দ্যা মেইল বিডি / খবর সবসময়

; ;

দ্যা মেইল বিডি ডট কম

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধিত অনলাইন পত্রিকা, নিবন্ধন নং- ১১

এপ্রিল মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের কথা। ঢাকার বাসিন্দা সৌরভ সাহার বাবা করোনাভাইরাসের আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ছিলেন।

রোগীর অবস্থা বিবেচনা করে চিকিৎসকরা তার শরীরে একটি ওষুধ প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নেন। সেই ওষুধের নাম একটেমরা। টসিলিজুমাব গ্রুপের একটি ইনজেকশন হচ্ছে ‌‘একটেমরা’। টানা তিনদিন এই ইনজেকশন জোগাড়ের জন্য শহরের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছেন সৌরভ সাহা।

শেষ পর্যন্ত এই ওষুধের আমদানিকারক ও পরিবেশক রেডিয়েন্ট থেকে এটি ক্রয় করতে সক্ষম হন তিনি। ‘এই ওষুধের জন্য সেখানে দীর্ঘলাইন। বহু মানুষ অপেক্ষা করছিল এটি কেনার জন্য। কিন্তু তাদের ওষুধ দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছিল। বিদেশ থেকে আসতে সময় লাগছিল,’ বলছিলেন সৌরভ।
এই ওষুধ তার বাবার শরীরে প্রয়োগের পর শরীর কিছুটা ইতিবাচক সাড়া দিয়েছিল। ফলে চিকিৎসকদের পরামর্শে দ্বিতীয় ডোজের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয় ডোজের ওষুধ সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি সৌরভ সাহার পক্ষে।

ইতোমধ্যে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে মৃত্যু হয় তার বাবার। সৌরভ বলেন, ‘ডাক্তাররা বলেছিলেন, যদি দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া যেত, তাহলে হয়তো ওনার সম্ভাবনা থাকত। কিন্তু সময়মতো সেটা তো আর সংগ্রহ করতে পারিনি।’

এই ওষুধের এত চাহিদা কেন?

টসিলিজুমাব ওষুধটি মূলত আর্থ্রাইটিস বা বাত রোগের ওষুধ। কিন্তু সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, টসিলিজুমাব ওষুধটি কোভিড-১৯ আক্রান্ত গুরুতর রোগীদের অনেকের ক্ষেত্রে জীবন রক্ষাকারী হিসেবে কাজ করছে।

করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর, এপ্রিল মাসের শুরু থেকে টসিলিজুমাব ওষুধের প্রচুর চাহিদা তৈরি হয়েছে বাংলাদেশে।

এই ওষুধের উৎপাদক সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বিশ্বখ্যাত রোশ কোম্পানি। বাংলাদেশে এই ওষুধ আমদানি করে রেডিয়েন্ট বিজনেস কনসোর্টিয়াম।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বাংলাদেশে প্রতি তিন থেকে চারদিন পরপর সুইজারল্যান্ড থেকে এই ওষুধ আসে। প্রতিবার ২০০-২৫০ ভায়েল ওষুধ আসে। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে তিনগুণ চাহিদা তৈরি হয়েছে বলে চিকিৎসক ও হাসপাতাল সূত্রগুলো বলছে।

কিন্তু বাংলাদেশে করোনা আক্রান্ত বিপুল সংখ্যক রোগীর সংকটাপন্ন অবস্থা তৈরি হবার কারণে বিপুল পরিমাণে ‌‘টসিলিজুমাব’ ওষুধের বিপুল চাহিদা তৈরি হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কোভিড-১৯ নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটের কনসালট্যান্ট সাজ্জাদ হোসেন বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হবার পরে অনেকের ফুসফুসের ভেতরে একটা বড় ধরনের ঝড় তৈরি হয়। সেটা ঠেকানোর জন্য এই ওষুধ প্রয়োগ করা হয়।

‘যাদের ফুসফুস ৬০ শতাংশের বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাদের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি বিবেচনা করে এই ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। এটা একটা সাপোর্টিভ ট্রিটমেন্ট। এটা দিলেই যে ভালো হয়ে যাবে তা নয়,’ বলেন ডা. সাজ্জাদ হোসেন।

‘আমাদের এখানে এবারে করোনাভাইরাসের যে ভ্যারাইটি হয়েছে সেখানে আক্রান্তদের মধ্যে অনেকের ফুসফুস চার থেকে পাঁচদিনে মধ্যে দুর্বল হয়ে যাচ্ছে।’

তিনি বলেন, এই ওষুধের কিছু গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরি হতে পারে। তবে সেটা সবার ক্ষেত্রে নয়। এটার পার্সেন্টেজ খুব কম। রোগীর অবস্থা পর্যালোচনা করে এই ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে।

রোশ বাংলাদেশের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, কোভিড-১৯ মহামারির সময় বিশ্বজুড়ে টসিলিজুমাব ওষুধটির চাহিদা বেড়েছে।

রোশ বাংলাদেশ জানিয়েছে, একটেমরা ওষুধটি কোভিড ১৯ রোগীদের চিকিৎসার জন্য প্রথম ব্যবহার করা হয় চীনে ২০২০ সালের মার্চ মাসে। এরপর আরও কিছু দেশ একই রকম পদ্ধতি অনুসরণ করে।

রোশ বাংলাদেশ বলছে, করোনা মহামারির কারণে বিশ্বজুড়ে একদিকে এই ওষুধের চাহিদা তৈরি হয়েছে অন্যদিকে উৎপাদন সীমাবদ্ধতার কারণে সরবরাহে সংকট তৈরি হয়েছে।

কারণ বায়োটেক ওষুধের উৎপাদন, বিতরণ ও রক্ষণাবেক্ষণ জটিল ও সময়সাপেক্ষ কাজ। সেজন্য এই ওষুধের সংকট তৈরি হয়েছে বলে জানায় রোশ বাংলাদেশ। তারপরেও এই সংকটের সময় ওষুধটির সর্বোচ্চ সরবরাহ নিশ্চিত করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে জানায় রোশ বাংলাদেশ।

ব্যয়বহুল ও কালোবাজারের বিপদ

সৌরভ সাহা বলেন, তারা বাবার জন্য একটেমরা ওষুধটি নির্ধারিত বিক্রয় কেন্দ্র থেকে ৬০০ গ্রামের একটি ভায়েল ক্রয় করেছিলেন ৬৫,০০০ টাকায়। কিন্তু এরপর তার বাবার জন্য দ্বিতীয় ভায়েল প্রয়োজন হলে নির্ধারিত বিক্রয় কেন্দ্রে সে ওষুধ আর পাওয়া যায়নি। এজন্য তিনি বিভিন্ন মানুষকে অনুরোধ করেছিলেন।

শেষ পর্যন্ত ফেসবুকে একটি গ্রুপে এই ওষুধ বিক্রির খবর জানতে পারেন। কোনো উপায় না পেয়ে তাদের সাথে যোগাযোগ করেন সৌরভ সাহা।

ফেসবুকভিত্তিক সে বিক্রেতারা জানান, ভারত থেকে তারা এই ওষুধ নিয়ে আসেন। ‘যেখানে আমি আগে ৬০০ গ্রাম কিনেছি ৬৫,০০০ টাকায় কিন্তু তারা আমার কাছে ৪০০ গ্রামের দাম চেয়েছিল দেড় লাখ টাকা,’ বলেন সৌরভ সাহা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আ.ব.ম. ফারুক বলেন, হাসপাতাল কিংবা অনুমোদিত বিক্রয়কেন্দ্র থেকে এই ওষুধ না কিনলে যথেষ্ট বিপদ হতে পারে।

কারণ, বায়োটেক প্রযুক্তির ওষুধ হবার কারণে ‘একটেমরা’ ওষুধ সংরক্ষণ করতে হয় মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায়। এই তাপমাত্রা বজায় না থাকলে ওষুধটি কার্যকরী হবে না বলে বলে উল্লেখ করেন অধ্যাপক ফারুক।

‘তাপমাত্রা একটু এদিক-সেদিক সেদিক হলে ওষুধটি কার্যকরী হবে না। উল্টো রোগীর জন্য বিপদ হতে পারে। তখন হয়তো চিকিৎসকরা ভাবতে পারেন, এতো ভালো একটা ওষুধ দেবার পরেও কাজ হলো না কেন,’ বলেন অধ্যাপক ফারুক।

Share.
Leave A Reply

মোঃ আব্দুল আওয়াল হিমেল
প্রকাশক ও সম্পাদক 
দ্যা মেইল বিডি ডট কম
মোবাইল: +৮৮০ ১৩১৪-৫২৪৭৪৯
ইমেইল: themailbdnews@gmail.com
ঠিকানা: ১০২/ক, রোড নং-০৪, পিসি কালচার হাউজিং সোসাইটি, শ্যামলী, ঢাকা-১২০৭

নিউজরুম: +৮৮০ ১৩১৪-৫২৪৭৪৯
জরুরী প্রয়োজন অথবা টেকনিক্যাল সমস্যা: +৮৮০ ১৮৩৩-৩৭৫১৩৩

© 2025 Themailbd.com. Designed and developed by Saizul Amin.
Exit mobile version