গোবিপ্রবি প্রতিনিধিঃ
জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবসের আলোচনা সভায় নিজের আপগ্রেডেশন ইচ্ছাকৃতভাবে আটকে রাখা হয়েছে উল্লেখ করে উপাচার্যের সমালোচনা করায় গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (গোবিপ্রবি) রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মো. আবু সালেহ-এর বক্তব্যের ব্যাখ্যা চেয়ে নোটিশ প্রদান করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
গত বুধবার (৬ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. এনামউজ্জামানের স্বাক্ষরিত এক নোটিশে তাঁর বক্তব্যের ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। নোটিশে বলা হয়,”আদিষ্ট হয়ে জানানো যাচ্ছে যে, গত ০৫/০৮/২০২৫ তারিখ অনুষ্ঠিত জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবসের আলোচনা সভায় অপ্রাসঙ্গিকভাবে আপগ্রেডেশনের বিষয় নিয়ে উপস্থাপিত বক্তব্যে আপনার আপগ্রেডেশন বোর্ড অনুষ্ঠানের বিষয়টি বর্তমান কর্তৃপক্ষ ইচ্ছাকৃতভাবে আটকে রেখেছে বলে সকলকে অবহিত করেছেন, যা কোনভাবেই সত্য নয়। সকল বাছাই বোর্ড আবেদনের তারিখের ক্রমানুসারে অনুষ্ঠিত হয়েছে, যা একটি চলমান প্রক্রিয়া। পদোন্নতি প্রার্থীদের সুবিধার্থে ২৬ জুন ২০২৫ তারিখ (বৃহস্পতিবার) পর্যন্ত বাছাই বোর্ড এবং ৩০ জুন ২০২৫ তারিখ (সোমবার) রিজেন্ট বোর্ডের ৪০তম সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতি সপ্তাহে ৪ থেকে ৬টি বাছাই বোর্ড সম্পন্ন করার পরও কিছু বোর্ডের সাক্ষাৎকার সম্পন্ন করা সম্ভবপর হয়নি। ৪০তম রিজেন্ট বোর্ডের আগে সর্বশেষ অনুষ্ঠিত বাছাই বোর্ড ২৫/০৬/২০২৫ তারিখ বেলা ৪:১৫ টায় অনুষ্ঠিত হয় এবং উক্ত বোর্ডের আবেদনপত্র জমাদানের তারিখ ছিল ২৪/০৪/২০২৫। যেখানে আপনার আবেদনের তারিখ ২৮/০৪/২০২৫। ৪০তম রিজেন্ট বোর্ডে উপস্থাপিত বোর্ডসমূহের মধ্যে আপনার আবেদনের তারিখের পরে আবেদন করেছেন—এমন কারো বোর্ড অনুষ্ঠিত হয়নি।”
নোটিশে আরও বলা হয়,”তাই এমন পরিস্থিতিতে আপনি একটি গুরুত্বপূর্ণ সভায় কেন ভুল তথ্য উপস্থাপন করে প্রশাসনের ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করলেন—এ ব্যাপারে অত্র পত্র প্রাপ্তির ০৫ (পাঁচ) কার্যদিবসের মধ্যে আপনাকে নিম্নস্বাক্ষরকারীর নিকট লিখিত ব্যাখ্যা প্রদান করার জন্য অনুরোধ করা হলো।”
এই বিষয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মো. আবু সালেহ বলেন,”আমি সুচিন্তিতভাবে এই বক্তব্যের ব্যাখ্যা দেব। জুলাই আন্দোলন যে বৈষম্যবিরোধী লক্ষ্য নিয়ে হয়েছিল, এক বছর পরে তা মূল্যায়নের প্রেক্ষিতে প্রাসঙ্গিকভাবে এই বক্তব্য আমি দিয়েছি, কারণ আবেদনের তিন মাসের বেশি সময় অতিবাহিত হয়েছে—আমার আপগ্রেডেশন বোর্ড অনুষ্ঠিত হয়নি। আমাদের আপগ্রেডেশন বোর্ডগুলো আবেদনের তারিখের ক্রম অনুযায়ী হয়েছে কিনা, সে বিষয় আপনারা অফিসে যাচাই করে দেখতে পারেন। আমার এই বক্তব্যের পরে উপাচার্য মহোদয় বলেছিলেন যে, আমি যেভাবে আমার মত প্রকাশ করেছি, সেটাই জুলাই বিপ্লবের ‘বিউটি’।”
এই বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর বলেন,”এটা একান্ত আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাপার। ওনাকে একটা নোটিশ দেওয়া হয়েছে ব্যক্তিগত আক্রোশ কিভাবে দেখানো হয়েছে—সেটার জবাব দেওয়ার জন্য। সেটার জবাব পাওয়ার পর আলোচনা করা যেতে পারে। এখন তো আপনার সাথে এটা নিয়ে আলোচনা করবো না, কারণ এটা একটা অফিসিয়াল বিষয়—সেটা কিভাবে আপনার কাছে গেলো? অ্যাড্রেস করা হয়েছে তাকে। বিশ্ববিদ্যালয় একটা সরকারি প্রতিষ্ঠান, সেখানের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে তো আলোচনা হতে পারে না। তাকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে, সে বলেছে যে আমাকে ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে প্রমোশন দেওয়া হয়নি। সেজন্য তাকে বলা হয়েছে—কিভাবে এটা হয়েছে সেটা আপনি জানান, আমাদেরকে লিখিত আকারে জানান। তাহলে আমরা বুঝতে পারবো যে ব্যক্তিগত আক্রোশ কোথায় হয়েছে আমাদের। তাহলে আমরা সংশোধন করবো, যদি হয়ে থাকে। আর যদি না হয়ে থাকে, তাহলে এটার একটা ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এটা তাকে অফিসিয়ালি জানানো হয়েছে। সেটাও পত্রপত্রিকায়, ফেসবুকসহ বিভিন্ন জায়গায় লেখালেখি হয়েছে। এটা কি একজন সরকারি কর্মকর্তা দিতে পারেন? তাকে একটা অফিস নোটিশ দেওয়া হয়েছে, সেটা দিয়ে ‘মব’ ক্রিয়েট করার লক্ষ্য এগুলো করা হয়েছে। এবং সে এখানকার বঙ্গবন্ধু পরিষদের জেনারেল সেক্রেটারি—দুইবার নির্বাচিত, সেটা যে প্রকাশ্যে বলেছে। তাকে আমরা কিভাবে হেয় করেছি, কিংবা কেন তার প্রমোশন আটকে আছে—সেটা দেখতে হবে। আমরা তো জানি না, আমরা তো সিরিয়াসলি সবকিছু করে যাচ্ছি। স্বাভাবিকভাবে চল্লিশটার মতো বোর্ড হয়েছে, কেউ এই প্রশ্ন তোলেনি, সে তুলেছে।”