করোনার ‘সুনামি’ সামাল দিতে নাজেহাল ভারত। এর মাঝেই এক অমানবিক ঘটনার সাক্ষি রইল পশ্চিমবঙ্গের বোলপুর। করোনা আক্রান্ত স্বামীকে বাঁচাতে অক্সিজেনের খোঁজে শহরের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে ছুটে বেড়ালেন স্ত্রী। তিনিও কোভিড পজিটিভ। শেষে বাড়িতেই মৃত্যু হয় স্বামী দেবাশিস দত্তের।
মৃত্যুর পরও সৎকার নিয়েও চলল দীর্ঘ টানাপোড়েন। বাড়িতেই ৯ ঘণ্টা পড়ে থাকে মরদেহ। শেষে ৯ হাজার টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলে দেহ নিয়ে যেতে রাজি হন বোলপুর পুরসভার ডোমেরা। শনিবারের এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই রীতিমতো চাঞ্চল্য ছড়িয়েছেন বোলপুর শহরে। খবর সংবাদ প্রতিদিনের।
লকডাউনে ব্যবসা বন্ধ। অভাবের সংসারে সদস্য চারজন। কোনোরকমে দুবেলা দু’ মুঠো খেয়ে সংসার চলছিল। এর মধ্যেই অভিশাপের মতো দত্ত বাড়িতে থাবা বসায় করোনা। বোলপুরের নতুন পুকুরের বাসিন্দা স্বামী দেবাশিস দত্ত ও স্ত্রী আবীরা দেবী দুজনেই করোনায় আক্রান্ত হন। দুই ছেলে-মেয়ে করোনা আক্রান্ত কি না তা এখনও স্পষ্ট নয়। অভাবের সঙ্গে সঙ্গে করোনার বিরুদ্ধেও লড়াই শুরু হলো দত্ত পরিবারের।
শুক্রবার রাতে হঠাৎ করে শ্বাসকষ্ট শুরু হয় দেবাশিস দত্তের। শনিবার ভোর থেকে তা বাড়তে থাকে। প্রয়োজন ছিল অক্সিজেনের। শেষ সম্বল কিছু টাকা আঁচলে বেঁধে স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন করোনা আক্রান্ত স্ত্রী আবীরা দেবী। বোলপুরের সিয়ানে করোনা আক্রান্তদের জন্য নির্দিষ্ট হাসপাতালে গেলেও কর্তৃপক্ষ তাকে ভর্তি নিতে অস্বীকার করে বলে অভিযোগ। এরপর বাড়িতেই মৃত্যু হয় দেবাশিসের। তারপর শুরু হয় আরও এক লড়াই।
মরদেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য বোলপুর পুরসভার কয়েকজন ডোম ৯ হাজার টাকা দাবি করেন বলে অভিযোগ। সেই টাকা দেওয়ার ক্ষমতা ছিল না দত্ত পারিবারের। এরপর ঘটনাস্থলে আসেন ৮ নং ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিল ওমর শেখ। শেষপর্যন্ত দেবাশিসের এক আত্মীয় টাকা দিতে রাজি হলে বোলপুর পৌরসভা মরদেহ নিয়ে যেতে রাজি হয়। এখন আবীরা দত্তের আবেদন, তাকে যেন করোনা হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করে দেয় জেলা প্রশাসন। যাতে ছেলেমেয়ে বাঁচে।