শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি :
এক সময় হাসপাতালটির ভেতরে ও বাইরে ছিল নোংরা অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ, দালালদের উৎপাত, সেবার নিম্নমান। তবে বর্তমানে হাসপাতালের চিত্র বদলে গেছে। সর্বত্র লেগেছে পরিবর্তনের ছোঁয়া। বলছি গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কথা। ৫০ শয্যার এ হাসপাতালে চিকিৎসকসহ জনবল সংকট থাকা স্বত্বেও হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে সমন্বয় করে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ শফিকুল ইসলামের দক্ষ ব্যবস্থাপনায় অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়েও রোগীরা এখন আন্তরিকতাপূর্ণ সেবা পাচ্ছেন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, এখানে এখন রয়েছে এনসিডি কর্নার, যেখানে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও হাঁপানি রোগীদের জন্য বিশেষ সেবা চালু রয়েছে। শিশুদের জন্য রয়েছে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার এবং আইএমসিআই কর্নার। বহির্বিভাগে চালু হয়েছে দন্ত চিকিৎসা ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা। প্যাথলজি বিভাগে নতুন যন্ত্রপাতি সংযোজন, জরায়ুর মুখে ক্যান্সার পরীক্ষা ও চিকিৎসা, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা সিজারিয়ান অপারেশন পুনরায় চালু, ডে কেয়ার সেন্টার, নতুন অ্যাম্বুলেন্স ও সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেম – সব মিলিয়ে হাসপাতাল এখন অনেকটাই আধুনিক রূপ পেয়েছে। ডাঃ শফিকুল ইসলাম দায়িত্ব গ্রহণের পর নষ্ট যন্ত্রপাতি মেরামত করে সচল করেন, নতুন যন্ত্রপাতি সংযোজন করেন এবং সেবা ব্যবস্থায় গতি আনেন। নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে আলাদা পরিচ্ছন্নতা টিম গঠন করা হয়।
দালালমুক্ত পরিবেশ গঠনে তিনি কঠোর অবস্থান নেন। সকল শ্রেণি-পেশার স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়ে তিনি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।প্রতিদিন পাঁচ ছয়বার অফিস টাইম এ মাইকিং করা, দালাল থেকে রোগীদের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য। ভাংনাহাটি এলাকা থেকে আসা রোগী রহিমা জানান, “আগে হাসপাতালে এসে এক্স-রে করাতে পারতাম না। বাইরে গিয়ে বেশি খরচে করাতে হতো। এখন এই ডাক্তারের (নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত) আসার পর সরকারি হাসপাতালেই এক্স-রে করাতে পারছি কম খরচে। আগে থেকে এখন সেবার মান ভালো।”
একই অভিজ্ঞতা জানান মাওনা থেকে আসা পোশাক শ্রমিক। তিনি বলেন, “আগে শ্রীপুর হাসপাতালে আল্ট্রাসনোগ্রাফি করা যেতো না। কিন্তু এখন ডাঃ শফিকুল ইসলাম স্যার নিজেই সকল রোগীদের আল্ট্রাসনোগ্রাফি করে থাকেন। এতে আমাদের সময় ও খরচ—দুটোই কমছে।” রোগীদের এমন ইতিবাচক অভিমত চিকিৎসা সেবার ক্ষেত্রে সরকারি হাসপাতালের ভাবমূর্তি ও কার্যকারিতা বৃদ্ধি করছে বলে মত সংশ্লিষ্টদের। এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ শফিকুল ইসলাম বলেন, “সরকারি হাসপাতালের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনাই আমাদের মূল লক্ষ্য।
রোগীরা যাতে ঘুষ, হয়রানি বা দালালের খপ্পরে না পড়ে এবং যেন হাসপাতাল থেকেই সঠিক ও স্বল্প খরচে চিকিৎসা নিতে পারে, সেটি নিশ্চিত করতেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। রোগীর সেবা দিতে গিয়ে আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা থাকলেও, আন্তরিকতা দিয়ে সেটা পুষিয়ে নিচ্ছি। এই পরিবর্তন শুধু আমার একার নয়, হাসপাতালের প্রতিটি সদস্য দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছে, যার ফলস্বরূপ এই উন্নতি সম্ভব হয়েছে।”