে যান বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে। তখন ফার্মেসি বন্ধ পাওয়া যায়। পরে ফার্মেসির মালিক জিতেশ চন্দ্র গোপকে মোবাইলে কল দিলে তিনি জানান, তার বোন ওষুধ না পেয়ে চলে গেছেন। বোনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে পরিবারের লোকজন যোগাযোগ করলে অন্য এক নারী ফোন রিসিভ করে জানান, তিনি (নিহত নারী) সিলেট ওসমানীতে আছেন। সেখানে যোগাযোগ করেও তার সন্ধান মেলেনি। পরে পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করা হয়। সন্ধ্যা ৭টার পর থেকে শাহনাজের ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। রাতভর বিভিন্ন স্থানে যোগাযোগ করেও শাহনাজের সন্ধান পাওয়া যায়নি।
পরদিন জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাজেদুল ইসলামের উপস্থিতিতে জগন্নাথপুর থানার পুলিশ অভি ফার্মেসির তালা ভেঙে অভিযান চালায়। এ সময় দোকানের রোগী দেখার টেবিলের নিচে বিছানার চাদর দিয়ে মোড়ানো ওই নারীর ছয় টুকরো মরদেহ উদ্ধার করা হয়। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের ভাই হেলাল মিয়া বাদী হয়ে জগন্নাথপুর থানায় মামলা দায়ের করেন বৃহস্পতিবার রাতে। এদিকে ঘটনার পর জিতেশ পালিয়ে যান। গত শুক্রবার জিতেশ চন্দ্রকে ঢাকায় এবং জগন্নাথপুর পৌর এলাকা থেকে অনজিৎ ও অসিতকে সিআইডি গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃত জিতেশ চন্দ্র কিশোরগঞ্জের ইটনার গ্রামের যাদব চন্দ্র গোপের ছেলে, একই এলাকার মৃত রসময় চন্দ্র গোপের ছেলে অনজিৎ চন্দ্র গোপ (৩৮) ও নেত্রকোনার মোহনগঞ্জের পতিত পাবন গোপের ছেলে অসিত গোপ (৩৬)। তারা দীর্ঘদিন ধরে পৌর এলাকায় বসবাস করে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে সিআইডি জানিয়েছে, জগন্নাথপুর উপজেলার নারিকেলতলা গ্রামের সৌদিপ্রবাসীর স্ত্রী শাহনাজ পারভীন জ্যোৎস্না ২০১৩ সাল থেকে জগন্নাথপুর পৌর শহরে দুই ছেলে, এক মেয়ে, বৃদ্ধা মা ও ভাই-বোনদের নিয়ে নিজের বাসায় বসবাস করছিলেন। ওষুধপত্র কেনার সুবাদে শহরের অভি মেডিক্যাল হলের মালিক জিতেশের সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। জ্যোৎস্না কিছুদিন ধরে শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি জ্যোৎস্নার মায়ের রক্তচাপ মাপতে জিতেশ তাদের বাসায় যান। তখন জ্যোৎস্না তার শারীরিক সমস্যার কথা জানালে জিতেশ তাকে ফার্মেসিতে যেতে বলেন। পরদিন বিকেলে জ্যোৎস্না জিতেশের দোকানে গেলে কাস্টমার রয়েছে বলে তাকে চিকিৎসা দেওয়ার কক্ষে অপেক্ষা করতে বলে সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন। এদিকে রাত বেড়ে যায়। পরে জ্যোৎস্নাকে একটি ঘুমের ওষুধ খেতে দেন জিতেশ। এতে জ্যোৎস্না তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। তখন জিতেশ তার দুই সহযোগী অনজিৎ চন্দ্র গোপ ও অসিত গোপকে নিয়ে ধর্ষণের পরিকল্পনা করেন। এরপর গভীর রাতে আশপাশের দোকান বন্ধ হয়ে গেলে তিনজন তাকে ধর্ষণ করেন। জ্যোৎস্না ধর্ষণের কথা সবাইকে জানিয়ে দেওয়ার হুমকি দিলে জিতেশ ও তার দুই বন্ধু মিলে তাকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যার পর ফল কাটার ছুরি দিয়ে মরদেহ ছয় টুকরা করে দোকানে থাকা ওষুধের কার্টুন দিয়ে ঢেকে রাখেন। পরে খণ্ডিত মরদেহ পাশের একটি মা ছের খামারে ফেলে দেওয়ার পরিকল্পনা করেন তারা। কিন্তু ভোর হয়ে যাওয়ায় এবং লোকজন চলে আসায় সেটি তারা করতে পারেননি।

Share.
Leave A Reply

মোঃ আব্দুল আওাল হিমেল
প্রকাশক ও সম্পাদক 
দ্যা মেইল বিডি ডট কম
মোবাইল: +৮৮০ ১৩১৪-৫২৪৭৪৯
ইমেইল: themailbdnews@gmail.com
ঠিকানা: ১০২/ক, রোড নং-০৪, পিসি কালচার হাউজিং সোসাইটি, শ্যামলী, ঢাকা-১২০৭

নিউজরুম: +৮৮০ ১৩১৪-৫২৪৭৪৯
জরুরী প্রয়োজন অথবা টেকনিক্যাল সমস্যা: +৮৮০ ১৮৩৩-৩৭৫১৩৩

© 2024 Themailbd.com. Designed and developed by Saizul Amin.
Exit mobile version