চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (চাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠানের এক মাস পার হলেও এখনো অফিস কক্ষ বুঝে পাননি বলে জানিয়েছেন নির্বাচিত ছাত্র প্রতিনিধিরা। ফলে তারা দায়িত্ব বুঝে পেলেও ঠিকঠাক কার্যক্রম চালাতে পারছেন না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এটি প্রশাসনের গাফিলতি বলেও অভিযোগ তুলছেন ছাত্রনেতারা। তবে চাকসু পরিচালকের দাবি, তাদের কক্ষ বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আসবাব পছন্দ না হওয়ায়, নতুন কিনে সেগুলো দিয়ে গুছিয়ে উঠতে চান তারা।
চাকসুর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ছাত্র সংসদের মেয়াদ এক বছর। নির্বাচনের পর ২৩ অক্টোবর শপথ গ্রহণের মাধ্যমে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন নির্বাচিত প্রতিনিধিরা। এরও এক মাস হতে চললেও অফিস কক্ষ বুঝে পাননি তারা।
চাকসুর ভিপি ইব্রাহিম হোসেন রনি কালবেলাকে বলেন, ‘আমরা এখনো চাকসুর অফিস বুঝে পাইনি। যখন যেখানে বসি, সেখানেই কাজ করি।’
এজিএস আইয়ুবর রহমান তৌফিক কালবেলাকে বলেন, ‘কক্ষ বুঝে না পাওয়ায় চাকসুতে বসতে পারছি না। শিক্ষার্থীরা চাকসুতে এসে ফিরে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিশাল অঙ্কের টাকা খরচ করে নির্বাচন করল, অথচ এক মাস পরও কক্ষ বুঝিয়ে দিতে পারল না, এটা হতাশাজনক! প্রশাসনের উচিত ছিল নির্বাচনের আগেই চাকসু ভবন সংস্কার করে রাখা।’
সাহিত্য, সংস্কৃতি ও প্রকাশনা সম্পাদক হারেজুল ইসলাম বলেন, আমরা অফিস বুঝিয়ে নিতে দফায় দফায় চাকসুর সভাপতি, কোষাধ্যক্ষ ও পরিচালকের সঙ্গে কথা বলেছি। উনাদের উচিত ছিল নির্বাচনের আগেই সব প্রস্তুত করে রাখা।
তবে চাকসুর পরিচালক অধ্যাপক জাহেদুর রহমান বললেন ভিন্ন কথা। তিনি কালবেলাকে বলেন, তারা (চাকসু প্রতিনিধিরা) অফিস কক্ষ বুঝে পেয়েছেন। অফিসে যে ফার্নিচার আছে, সেগুলো তাদের পছন্দ হয়নি। তাই তারা উপাচার্যকে বলেছেন। উপাচার্য নতুন ফার্নিচার কেনার জন্য টাকাও দিয়েছেন। যতটুকু জানি, বৃহস্পতিবার তারা ফার্নিচার কিনতে গিয়েছেন। ফার্নিচার নিয়ে এলে তারা অফিসে বসবেন। আমাদের কাছে এখন আর কিছু নেই।
তবে এর প্রত্যুত্তরে চাকসু নেতারা জানিয়েছেন, গতকাল পর্যন্ত অফিস কক্ষে প্রয়োজনী আসবাব নেই। আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বুঝিয়েও দেওয়া হয়নি।বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও চাকসুর সভাপতি অধ্যাপক ড. ইয়াহইয়া আখতার বর্তমানে চীন সফরে থাকায় সার্বিক বিষয়ে তার মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
অন্যদিকে ‘ধর্ষণ’ নিয়ে ফেসবুকে বিতর্কিত মন্তব্যে বিভিন্ন মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়ার ফলে ঝুলে আছে কার্যনির্বাহী সদস্য আকাশ দাসের শপথ গ্রহণ। এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের করা তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানা গেছে।এ বিষয়ে চাকসু নির্বাচিত সদস্য আকাশ দাস বলেন, ‘আমি শুনেছি, আমার বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্তাধীন আছে। প্রক্টর অফিস থেকে বলা হয়েছে আমাকে ডাকবে। এখনো ডাকেনি।’
সেদিন শপথ নিতে চেয়েছিলেন কি না—জানতে চাইলে আকাশ বলেন, ‘আমি চেয়েছি বিষয়টি একেবারে মীমাংসা হলে শপথ গ্রহণের দিকে যাব।’ জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. হোসেন শহীদ সরওয়ার্দী কালবেলাকে বলেন, ‘চাকসুর কার্যনির্বাহী সদস্য আকাশ দাসের বিরুদ্ধে আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছে। আমরা অভিযোগ হালকা করে না দেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলথ রেসিডেন্স অ্যান্ড ডিপ্লিনারি কমিটিতে পাঠিয়ে দিয়েছি। পরবর্তী সময়ে ডিপ্লিনারি কমিটি সম্প্রতি অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করতে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে। কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রশাসন পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে।’
তবে এখনো তদন্ত কমিটির বিষয়ে কোনো চিঠি পাননি বলে জানিয়েছেন কমিটির আহ্বায়ক ও শাহজালাল হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. ফুয়াদ হাসান। তিনি কালবেলাকে বলেন, ‘আমি এখনো কোনো চিঠি পাইনি। কমিটির কথা প্রথম শুনলাম।’


