দ্যা মেইল বিডি / খবর সবসময়

; ;

দ্যা মেইল বিডি ডট কম

তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধিত অনলাইন পত্রিকা, নিবন্ধন নং- ১১

ঢাকার একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের একজন সেলেব্রেটি সংবাদপাঠিকার গল্প এটি। একদিন তার অফিসে এক ব্যক্তি এসে হাজির হয়ে দাবি করেন, ওই সংবাদপাঠিকা তার ‘প্রেমিকা’ এবং তাদের বাগদানও হয়ে গেছে। ফেসবুকে তাদের প্রেম হয়েছে। ওই ব্যক্তি “জোর করে অফিসে ঢুকতে চেষ্টা চালাচ্ছিলেন। অফিসে হুলস্থুল পড়ে গেল, কিন্তু আমি তো তাকে চিনি না”, বিবিসিকে বলছিলেন ওই সংবাপাঠিকা।
একেবারে আকাশ থেকে পড়ার মত ঘটনা। এই ব্যক্তিকে চেনারতো প্রশ্নই আসে না, তার নামও তিনি কোনদিন শোনেননি। ভারী বিব্রতকর অবস্থা! পরে জানা গেল, তার নাম ও ছবি ব্যবহার করে ফেসবুকে ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে ওই ব্যক্তির সাথে প্রেম করেছে অন্য কেউ। অনেক চেষ্টার পর ওই ব্যক্তিকে ফেরত পাঠানোর পর থানায় জিডি করা হয়। “কিন্তু অনেকেই সেদিন আমার কথা বিশ্বাস করেনি, তারা ভেবেছে আমি ও রকম খারাপ মানুষ। আমার যে মানসম্মান নষ্ট হল সেটা কে আর কিভাবে রিপেয়ার করে দেবে?” প্রশ্ন তোলেন সাবেক ওই সংবাদপাঠিকা।
সামিনা জাহান একটি বেসরকারি কলেজের শিক্ষক। এটি তার আসল নাম নয়। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি গানও করেন, বন্ধু-সহকর্মীদের কাছে সুনাম আছে তার। ২০১৯ সালে একদিন কলেজে বিভাগের একজন সহকর্মী সামিনার কাছে জানতে চাইলেন, তার স্বামীর চিকিৎসা কেমন চলছে। অত্যন্ত বিস্মিত সামিনা জানতে চাইলেন প্রশ্নের হেতু। বিবিসিকে তিনি বলছিলেন, “আমি ওই কথার কোন মাথামুণ্ডু বুঝতে পারছিলাম না। কারণ আমার স্বামী বহাল তবিয়তে আমাদের দুই ছেলেকে নিয়ে সপ্তাহে অন্তত তিনদিন ক্রিকেট খেলে এবং তিনি অত্যন্ত ফিট একজন মানুষ। তাছাড়া আমার স্বামীর যদি কোন চিকিৎসা লাগেও সেটা উনি (সহকর্মী) কিভাবে জানলেন!”
কিন্তু সামিনার বিস্ময়ের আরো বাকি ছিল। সহকর্মী তাকে জানালেন, সামিনার স্বামীর চিকিৎসার জন্য বিভাগের সব সহকর্মীরা মিলে ৭২ হাজার টাকা তাদের (সামিনা ও তার স্বামীর) বিকাশ অ্যাকাউন্টে পাঠিয়েছেন। সামিনার বিহ্বল মুখ দেখে এবার দুজনেই বুঝতে পারলেন যে কোন একটা বড় ঝামেলা হয়েছে। সামিনা বলছেন, “আমি তখন জানতে পারি আমার ফেসবুক আইডি ব্যবহার করে মেসেঞ্জারে একটি গ্রুপ খুলে আমার স্বামীর অসুস্থতার কথা উল্লেখ করে সহকর্মীদের কাছে অর্থ সাহায্য চাওয়া হয়। লোকলজ্জার কারণ দেখিয়ে বিষয়টি ‘নিজেদের মধ্যে রাখার’ আবেদনও করা হয় বলে কেউ আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করেনি।”
যখন সামিনাসহ সবাই বুঝতে পারলেন যে তারা প্রতারণার শিকার হয়েছিলেন, তখন তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারস্থ হন। মোবাইল মানি লেনদেন প্রতিষ্ঠান বিকাশেও অভিযোগ জানানো হয়। কয়েক মাস তদন্তের পর পুলিশ অ্যাকাউন্ট শনাক্ত করতে পেরেছিল, কিন্তু কোন অর্থ উদ্ধার করা যায়নি। “আমার মানও উদ্ধার করা যায়নি, কারণ মেসেঞ্জারে কাকে কী বার্তা পাঠানো হয়েছিল আর কে কে টাকা পাঠিয়েছিল আমি নিশ্চিত হতে পারিনি।” “যদিও স্ট্যাটাস দিয়ে সবাইকে জানিয়েছিলাম যে আমি প্রতারণার শিকার হয়েছি, আমার স্বামী সুস্থ আছেন এবং কারো কাছে আমি টাকা চাইনি। কিন্তু এখনো আমার মনের মধ্যে এক ধরণের কাঁটা বিধে আছে।”
বাংলাদেশে বিখ্যাত কিংবা সমাজে পরিচিত বা সুনাম রয়েছে, এমন মানুষদের নামে ফেসবুকে ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে নানা ধরণের প্রতারণার অভিযোগ শোনা যায়। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নাম, প্রোফাইল ফটো থাকে অবিকল একই। অ্যাকাউন্টে গেলে দেখা যায়, আসল ব্যক্তি যা পোষ্ট করছেন, নকল বা ছদ্মবেশী অ্যাকাউন্টেও একই পোষ্ট থাকে, বন্ধু তালিকাও থাকে প্রায় একই। ফেসবুক একে বলছে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ‘ইমপারসোনেটিং’ বা ছদ্মবেশী অ্যাকাউন্ট। অর্থাৎ এখানে কোন একজন ব্যক্তি বা কোন প্রতিষ্ঠান সেজে অন্যকে ধোঁকা দিচ্ছে বা প্রতারণা করছে কেউ।
ফলে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নাম করে যখন অন্য কারো সঙ্গে প্রতারণা করা হয়, অধিকাংশ সময় প্রতারণার শিকার ব্যক্তি বুঝতেও পারেন না আসলে কার দ্বারা প্রতারিত হলেন। পুলিশ বলছে, যৌন হয়রানি, অবৈধ আর্থিক লেনদেন ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হয় এসব ভুয়া অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে। অভিযোগ পেলে এসব প্রতারণা বন্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রযুক্তিগত সক্ষমতা রয়েছে বলে জানিয়ে পুলিশ বলছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অভিযোগ আসার আগেই বড় ধরণের ক্ষতির মুখে পড়েন মানুষ। পুলিশ বলছে, অনেক ক্ষেত্রে অভিযোগও জানাতে চান না ভুক্তভোগীরা।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগের উপ-কমিশনার এএফএম আল কিবরিয়া বিবিসিকে বলেছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এটি একটি বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। তিনি বলেছেন, ফেসবুকে একজনের ছদ্মবেশ ধারণ করে অ্যাকাউন্ট খুলে প্রতারণার প্রতি মাসে গড়ে ১০০টির মত এমন অভিযোগ আসে পুলিশের কাছে। এর মধ্যে ঢাকায় প্রতিদিন এ সংক্রান্ত চার থেকে পাঁচটি অভিযোগ আসে। এর মধ্যে আর্থিক প্রতারণা যেমন রয়েছে, তেমনি যৌন হয়রানি, অ্যাকাউন্টে পোষ্ট করা ছবি থেকে ভুয়া ছবি তৈরি করে ব্ল্যাকমেইল, এবং মানহানির মত অপরাধ তৎপরতা রয়েছে।
ইমপার্সনেশনের শিকার যেমন ব্যক্তি হন তেমনি প্রতিষ্ঠানও হয়। যেমন সম্প্রতি বহুজাতিক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ‘দারাজ’ এর নামে ফেসবুকে ছদ্মবেশী পেজ খুলে প্রতারণার অভিযোগ তদন্ত করে অপরাধীকে শনাক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মি. কিবরিয়া। অনেক সময় কোন প্রতিষ্ঠানের নামে পেজ খুলে চাকরি দেয়ার নাম করে বা এজেন্ট বানানোর নামে অর্থ হাতিয়ে নেয় অপরাধীরা।
২০১৯ সালের শুরুতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং তার পরিবারের সদস্যসহ সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের নামে ৩৬টি ভুয়া আইডি শনাক্ত করেছিল র্যাব। পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগ জানিয়েছে, বাংলাদেশে রাজনীতিবিদ, বিনোদন জগৎ – যেমন নাটক এবং সিনেমার জনপ্রিয় তারকা, ক্রিকেটার এমন অনেকের নামে ফেসবুক আইডি খুলে আর্থিক প্রতারণার একাধিক অভিযোগ নিয়ে পুলিশ তদন্ত করেছে। প্রতারণার শিকার তারকাদের মধ্যে নায়িকা মাহিয়া মাহি, পরীমণি, নায়ক শাকিব খান এবং ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মর্তুজাসহ উল্লেখযোগ্য অনেকে রয়েছেন।
পুলিশ বলছে, অভিযোগ পাবার পর কিছু ক্ষেত্রে অপরাধীকে শনাক্ত করা গেছে, কিন্তু কোন কোন ক্ষেত্রে ছদ্মবেশী অ্যাকাউন্টটি নিষ্ক্রিয় করা গেলেও ধরা যায়নি অপরাধীকে। পুলিশে সাইবার ক্রাইম উপ-কমিশনার এএফএম আল কিবরিয়া বলেছেন, এক্ষেত্রে আগে থেকে সতর্কতা গ্রহণ প্রায় অসম্ভব একটি ব্যাপার। এটি যার অ্যাকাউন্ট ইমপার্সনেট করা হয়েছে তিনিও যেমন বুঝতে পারেন না, তেমনি ইমপার্সনেটেড অ্যাকাউন্ট থেকে যাওয়া বার্তাও আসল ব্যক্তির অ্যাকাউন্ট থেকে এসেছে কি-না, সেটাও নিশ্চিত হওয়া কঠিন। “কারণ এ ধরণের অপরাধ হয় টার্গেটেড। অপরাধীরা কাকে টার্গেট করছে, সেটা কারো পক্ষেই হয়ত আগে থেকে বোঝা সম্ভব নয়,” বলেন মি. কিবরিয়া।
তবে তার পরামর্শ হচ্ছে, কিছুদিন পর পর নিজের নাম লিখে সার্চ দিয়ে পরীক্ষা করা উচিত একই নাম এবং ছবি দিয়ে আরো কোন প্রোফাইল ফেসবুকে আছে কি না। থাকলে সাথে সাথে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। আইনি ব্যবস্থার ক্ষেত্রে প্রথমেই থানায় একটি জিডি বা সাধারণ ডায়েরি করার পরামর্শ দেন মি. কিবরিয়া। পরবর্তী ধাপে মামলা দায়ের করতে হবে। এছাড়া বন্ধু-সহকর্মী-স্বজন যার কাছ থেকে কোন ছবি বা অর্থ চেয়ে বার্তা বা কোন হুমকি পেলে প্রথমে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করুন। তার কাছ থেকে জানার চেষ্টা করুন আপনার মনে জাগা প্রশ্নের জবাব।
ইমপার্সনেটেড অ্যাকাউন্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ফেসবুকের নিজস্ব ব্যবস্থা রয়েছে। এজন্য ফেসবুকের প্রোফাইল সেটিংসে গিয়ে হেল্প অ্যান্ড সাপোর্ট অপশনে যেতে হবে। সেখানে গিয়ে হেল্প সেন্টার ক্লিক করলে কয়েকটি অপশন আসবে, এর একটি হচ্ছে ‘পলিসিস অ্যান্ড রিপোটিং’। এই অপশনে ক্লিক করলে আসবে ‘হ্যাকড অ্যান্ড ফেইক অ্যাকাউন্ট’ বিভাগ। এখানে আসবে ইমপার্সনেশন অ্যাকাউন্টস, সেখানে বলা আছে কিভাবে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বা মেসেঞ্জার কোন ছদ্মবেশীর দখলে চলে গেলে কী করতে হবে।
ফেসবুক বলছে, ছদ্মবেশী নকল প্রোফাইলটি প্রথমে খুঁজে বের করতে হবে। এরপর সেখানে গিয়ে কাভার ফটোর ওপর তিনটি ডট চিহ্ন রয়েছে। তাতে ক্লিক করলে কোন পেজ বা প্রোফাইলকে রিপোর্ট করার নির্দেশনা ভেসে উঠবে। নির্দেশনা অনুযায়ী রিপোর্ট করলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেয়া হয়েছে ফেসবুকে। সূত্র: বিবিসি বাংলা।

Share.
Leave A Reply

মোঃ আব্দুল আওাল হিমেল
প্রকাশক ও সম্পাদক 
দ্যা মেইল বিডি ডট কম
মোবাইল: +৮৮০ ১৩১৪-৫২৪৭৪৯
ইমেইল: themailbdnews@gmail.com
ঠিকানা: ১০২/ক, রোড নং-০৪, পিসি কালচার হাউজিং সোসাইটি, শ্যামলী, ঢাকা-১২০৭

নিউজরুম: +৮৮০ ১৩১৪-৫২৪৭৪৯
জরুরী প্রয়োজন অথবা টেকনিক্যাল সমস্যা: +৮৮০ ১৮৩৩-৩৭৫১৩৩

© 2025 Themailbd.com. Designed and developed by Saizul Amin.
Exit mobile version