আরিফ শেখ, রংপুর প্রতিনিধিঃ রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য পরিদর্শক আব্দুস সালামের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়ম, ঘুস গ্রহন, হয়রানি ও নারী কর্মীদের সঙ্গে অশ্লীল আচরণের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স অফিস সূএে জানা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কাছে গত ২৪ /০৮/২০২১ ইং একজন ভুক্তভুগী নারী স্বাস্থ্য কর্মী লিখিত অভিযোগ জানান। অভিযোগে ওই নারী স্বাস্থ্য কর্মী জানান, ৫ দিনের এমএইচভি ট্রেইনিং শেষ করে কর্মস্থলে যোগদান করার সময় স্বাস্থ্য পরিদর্শক আব্দুস সালাম মুঠোফোনে ওই নারীকে হাসপাতালে ডেকে নেন। সালাম ওই নারীকে ন্যাশনাল সার্ভিসে চাকুরী করার অভিযোগ দেন। ভুক্তভোগী ওই নারী ন্যাশনাল সার্ভিসের চাকুরি ছেড়ে দেয়ার ইচ্ছে পোষন করেন। কিন্তু আব্দুস সালাম তার কাছে এক সপ্তাহের মধ্যে ২০ হাজার টাকা ঘুস দাবি করেন। এরপর তিনি এও জানান যে টাকা দিলে তিনি ন্যাশনাল সার্ভিসেও চাকুরী করতে পারবে আর এতে কোন সমস্যা হবে না।
পরের দিন একই ভাবে ওই নারী এমএইচভি কর্মীকে আবারো মুঠোফোনে ডেকে নেন। হাসপাতালের পূর্ব দিকে তার অফিস হওয়ায় সেদিকে তেমন ভীড় থেকেনা। এরই সুযোগে ওই নারী এমএইচভিকে স্বাস্থ্য পরিদর্শক আব্দুস সালাম নিজ অফিস কক্ষে ডেকে নিয়ে বলেন, ”তোমাকে টাকা দিতে হবেনা আমার কথা শুনলে ও আমার কথা মত চললে”। এরপর নানা রকম যৌন হয়রানিমূলক বক্তব্য দেন । কথা বলতে বলতে এক সময় ঐ নারীর গায়ে হাত দেয়ার চেষ্টা করলে ওই নারী ভয়ে ও লজ্জায় নিজের সম্মান নিয়ে কোন রকম পালিয়ে যান সেখান থেকে। লোক লজ্জা ও স্বামীর সংসারের অবনতির ভয়ে কাউকে এত দিন কিছু বলিনি।
অভিযোগ পত্রটিতে ওই নারী এমএইচভি আরও জানান, স্বাস্থ্য পরিদর্শক আব্দুস সালাম তার যৌন লিপ্সা মিটাতে না পেরে ক্রোধান্বিত হয়ে তাকে জোরপূর্বক ইচ্ছার বিরুদ্ধে এইচএমভির অব্যহতি পত্রে স্বাক্ষর করিয়ে নেন । যদিওবা ঐ সময় ন্যাশনাল সার্ভিসে কর্মরত অনেকেই বিনা বাঁধায় স্বাস্থ্য কর্মি হিসেবে চাকরি করছিল।
ভুক্তভোগী ওই নারীর সাথে কথা হলে তিনি জানান, “আমি ভয়ে আতংকে কাউকে কিছু বলি নাই। কিন্তু লোক মারফত জানতে পারলাম সালাম সাহেব এখনো গলাবাজি করে লোক ঠকিয়ে যাচ্ছেন। সিভিল সার্জন বরাবর আমাদের করুন কাহিনী তুলে ধরে সিএইচসিপি মাহমুদুর রহমান অভিযোগ করেন। সবাই সালামের গোমর ফাঁস করতেছে দেখেই আমি বর্তমান স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ সামসুন্নাহারের কাছে লিখিত অভিযোগ করি।
স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ সামসুন্নাহার বলেন , বিষয়টি অত্যান্ত গোপনীয় এবং ব্যক্তিগত তাই মিডিয়াকে কোন তথ্য দিতে পারছিনা বলে দুঃখিত।
উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, আব্দুস সালাম ৭ মার্চ ১৯৮৯ সাল থেকে তারাগঞ্জ স্বাস্থ্য কম্পেলেক্সে ৩২ বছর ধরে চাকুরি করার সুবিধার্থে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। হাসপাতাল এলাকা পুরোটায় তার নিয়ন্ত্রনে চলে। ধুরন্ধর আব্দুস সালামকে ১ ফেব্রয়ারী ২০০০ সালে তৎকালিন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাজেদুল ইসলাম সরকারী কর্মচারী শৃঙ্খলা ও আপিল বিধির আওতায় অভিযুক্ত করে কারন দর্শাতে বলেন। উক্ত বিজ্ঞপ্তির গ্রহনযোগ্য যুক্তি প্রদর্শন করতে না পারায় তাকে কর্তব্য ও কাজে অবহেলার কারনে তিরস্কার করা হয়। সেই তিরস্কার যেন তার গায়েই বিধেনি আজবধি।