নিজস্ব প্রতিবেদক: নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলায় নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে চলমান অবৈধ চাঁদাবাজি বন্ধে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে একটি বিশেষ অভিযান পরিচালিত হয়েছে। অভিযানে দুজন চাঁদাবাজসহ মোট তিনজনকে আটক করা হয়েছে। এসময় উদ্ধার করা হয় চাঁদাবাজির প্রমাণস্বরূপ বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ ও স্থিরচিত্র।
বৃহস্পতিবার (১২ জুন) মদন সেনা ক্যাম্প সূত্রে জানা যায়, গোপন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে কেন্দুয়ার নতুন বাসস্ট্যান্ড থেকে ঢাকাগামী প্রতিটি বাস থেকে নিয়মিতভাবে দুই হাজার টাকা করে চাঁদা আদায় করে আসছিল একটি সংঘবদ্ধ চক্র। এই চক্রে স্থানীয় কিছু নামধারী রাজনৈতিক নেতাকর্মীর সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে।
পর্যাপ্ত তথ্য প্রমাণ সংগ্রহের পর গত মঙ্গলবার (১০ জুন) রাতে মদন সেনা ক্যাম্পের ক্যাম্প কমান্ডার লেফটেন্যান্ট মো. শাহরিয়ার আহম্মেদের নেতৃত্বে ৬৩ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের একটি দল অভিযান পরিচালনা করে। সেনাবাহিনীর এ অভিযানে সহায়তা করেন পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা।
এ অভিযানে আটককৃত ব্যক্তিদের মধ্যে কেন্দুয়ার ছিলিমপুর গ্রামের মৃত আব্দুছ সালাম খানের ছেলে ও উপজেলা যুবদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আব্দুল আওয়াল খান (৬৫)। তাকে গত বুধবার রাত আনুমানিক ৯টার দিকে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে সেনাবাহিনী।
গত ১৭ ডিসেম্বর ছিলিমপুর এলাকায় চোরাইকৃত বালু মজুদের ছবি ও ভিডিও ধারনের সময় ‘দৈনিক ভোরের আকাশে’র নেত্রকোনা প্রতিনিধি শফিকুল ইসলাম কুদ্দুছ ও তার সাথে থাকা সহকর্মী রুমান হাসানকে অপহরণ করে একটি আটক করে মুক্তিপণ দাবি করে আব্দুল আওয়াল খান গংরা। এই আবদার না মেটানোর কারণে কুদ্দুছ ও রুমানকে বেধম মারধর করা হয়। এতে সাংবাদিক কুদ্দুছের হাত ও পা ভেঙ্গে যায়। এ ঘটনায় শফিকুল ইসলাম কুদ্দুছ বাদী হয়ে কেন্দুয়া থানায় মামলা দায়ের করেন। এ মামলার দুই নাম্বার এজাহারনামীয় আসামি হলেন আটককৃত মো. আব্দুল আওয়াল খান।
আটককৃত আনিছুর রহমান কাদিল (৩৫) তিনি ছিলিমপুর গ্রামের মো. আব্দুল মমেনের ছেলে ও কেন্দুয়া পৌর শ্রমিকদলের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক। তাকে গত বুধবার আনুমানিক রাত সাড়ে ৯টার দিকে বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন ভাড়া বাসা থেকে আটক করে সেনাসদস্যরা।
কেন্দুয়ার কোমলপুর এলাকার মৃত লাল মিয়ার ছেলে মো. গেদু মিয়া (৩৮)। গত বুধবার রাত আনুমানিক ১০টার দিকে তাকে নতুন বাসস্ট্যান্ডের পেছনের ধান খেত থেকে আটক করে সেনাবাহিনী।
কেন্দুয়া থানার ওসি মো. মিজানুর রহমান বলেন, আটককৃত আনিছুর রহমান কাদিল ও আব্দুল আউয়াল খানের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করা হয়েছে। অন্যদিকে, মো গেদু মিয়াকে এই মামলার সাক্ষী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আটককৃতদের আদালতে প্রেরণের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলে জানান ওসি।
এ অভিযানকে কেন্দ্র করে কেন্দুয়ার সাধারণ মানুষ ও বাস চালকদের মাঝে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফিরে এসেছে। গত ৫ আগস্টের পর থেকে গ্রেফতারকৃতরাসহ চাঁদাবাজ চক্রের আরো বেশ কযেকজন সদস্য একটি রাজনৈতিক দলের নেতার ছত্রছায়ায় নেত্রকোনার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিন কেন্দুয়া হয়ে চট্টগ্রাম ও সিলেটগামী ১৫-১৬টি বাস থেকে মাথা পিছু একশো টাকা এবং এর পাশাপাশি বাস প্রতি আরো তিনশো টাকা চাঁদা আদায় করে আসতেছিল। চাঁদাবাজি ও হয়রানির অবসানে সেনাবাহিনীর এ উদ্যোগকে ‘সাহসী পদক্ষেপ’ হিসেবে দেখছেন এবং এমন অভিযান নিয়মিত পরিচালনার আহবান জানা্ন স্থানীয়রা।