কুষ্টিয়ায় সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মহসিন হাসানের সাথে দুর্ব্যবহারের ঘটনায় পুলিশ সুপার (এসপি) এসএম তানভীর আরাফাতকে সতর্ক করে এ সংক্রান্ত মামলাটি নিষ্পত্তি করেছেন হাইকোর্ট।
এ বিষয়ে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামান সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ বুধবার এই রায় দেন।
আদেশের বিষয়টি বাসস’কে নিশ্চিত করেন ডেপুটি এটর্নি জেনারেল অমিত দাস গুপ্ত। তিনি বলেন, এসএম তানভীর আরাফাতকে ভবিষ্যতে পেশাগত জীবনে এরূপ আচরণের ব্যাপারে সতর্ক করা হয় এবং তাকে ক্ষমা করে মামলাটি নিষ্পত্তি করেন আদালত।
আদালতে এসপি তানভীরের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মুন্সি মনিরুজ্জামান। অপর পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান।
অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান বলেন, দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে পুলিশ কর্মকর্তা তানভীর আরাফাতকে ভবিষ্যতে সতর্ক থাকতে বলেছেন আদালত।
গত ২৫ জানুয়ারি সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মহসিন হাসানের সাথে দুর্ব্যবহারের ঘটনায় হাইকোর্টে হাজির হয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে আবেদন করেন এসপি এস এম তানভীর আরাফাত। ওই দিন তাকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। পরে এ ঘটনার রেশ ধরে ফেব্রুয়ারি মাসে এস এম তানভীর আরাফাতকে এসপি পদ মর্যাদায় বরিশালে বদলি করা হয়।
আদালতে ক্ষমার আবেদনে এস এম তানভীর আরাফাত উল্লেখ করেন, তিনি ম্যাজিস্ট্রেটকে চিনতে পারেননি। তাই এমন অনিচ্ছাকৃত ভুল হয়েছে। ভবিষ্যতে তিনি দায়িত্ব পালনে আরো সতর্ক হবেন। এ ধরনের ভুল আর কখনো হবে না বলেও আবেদনে প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
গত ২০ জানুয়ারি কুষ্টিয়া ভেড়ামারা পৌরসভা নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকালে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মহসিন হাসানের সাথে দুর্ব্যবহারের ব্যাখ্যা দিতে কুষ্টিয়ার এসপি এস এম তানভীর আরাফাতকে তলব করেন হাইকোর্ট। একইসাথে আদালত অবমাননার দায়ে তার বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না-এই মর্মে ব্যাখ্যাও চান আদালত।
এ বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনলে তা আমলে নিয়ে গত ২০ জানুয়ারি ওই আদেশ দেন হাইকোর্ট।
গত ১৯ জানুয়ারি ভেড়ামারা পৌরসভা নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকালে কুষ্টিয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মহসিন হাসানের সাথে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এস এম তানভীর আরাফাতের দুর্ব্যবহারের বিষয়টি অভিযোগ হিসেবে সুপ্রিমকোর্টে আসে। ওই ম্যাজিস্ট্রেট নিজেই এ অভিযোগ করেন। এসপি তানভীর আরাফাতের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা একটি আবেদনের কপি সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়ে পাঠানো হয়।
আবেদনে কুষ্টিয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মহসিন হাসান বলেছেন, কুষ্টিয়া ভেড়ামারা পৌরসভা নির্বাচনে ১৪ জানুয়ারি থেকে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রথম শ্রেণির জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন তিনি। এরপর ১৬ জানুয়ারি তার দায়িত্ব পালন অবস্থায় সকাল ১০টায় ভেড়ামারা পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে অবস্থানকালে এক ভোটারের অভিযোগের ভিত্তিতে ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করেন। সেখানে তার দায়িত্ব পালনকালে তার সাথে ঘটে যাওয়া আচরণ ও ঘটনার বৃত্তান্ত তুলে ধরেন আবেদনে।
জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আবেদনে আরো বলা হয়, পুলিশ সুপার ও তার ফোর্সের আচরণ স্থানীয় সরকার নির্বাচন বিধিমালা ২০১০ এর ৬৯, ৭০, ৭৪, ৮০ ও ৮১ বিধির সরাসরি লঙ্ঘন। সূত্র: বাসস