দ্যা মেইল বিডি / খবর সবসময়

; ;

দ্যা মেইল বিডি ডট কম

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধিত অনলাইন পত্রিকা, নিবন্ধন নং- ১১

রুহুল আমিন,ডিমলা(নীলফামারী)

নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রক্সি শিক্ষকের মাধ্যমে পাঠদান চলছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিদ্যালয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকরা অনুপস্থিত থাকলেও নিয়মিতভাবে সরকারি বেতন ও ভাতা উত্তোলন করছেন। এতে করে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা মানসম্মত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

উপজেলার টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের দুর্গম চরাঞ্চলে তিস্তা নদীর তীর ঘেঁষে অবস্থিত চরখড়িবাড়ি মধ্য সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এটি প্রত্যন্ত এলাকায় হওয়ায় প্রশাসনের নজরদারি কম। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমানের যোগসাজশে সহকারী শিক্ষক প্রশান্ত কুমার রায় ও তাছিকুল আলম বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে অনুপস্থিত। তাদের পরিবর্তে স্থানীয় দুজনকে মাসিক তিনহাজার  টাকা করে ভাতার বিনিময়ে প্রক্সি শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

বিদ্যালয়ের নথি অনুযায়ী, এখানে মোট ৯৮ জন শিক্ষার্থী ও তিনজন শিক্ষক কর্মরত রয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে দেখা যায়, প্রধান শিক্ষক ছাড়া অন্য কোনো শিক্ষক উপস্থিত নাই। কয়েকটি শ্রেণিকক্ষে তালা ঝুলছিল, আর শিক্ষার্থীরা মাঠে খেলাধুলা করছিল। অন্য দুটি কক্ষে ক্লাস চলছিল। এ সময় আকবর আলী (৬০) ও সুমি আক্তার (২৫) নামে দুইজন স্থানীয়কে ক্লাস নিতে দেখা যায়। আকবর আলীকে লুঙ্গি পরা অবস্থায় তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের একই কক্ষে একই সঙ্গে পাঠদান করতে দেখা গেছে।

প্রক্সি শিক্ষক আকবর আলী জানান, “এখানে তিনজন শিক্ষক থাকলেও তারা দুইজন আসেন না। মাসে তিন হাজার টাকা করে ভাতা দিয়ে আমি ও সুমি আক্তার ক্লাস চালাই।”

স্থানীয় বাসিন্দা ও অভিভাবকরা এই অনিয়ম নিয়ে চরম ক্ষুব্ধ। আইজুল আলী নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “শিক্ষকরা মাসে এক-দুবার আসেন, শুধু হাজিরা খাতায় সই করতে। দুইজন ভাড়াটে শিক্ষক দিয়ে স্কুল চলছে। শিক্ষার্থীরা এখনো নিজের নাম পর্যন্ত লিখতে পারে না।”

অভিভাবক তছর আলী বলেন, “সরকারি শিক্ষকরা মাসে ৩০/৩৫ হাজার টাকার বেশি বেতন ও ভাতা নিচ্ছেন, অথচ মাত্র তিন হাজার টাকার প্রক্সি শিক্ষক দিয়ে পাঠদান চলছে। এটি শিক্ষার নামে চরম প্রতারণা।”

অভিযোগ রয়েছে, সহকারী শিক্ষক প্রশান্ত কুমার রায় ও তাছিকুল আলম দীর্ঘদিন ধরে এলাকার বাইরে বসবাস করছেন। তারা মাসে একবার এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর দিয়ে পুরো মাসের বেতন উত্তোলন করেন। স্থানীয়রা বলছেন, এই অনিয়ম ঢাকতে তারা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তাদের উপঢৌকন দিয়ে থাকেন।

প্রধান শিক্ষক (চলতি দায়িত্ব) হাবিবুর রহমান এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

ডিমলা উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফিরোজুল আলম বলেন, “বিষয়টি আমার জানা ছিল না। প্রক্সি শিক্ষক দিয়ে ক্লাস নেওয়ার কোনো নিয়ম নেই। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

নীলফামারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কুমারেশ চন্দ্র গাছি বলেন, “এমন অভিযোগ আগে জানতাম না। দ্রুত তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে।”

ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমরানুজ্জামান বলেন, “সরকারি বিদ্যালয়ে প্রক্সি শিক্ষকের মাধ্যমে ক্লাস চালানো গ্রহণযোগ্য নয়। অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

স্থানীয় সচেতন মহল এই অনিয়ম বন্ধে সরকারের কঠোর নজরদারি বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে। তাদের মতে, চরাঞ্চলের বিদ্যালয়গুলোতে নিয়মিত শিক্ষকরা দায়িত্বে অবহেলা করলে শিক্ষার মান তলানিতে নেমে যায়।

Share.
Leave A Reply

মোঃ আব্দুল আওয়াল হিমেল
প্রকাশক ও সম্পাদক 
দ্যা মেইল বিডি ডট কম
মোবাইল: +৮৮০ ১৩১৪-৫২৪৭৪৯
ইমেইল: themailbdnews@gmail.com
ঠিকানা: ১০২/ক, রোড নং-০৪, পিসি কালচার হাউজিং সোসাইটি, শ্যামলী, ঢাকা-১২০৭

নিউজরুম: +৮৮০ ১৩১৪-৫২৪৭৪৯
জরুরী প্রয়োজন অথবা টেকনিক্যাল সমস্যা: +৮৮০ ১৮৩৩-৩৭৫১৩৩

© 2025 Themailbd.com. Designed and developed by Saizul Amin.
Exit mobile version