আরিফ শেখ, রংপুর প্রতিনিধিঃ রংপুরের তারাগঞ্জে অবৈধভাবে গড়ে উঠা ইটভাটাগুলো নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে শিশুদের দিয়ে ইট তৈরি কাজ করানো হচ্ছে। স্বল্প মজুরিতে পাওয়া যায় বলে কদর বেড়েছে ৬-১২ বছরের শিশুগুলোর। কৃষি জমিতে গড়ে উঠা ইটভাটাগুলোতে কয়লার পরিবর্তে পোড়ানো হচ্ছে কাট। গত তিন দিন ধরে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের অদূরে কৃষি জমিতে গড়ে উঠা টিবিএল ইটভাটা। চারিদিকে সবুজ ফসলের মাঠ। সেখানে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে একদল শিশু ইট উল্টানোর কাজ করছেন। তাদের বয়স ৭-১২ বছরের মধ্যে। ওই ভাটায় কথা হয় ৬ বছরের শিশু আরাফাত। ঠিক মতো কথাই বলতে পারেন না। ভাঙা কণ্ঠে আরাফাত বলে, ‘মুই ভাটাত ইট উল্টার কাম করোং। সারাদিন ইট উল্টাইলে ১০০ টাকা দেয়। ভাটাত ইট উল্টাইলে টাকা দেয়, ওই তকনে স্কুল যাবার পাও না।’ শুধু আরাফাতই নয় ওই ভাটায় ইট উল্টানোর কাজ করা আরেক শিশু আনিছ (১২) বলে, ‘মুই একলায় নোয়াও। মোর মতোর মতোন মেলা ছাওয়া এটে কাজ করি। স্কুল বন্ধ, ইট ভাটার লোকজন বাড়ি থাকি ইট উল্টার ডাকে আনে। ১০০ করি টাকা দেয়। ওই জন্যে হামরা এটে কামোত আলচি।’ শিশু শ্রম আইন অনুযায়ী ১৬-১৮ বছর নিচে কোনো প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে পারবেন না। কিন্তু তারাগঞ্জ উপজেলার এসব ভাটায় তা মানা হচ্ছে না। কোমলমতি শিশুরা এসব ভাটার কাজ করতে গিয়ে পড়ছেন স্বাস্থ্য ঝুঁকিতেও। শিশুদের নিয়ে কাজ করার বিষয়ে জানতে চাইলে টিবিএল ইটভাটার মালিক আহসান হাবিব খান (সাবু) অস্বীকার করে বলেন, আমার ইটভাটা কোনো শিশু কাজ করে না। আপনার ভুল হচ্ছে কোথায়। হয়তো শিশুরা খেলতে ভাটা এসেছিল তাই আপনি দেখেছেন। ইটভাটায় শিশুদের কাজ করার ভিডিও ফুটেজ দেখাতে চাইলে তিনি মুঠোফোন কেটে দেন। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নীল রতন দেব জানান, ছোট শিশুরা এধরনে কাজ করলে হাড় ক্ষয়সহ ফুসফুসের সমস্যা হতে পারে। এমন অসহনীয় কাজ করলে তারা স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। মানুষিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসেল মিয়া বলেন, দেশে শিশু শ্রম নিষিদ্ধ। নতুন এসেছি। শিশুদের দিয়ে ইটভাটায় কাজ করোনো হচ্ছে এমন অভিযোগ কেউ করেনি। আপনার মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারলাম। খুব দ্রুত ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।