নিজস্ব প্রতিবেদক: নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলায় মোজাফফরপুর ইউনিয়নে হারুলিয়া গ্রামে ঐতিহাসিক ‘রাজী’ নদী দখল ও নদী হত্যার অভিযোগে প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা হাজী লিটনের বিরুদ্ধে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
শনিবার (১১ অক্টোবর) সকাল ১১টায় ‘সচেতন গ্রামবাসী’ ব্যানারে আয়োজিত এ মানববন্ধনে প্রায় শতাধিক স্থানীয় মানুষ অংশগ্রহণ করেন। তারা ‘রাজী’ নদী দখল, নক্সা পরিবর্তন, সরকারি তহবিল আত্মসাৎসহ প্রশাসনের নীরব ভূমিকার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, ফরহাদ হোসেন, ইমরান হোসেন, আব্দুর রহমান রতন মিয়া প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, ‘রাজী’ নদী শুধু একটি জলাশয় নয়, এটি হারুলিয়ার ঐতিহ্যের প্রতীক। একে হত্যা করা মানে গ্রামের অস্তিত্ব ধ্বংস করা।
স্থানীয় মেম্বার হুমায়ুন কবির বলেন, এই ভুমি দস্যু লিটন হাজীর হাত থেকে রাজী নদী উদ্ধার করে জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া এখন সময়ের দাবী বলে জানান তিনি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হাজী লিটন দীর্ঘদিন ধরে সরকারি প্রভাব খাটিয়ে ‘রাজী’ নদীর পুরনো নক্সা পরিবর্তন করে সেটিকে ‘খাল’ হিসেবে দেখান। এরপর সেই নক্সা অনুযায়ী কোটি টাকা ব্যয়ে একটি ব্রিজ নির্মাণের প্রকল্প অনুমোদন হয়, যাতে তার প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ ছিল। কিন্তু বাস্তবে পুরনো নদীপথ ভরাট করে সেখানে রাস্তা নির্মাণ করা হয়, ফলে নদীটি সরকারি কাগজে কার্যত বিলুপ্ত হয়ে যায়।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, অযৌক্তিক টেন্ডারের মাধ্যমে প্রায় কোটি টাকার সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে, অথচ ব্রিজটি আজও অসম্পূর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে।
তারা আরও জানান, বিগত সরকারের আমলে কেউ এই অনিয়মের প্রতিবাদ করতে গেলে হাজী লিটনের অনুসারীরা তাদের ওপর হামলা চালাত, এমনকি মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করত। কয়েকজনকে রক্তাক্ত জখমও করা হয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।
বর্তমানে হাজী লিটন আবারও ‘রাজী’ নদীকে ‘ফিশারিজ প্রকল্প’ দেখিয়ে নিজের সম্পত্তি দাবি করছেন। নিজে না গিয়ে অন্য এলাকার লোকজনকে ব্যবহার করে জবর দখলের চেষ্টা চালাচ্ছেন এবং স্থানীয়দের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে সচেতন মহল ও স্থানীয় নাগরিক সমাজ প্রশ্ন তুলেছেন- একটি প্রাকৃতিক নদী কীভাবে বন্দোবস্তের আওতায় আসে? কেন্দুয়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিস কি করে নদীকে খাল হিসেবে দেখিয়ে এমন অনুমোদন দেয়? প্রশাসনের এমন ভূমিকা নিয়েও এলাকায় ব্যাপক ক্ষোভ ও উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।
লিখিত অভিযোগ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার হবে বলে জানান সহকারি কমিশনার (এসিল্যান্ড) নাইম উল ইসলাম চৌধুরী।
অবিলম্বে ‘রাজী’ নদী দখলমুক্ত করার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ, প্রকৃত নক্সা পুনঃস্থাপন ও দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান এলাকাবাসী।