গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি:
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় প্রান্তিক চরের শিক্ষার্থীরা যখন টিকে থাকার লড়াইয়ে দৃঢ় মনোবল দেখাচ্ছে, তখন তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে ইউরোপের তরুণ প্রজন্মও। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, নদীভাঙন ও জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় অভিজ্ঞতা ও কৌশল বিনিময়ের এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশের ফ্রেন্ডশিপ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ও ইউরোপের লুক্সেমবার্গের স্কুল শিক্ষার্থীরা। ৪ নভেম্বর, মঙ্গলবার গাইবান্ধার ফ্রেন্ডশিপ সেন্টারে আয়োজিত এক কর্মশালায় দুই দেশের শিক্ষার্থীরা শেয়ার করেন জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশ সংরক্ষণ ও টেকসই জীবনযাপনের নানা বাস্তব অভিজ্ঞতা। “কানেক্টেড স্কুল প্রকল্প”-এর অংশ হিসেবে আয়োজিত এ কর্মশালায় অংশ নেয় ফ্রেন্ডশিপ বিদ্যালয়ের নির্বাচিত শিক্ষার্থীরা এবং লুক্সেমবার্গের তিনটি বিদ্যালয়ের ৯ জন শিক্ষার্থী ও ৩ জন শিক্ষক।
ফ্রেন্ডশিপের শিক্ষা কর্মসূচির আওতায় যমুনা-ব্রহ্মপুত্রের দুর্গম চরে পরিচালিত ১৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ১,০০০ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। কর্মশালায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা হাতে-কলমে ঘুরে দেখেন সৌরবিদ্যুৎ চালিত কম্পিউটার ল্যাব, ভাসমান হাসপাতাল, নদীভাঙন প্রতিরোধে ওভাল আকৃতির বিশেষ গ্রাম (Plinth), সৌর গ্রাম (Solar Village) ও আইনী সেবা কেন্দ্র। ফ্রেন্ডশিপ শিক্ষা কর্মসূচির টিম লিডার নেওয়ামাত উল্লাহ জানান, “২০২১ সালে শুরু হওয়া ‘ইন্টার স্কুল কানেকটিভিটি প্রোগ্রাম’-এর মাধ্যমে প্রান্তিক শিক্ষার্থীদের বিশ্বজনীন জ্ঞান ও প্রযুক্তির সঙ্গে সংযুক্ত করা হচ্ছে।
এর ফলে শিক্ষার্থীরা কেবল পাঠ্যজ্ঞান নয়, জলবায়ু পরিবর্তন, নেতৃত্ব, এবং সমস্যা সমাধানমূলক দক্ষতা অর্জন করছে, যা ভবিষ্যতে তাদেরকে উচ্চশিক্ষা ও কর্মজীবনে এগিয়ে রাখবে।” লুক্সেমবার্গ ম্যানেজার এসমেরালডা চুপিন বলেন, “প্রতিবছর ইউরোপের বিভিন্ন স্কুল থেকে শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশের চরাঞ্চলে এসে এখানে মানুষের প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করার বাস্তব চিত্র দেখে। এটি শুধু শিক্ষার আদানপ্রদান নয়, বরং ভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে সহানুভূতি, মানবিকতা ও পরিবেশ সচেতনতা গড়ে তোলে।” কর্মশালায় আরও বক্তব্য রাখেন ফ্রেন্ডশিপ শিক্ষা কর্মসূচির সহকারী ব্যবস্থাপক অলিভ হোসেন, ফ্রেন্ডশিপ ফ্রান্সের কানেক্টেড স্কুল প্রকল্পের ম্যানেজার আনা রবিন ও চেসিয়া পিরভু।
এ আয়োজন সম্পর্কে স্থানীয় শিক্ষার্থীরা জানায়, ইউরোপের বন্ধুদের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে তারা জলবায়ু পরিবর্তনের বাস্তব প্রভাব আরও গভীরভাবে বুঝতে পারছে এবং নিজেদের এলাকায় টেকসই উদ্যোগ গ্রহণে অনুপ্রাণিত হচ্ছে। ফ্রেন্ডশিপের এই উদ্যোগ কেবল শিক্ষার সীমায় নয়, বরং জলবায়ু সচেতন একটি প্রজন্ম গড়ে তোলার পথপ্রদর্শক হয়ে উঠছে।


