এম এইচ রনি, নীলফামারী জেলা প্রতিনিধি:
দীর্ঘ ৩৯ বছর শিক্ষকতা পার করে অবসরে গেলেন নীলফামারী সদরের খামাত পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রবীণ প্রধান শিক্ষক সহিদুল ইসলাম।
তিনি ২০১৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর অত্র বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। জানা গেছে ১৯৮২ সাল থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত দুহুলী আলীম মাদ্রাসায় মহান শিক্ষকতা পেশায় সর্বপ্রথম প্রবেশ করেন তিনি।
পরে ১৯৮৭ সালের ১১ অক্টোবর তিনি নীলফামারী সদরের দূহুলী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেন এবং শিক্ষকতা করেন।
১৯৯৪ সালে তিনি দুহুলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে দক্ষিণ রামনগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলী হন এবং ১৯৯৭ সালে দক্ষিণ রামনগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বিশমুরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলী হন।দীর্ঘ সময় শিক্ষকতা করেন অত্র বিদ্যালয়ে।২০১০ সালে বিশমুড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বাহালি পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেন।এবং সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর প্রধান শিক্ষক পদে চলতি দায়িত্ত্ব নিয়ে রামনগর খামাত পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেন।তিনি একজন জনপ্রিয় শিক্ষক হিসেবে এলাকায় পরিচিতি লাভ করেন।
জানা যায় ১৯৭১ সালে পাক বাহিনীদের ফেলে যাওয়া গ্রেনেডের আঘাতে তার বাম হাতের কব্জি পর্যন্ত ছিঁড়ে যায়।তার পর ও তিনি হাটি হাটি পা পা করে সামনের দিকে এগিয়ে যায় তখন তিনি চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র ছিলেন।
শিক্ষকতায় তিনি ছিলেন শিক্ষার্থীদের কাছে একজন আদর্শের প্রতীক। কেননা নিজেকে একজন দক্ষ শিক্ষক হিসেবে স্কুলের উন্নয়নে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণে একাগ্রচিত্তে সকল প্রকার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিচালনা ও উপস্থাপনা, দিক-নির্দেশনা এবং দেশের জাতীয় দিবসগুলো পালনে অগ্রণী ভূমিকা,দৈনিক সমাবেশ পরিচালনা,পরিবেশ রক্ষার কর্মকাণ্ড সম্পন্ন করতে পারদর্শীতার পরিচয় দিয়েছেন। যে কোনো অনুষ্ঠান পরিচালনা ও উপস্থাপনায় স্কুলে তিনি ছিলেন অতুলনীয় ।
শ্রেণিকক্ষে ইংরেজি ও গণিতে তিনি ছিলেন একজন দক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে শিক্ষার্থীদের আস্তা ও জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।
বিদ্যালয়টিকে সাজাতে ও শিক্ষার্থীদের কিছু দেবার চেষ্টার কমতি ছিলো না তাঁর। তিনি একজন ধূমপানের মত ব্যাডহেভিটমুক্ত ব্যক্তিত্ববান আদর্শ শিক্ষক ছিলেন।
তাঁর সতীর্থরা সরকারি-বেসরকারি দপ্তরে, পুলিশ,বুয়েট ইঞ্জিনিয়ার,ডাক্তার, সেনাবাহিনী ও ব্যাংক বীমার অফিসার, প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী এবং স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার শিক্ষকসহ অনেকেই বড় মাপের অনেক ভালো অবস্থানেই আছে।
যা মাঝে মধ্যে আত্মতৃপ্তি প্রকাশ করার মত বিষয় । সবচেয়ে ভালো অনুভূতি হলো এ পেশার বিভিন্ন প্রশিক্ষণে অনেক বড়মাপের মানুষের সংস্পর্শে আসার সুযোগ হয়েছে তাঁর । তিনি স্কুলের পাশেই পরিবার-পরিজন নিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করার সুযোগে স্কুলের সকল প্রকার অর্পিত দায়-দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে তিনি অত্যন্ত নিষ্ঠার পরিচয় দিতে পেরেছেন।
তিনি ২০০২ সাল থেকে ধারাবাহিক ভাবে রাজশাহী বিভাগে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার এ গ্রেডের ইংরেজি পরীক্ষক ছিলেন এবং সমাপনী পরীক্ষায় নীলফামারী সদরের ইংরেজি পরীক্ষক ছিলেন।
তার হাত ধরে নীলফামারীর চাঁদের হাট এ চাঁদনী সংঘ নামে একটি সেচ্ছাসেবী সংঘ প্রতিষ্ঠা হয়। এবং তিনি চাঁদের হাট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও চাঁদের হাট ডিগ্রী কলেজ প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।বর্তমানে তিনি চাঁদের হাটের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সহ্ সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
সহিদুল ইসলাম ১৯৬৩ সালের ১১ জানুয়ারি নীলফামারী সদর উপজেলার রামনগর ইউনিয়নের চাঁদের হাট এলাকায় এক সম্ভান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তারঁ বাবার নাম মৃত ইয়াকুব আলী মাতা মৃত্যু হালিমা খাতুন। বাবা ছিলেন একজন আদর্শ কৃষক। মা হালিমা খাতুন ছিলেন একজন গৃহিণী। ছোটবেলায় মা-বাবার নিকট মক্তবেই তিনি আদর্শ শিক্ষা নেন।
১৯৭৮ সালের দূহুলি দিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে এসএসসি পাস ও ১৯৮০ সালে নীলফামারী সরকারী কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ১৯৮৫ সালে নীলফামারী সরকারি কলেজে স্নাতক পাশ করেন। গরীব পরিবারের সন্তান হওয়ায় জীবনে অনেক ঘাত-প্রতিঘাত,দু:খ-দুর্দশা,আনন্দ-বেদনা,হাসি আর কান্নার মধ্যে তাঁর শিক্ষাজীবন পার করতে হয়েছে।
তিনি নীলফামারী সরকারি কলেজে অধ্যয়নকালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এর সক্রিয় সদস্য ছিলেন।
বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির আন্দোলন-সংগ্রামে শিক্ষকদের দাবি আদায়ে একজন সৈনিক হিসাবে সম্পৃক্ত ছিলেন এবং শিক্ষক সংগঠনগুলোর সকলকাজে নিজকে সম্পৃক্ত রাখেন ।
সহিদুল ইসলাম ৫’সন্তানের সৌভাগ্যশীল বাবা। তিনি ১৯৮৯ সালে বিয়ে করেন । তাঁর সহধর্মিণী একজন গৃহিণী।সহিদুল ইসলাম ৩৯ বছরের এ পার্থিব শিক্ষকতায় অনেক ঘাত-প্রতিঘাত, দু:খ-দুর্দশা, আনন্দ-বেদনা, হাসি-কান্নার মত অনেক স্মৃতিবিজড়িত প্রেক্ষাপট ও অভিজ্ঞতার প্রান্তে মহান এ পেশার সফল সমাপ্তি টেনেছেন ১০ জানুয়ারি ২০২২ সালে । জীবন সায়াহ্নের এ বিকেলে সুস্থতা ও দীর্ঘায়ুর জন্যে তাঁর ফেইজবুক স্ট্যাটাসে তিনি দোয়া প্রার্থনা করলে কয়েক শ’ শিক্ষার্থী তাঁর সফল ও কৃতিত্বপূর্ণ মহান শিক্ষকের ভূঁয়শী প্রশংসা করে তাদের মতামত জানান ।