দ্যা মেইল বিডি / খবর সবসময়

; ;

দ্যা মেইল বিডি ডট কম

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধিত অনলাইন পত্রিকা, নিবন্ধন নং- ১১

যেকোনো রাষ্ট্রে সুশাসন থাকা জরুরি। কিন্তু সবসময় তা থাকে না। তবে সুশাসন নিশ্চিত করার আন্তরিকতা রাষ্ট্রের থাকা আবশ্যক, যাতে সুশাসন ফিরে আসে। সুশাসনের অভাবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিঘ্নিত হয়। তখন রাষ্ট্রের শাসন ও শোষণের ফাঁকে কিছু মানুষ ভুক্তভোগী বা ভিকটিমে পরিণত হয়, নিগৃহীত হয়।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী জন লক রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার তত্ত্ব দিয়েছেন। তার মতে, ব্যক্তির মৌলিক অধিকার—জীবন, স্বাধীনতা ও সম্পত্তি—প্রাথমিকভাবে পরিবার দ্বারা সুরক্ষিত হয়। কিন্তু পরিবার ছাড়িয়ে ব্যক্তি যখন সমাজে প্রবেশ করেন, তখন তার নিরাপত্তার নতুন মাত্রা যুক্ত হয়।

এই নিরাপত্তা কে নিশ্চিত করে? পরিবার, সমাজ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং রাষ্ট্র। এদের মধ্যে কারও ভূমিকা দুর্বল হলে ভুক্তভোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে, যা রাষ্ট্রের জন্য অস্বস্তিদায়ক। রাষ্ট্রের প্রথম ও প্রধান কাজ হলো সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এই নিরাপত্তা যেমন সমাজের উচ্চবিত্তের জন্য জরুরি, তেমনি প্রান্তিক মানুষের জন্যও সমান জরুরি। নিরাপত্তা বিঘ্নিত হলে অপরাধ বাড়ে- হত্যা, ধর্ষণ, ছিনতাই, চুরি, লুটসহ নানা অপরাধ ক্রমেই বৃদ্ধি পায়।

এইসব অপরাধের মধ্যে সবচেয়ে জঘন্য হলো ধর্ষণ। এর কারণ, ভিকটিম নারীসহ তার পরিবার ও আত্মীয়স্বজন দীর্ঘ সময় ধরে অমানবিক পরিবেশ, জীবনযাপন ও মানসিক ট্রমার মধ্যে বাস করেন। যা একজন নারীসহ তার আশেপাশের সবার উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। এজন্য উন্নত বিশ্বে যৌনশিক্ষা পড়ানো হয়, যাতে শিশু-কিশোরেরা ছোটবেলা থেকেই সচেতন হয়ে ওঠে এবং বিপরীত লিঙ্গের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে শেখে।

কিন্তু শুধু শিক্ষা নয়, ভিকটিমের প্রতি রাষ্ট্র, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং গণমাধ্যমেরও গুরুত্বপূর্ণ দায়দায়িত্ব রয়েছে।

এই তিন ক্ষেত্রের দায়দায়িত্ব—একাডেমিক আলোচনায় কীভাবে সংজ্ঞায়িত হয়েছে এবং বাস্তবে কীভাবে প্রতিফলিত হয়, তা এখানে তুলনা করা হবে।

ভিকটিমের প্রতি রাষ্ট্র, আইনশৃঙ্খলা ও গণমাধ্যমের দায়দায়িত্ব: একাডেমিক আলোচনা

শুরুতেই রাষ্ট্র ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বের বিষয়টি দেখা যাক।

‘নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা-সংক্রান্ত আইন প্রণয়নে জাতিসংঘের দিকনির্দেশনা’য় বারবার উল্লেখ করেছে, ধর্ষণ-পরবর্তী প্রতিটি পদক্ষেপে ভিকটিমের নিরাপত্তা, গোপনীয়তা, মর্যাদা ও মানসিক অবস্থাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে।

এ ছাড়া রাষ্ট্র ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে:

১। ভিকটিমকে দ্রুততম সময়ে চিকিৎসা সহায়তা নিশ্চিত করা।

২। ধর্ষণের পর ভিকটিম যেন দ্রুত আইনি সহায়তা পান, তা নিশ্চিত করা।

৩। ভিকটিমের প্রতি সংবেদনশীল, সুশৃঙ্খল ও সহানুভূতিশীল আচরণ করা।

৪। ২৪/৭ মানসিক, শারীরিক ও আইনি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

৫। ভিকটিমের পরিবারের জন্য আইনি সহায়তা নিশ্চিত করা।

৬। ভিকটিমের গোপনীয়তা কঠোরভাবে রক্ষা করা।

৭। রাষ্ট্র এমন কোনো আচরণ করবে না, যা ভিকটিম বা তার পরিবারের মানসিক ক্ষতি বাড়িয়ে দেয়।

৮। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যেন কোনো ভুল শব্দচয়ন বা অশোভন ইঙ্গিত না করে, সে বিষয়ে কঠোরভাবে সতর্ক থাকতে হবে।

গণমাধ্যমের দায়দায়িত্ব : গণমাধ্যমকেও ভিকটিমের প্রতি দায়িত্বশীল হতে হবে। এমন কোনো আচরণ বা শব্দচয়ন তারা করবে না, যা ভিকটিমকে বিব্রত করে বা তার মানসিক আঘাত বাড়ায়।

ইউনেস্কোর প্রকাশনা ‘নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বিষয়ে সাংবাদিকতা’য় কিছু দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে:

১। সংবাদ প্রকাশের সময় যথাযথ ও সংবেদনশীল শব্দচয়ন করতে হবে, যাতে কোনোভাবেই ভিকটিমের মর্যাদা ক্ষুণ্ন না হয়।

২। চাঞ্চল্য তৈরি না করে সঠিক প্রেক্ষাপট উপস্থাপন করতে হবে।

৩। যৌন সহিংসতার ঘটনায় সংবাদ সংগ্রহে কোনো অবস্থাতেই গোপন ক্যামেরা বা রেকর্ডার ব্যবহার করা যাবে না।

৪। ভিকটিমকে দোষারোপ করে নীতি-উপদেশ দেওয়া যাবে না, যেমন, ‘রাতে বাইরে বের হওয়া উচিত হয়নি’ বা ‘পরকীয়ার কারণেই হয়েছে’ এসব।

৫। ভিকটিমকে দোষারোপ না করে সমাধানভিত্তিক সাংবাদিকতা চর্চা করতে হবে।

৬। প্রতিবেদন তৈরির সময় যথেষ্ট সময় নিতে হবে। অনলাইন প্রতিযোগিতার চাপ থাকলেও সম্পাদনা ও প্রকাশনার আগে সবদিক বিবেচনা করতে হবে।

একাডেমিক আলোচনার বাইরে গিয়ে যদি গণমাধ্যম দায়িত্বশীলতা হারায়, তবে ভিকটিমকে সামাজিক ও মানসিকভাবে নতুন করে ট্রমার মধ্যে যেতে হয়, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। তাই গণমাধ্যমের সর্বোচ্চ সচেতন থাকা জরুরি।

উপসংহার : জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক নির্দেশনা (যেমন, ‘শিশু ভুক্তভোগী ও অপরাধের  সাক্ষীদের বিষয়ে ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণে জাতিসংঘের নির্দেশিকা’) বলছে, ভিকটিমের নিরাপত্তা, মর্যাদা ও পুনর্বাসনই সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। তাই রাষ্ট্র, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গণমাধ্যমের সমন্বিত দায়িত্ব হলো ভিকটিমকে সুরক্ষিত রাখা।

এদের কেউ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে তার বোঝা বহন করতে হয় ভিকটিমকেই।

অতএব, প্রত্যেক রাষ্ট্রের উচিত ভিকটিমের সুরক্ষায় আইনগত, সামাজিক ও নৈতিক দায়িত্ব সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে পালন করা। তবেই ভিকটিম নিরাপদ থাকবেন।

Share.
Leave A Reply

মোঃ আব্দুল আওয়াল হিমেল
প্রকাশক ও সম্পাদক 
দ্যা মেইল বিডি ডট কম
মোবাইল: +৮৮০ ১৩১৪-৫২৪৭৪৯
ইমেইল: themailbdnews@gmail.com
ঠিকানা: ১০২/ক, রোড নং-০৪, পিসি কালচার হাউজিং সোসাইটি, শ্যামলী, ঢাকা-১২০৭

নিউজরুম: +৮৮০ ১৩১৪-৫২৪৭৪৯
জরুরী প্রয়োজন অথবা টেকনিক্যাল সমস্যা: +৮৮০ ১৮৩৩-৩৭৫১৩৩

© 2025 Themailbd.com. Designed and developed by Saizul Amin.
Exit mobile version