দ্যা মেইল বিডি / খবর সবসময়

; ;

দ্যা মেইল বিডি ডট কম

তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধিত অনলাইন পত্রিকা, নিবন্ধন নং- ১১

গত ১৫ আগস্ট রাজধানী কাবুল দখলের মাধ্যমে আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় তালেবান। এর মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ২০ বছর দেশটির ক্ষমতায় আসীন হয় বিদ্রোহী গোষ্ঠীটি।

কাবুল দখলের ১৫ দিনের মাথায় সোমবার আফগানিস্তানে চূড়ান্তভাবে শেষ হয় মার্কিন অধ্যায়। ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সময়সীমা থাকলেও স্থানীয় সময় ৩০ আগস্ট (সোমবার) বিকাল সাড়ে ৩টায় সব শেষ মার্কিন বিমান ছেড়ে যায় কাবুল বিমানবন্দর। ফলে নির্ধারিত সময়ের আগেই আফগানিস্তান অভিযানের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণা করল যুক্তরাষ্ট্র। এরমধ্য দিয়ে শেষ হয় দেশটিতে আমেরিকার দীর্ঘ ২০ বছরের সামরিক অভিযান।

সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের দোহাই দিয়ে ২০০১ সালের ৭ অক্টোবর আফগানিস্তানে হামলা শুরু করে আমেরিকা। হামলা শুরুর কয়েক ঘণ্টা পর পেন্টাগনে হাজির হন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ। সামরিক কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বললেন, “সামনের মাসগুলোতে ধৈর্য আমাদের শক্তিগুলোর মধ্যে একটি হবে— কঠোর নিরাপত্তার জন্য লাগবে দীর্ঘ অপেক্ষার সাথে ধৈর্য; আমাদের লক্ষ্য অর্জনের জন্য ধৈর্য ও বোঝাপড়া লাগবে; সব আত্মত্যাগের ধৈর্যের মাধ্যমে কাঙ্খিত ফল আসবে।”

 

প্রেসিডেন্ট জুনিয়র বুশের সেই ভাষণের পর ২০ বছর পেরিয়ে গেছে। গত দুই দশকে আমেরিকা ধৈর্য ধরেছে, ত্যাগও করেছে। তবে সেই কাঙ্ক্ষিত ফল আসেনি। শূন্য হাতেই তাদেরকে ছাড়তে হল আফগানিস্তানের মাটি।

হামলার তিন মাসের মাথায় তালেবান সরকারের পতন ঘটে। আফগানিস্তানের ক্ষমতায় বসে পশ্চিমা সমর্থিত হামিদ কারজাইয়ের সরকার। কাবুল কবজায় মহাখুশি বুশ জুনিয়র ২০০২ সালের এপ্রিলে ঘোষণা দিলেন আফগানিস্তান পুনর্গঠনের। সেরা বাসস্থান হিসেবে আফগানিস্তানকে গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করলেন তিনি। পরের বছর তিনি ঘোষণা করলেন তালেবানকে খতম করার যে মিশন ছিল তা অর্জিত হয়েছে। তবে বুশ জুনিয়রের সেই ঘোষণা যে পুরোপুরি মিথ্যা ছিল তা প্রমাণ করতে যেন কয়েক বছরের মাথায় আফগানিস্তানের প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে হামলা শুরু করে তালেবান।

তালেবানকে দমন করতে ২০১০ সাল নাগাদ আফগানিস্তানের মাটিতে ১ লাখ মার্কিন সেনা উপস্থিত। বছরের পর বছর মার্কিন সেনাদের হতাহতের ঘটনায় আমেরিকার নাগরিকদের মধ্যে যুদ্ধবিরোধী মনোভাব তৈরি হয়ে গেছে বলে বিভিন্ন জরিপে প্রকাশ পেতে শুরু করে। মার্কিন প্রশাসনও ততদিনে বুঝতে শুরু করেছে আফগানিস্তানে হয়তো তারা সুবিধা করতে পারবে না।

২০১১ সালে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ৩০ হাজার মার্কিন সেনা দেশে ফিরিয়ে আনার ঘোষণা দিলেন। দিন যতো গড়াচ্ছে আমেরিকার ক্ষতির বোঝা ততই বাড়ছে। ২০১৪ সালে এসে ওবামা সব সেনা প্রত্যাহারের পরিকল্পনা ঘোষণা করলেন। তবে যতো সহজে আফগানিস্তানে প্রবেশ করেছিল বের হওয়াটা ততোটা সহজ ছিল না যুক্তরাষ্ট্রের জন্য। আফগানিস্তানের রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হওয়ায় শেষ পর্যন্ত ওবামার পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি। তবে ওবামা আমলেও ধাপে ধাপে দেশে ফিরিয়ে নেওয়া হয় মার্কিন সেনাদের।

২০১৮ সালে এসে তালেবান তাদের পূর্ণ অস্তিত্ব জানান দিল। কাবুলে গোষ্ঠটির হামলায় নিহত হয় ১১৫ জন। তালেবানকে প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ তুলে দীর্ঘদিনের মিত্র পাকিস্তানের জন্য বরাদ্দ নিরাপত্তা সহায়তা বন্ধ করে দেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ওই বছরই মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের শর্তে দোহায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় বসে তালেবান। এরই মধ্যে কয়েক দফায় আফগানিস্তান থেকে বিপুল সংখ্যক মার্কিন সেনাকে ফিরিয়ে নেওয়া হয়।

২০২১ সালের মে মাসে নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সব মার্কিন সেনাকে দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দেন। জুনে প্রায় ৯০ শতাংশ সেনা যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যায়। ওই সময় থেকেই তালেবানরা আফগানিস্তানের বিভিন্ন প্রদেশে হামলা জোরদার করে। শেষ পর্যন্ত গত ১৫ আগস্ট তালেবানের হাতে পতন ঘটলো কাবুলের।

ব্রাউন ইউনিভার্সিটির যুদ্ধের ব্যয় প্রকল্পের হিসাব অনুযায়ী,  আফগান যুদ্ধে গত দুই দশকে যুক্তরাষ্ট্র দুই লাখ ২৬ হাজার কোটি ডলার খরচ করেছে। এর মধ্যে ৮০ হাজার কোটি ডলার খরচ হয় সরাসরি যুদ্ধখাতে, আট হাজার ৫০০ কোটি ডলার গেছে আফগান সেনাবাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিতে এবং এই বাহিনীর বেতনের জন্য বছরে গুনতে হয়েছে ৭৫ কোটি ডলার। তথাকথিত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়তে যুক্তরাষ্ট্রকে গড়ে প্রতিদিন ৩০ কোটি ডলার খরচ করতে হয়েছে।

এতো গেল প্রত্যক্ষ খরচের হিসাব। এবার আসি পরোক্ষ ব্যয়ের তালিকায়। ২০ বছরে আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের দুই হাজার ৪০০ সেনা নিহত হয়েছে। এছাড়া মার্কিন সেনাবাহিনীর প্রায় চার হাজার ঠিকাদার নিহত হয়েছে তালেবানদের হামলায়। যুদ্ধে আহত হয়েছে আরও ২০ হাজার সেনা। এই আহত সেনাদের চিকিৎসা ও অবসর ভাতা হিসেবে আগামী দিনগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রকে গুণতে হবে আরও ৩০ হাজার কোটি ডলার।

বিপুল সংখ্যক প্রাণহানি ও পাহাড় সমান অর্থ খরচের পর আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্র কী পেল? সম্ভবত, শুধুই সমালোচনা আর সমালোচনা!

দুই দশক আগে তালেবানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ। আর ২০২১ সালে সেই তালেবানের হাতেই ক্ষমতা দিয়ে আফগানিস্তান ছেড়ে গেলেন দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তাই বলা যায়, দীর্ঘ ২০ বছর ধরে আফগানিস্তান যুদ্ধের ফলাফল; তালেবান টু তালেবান।

Share.
Leave A Reply

মোঃ আব্দুল আওাল হিমেল
প্রকাশক ও সম্পাদক 
দ্যা মেইল বিডি ডট কম
মোবাইল: +৮৮০ ১৩১৪-৫২৪৭৪৯
ইমেইল: themailbdnews@gmail.com
ঠিকানা: ১০২/ক, রোড নং-০৪, পিসি কালচার হাউজিং সোসাইটি, শ্যামলী, ঢাকা-১২০৭

নিউজরুম: +৮৮০ ১৩১৪-৫২৪৭৪৯
জরুরী প্রয়োজন অথবা টেকনিক্যাল সমস্যা: +৮৮০ ১৮৩৩-৩৭৫১৩৩

© 2024 Themailbd.com. Designed and developed by Saizul Amin.
Exit mobile version