দ্যা মেইল বিডি / খবর সবসময়

; ;

দ্যা মেইল বিডি ডট কম

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধিত অনলাইন পত্রিকা, নিবন্ধন নং- ১১

নিজস্ব প্রতিবেদক: নেত্রকোনার উপজেলার গড়াডোবা ইউনিয়নের এক প্রত্যন্ত গ্রামের মেয়ে আখি মনি। দারিদ্র্য, অবহেলা আর শৈশবে মা-বিয়োগের মতো কঠিন বাস্তবতার মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠা এই তরুণীর জীবনের প্রতিটি অধ্যায় যেন একেকটি সংগ্রামের নাম।

শৈশবেই মা হারান আখি। বাবা শামিম তালুকদারের অবহেলায় তিন বোনকে নিয়ে নানাবাড়িতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন তিনি। দারিদ্র্যের কষাঘাতেও হার না মানা আখির স্বপ্ন ছিল একজন প্রকৌশলী হওয়া। তিনি ছিলেন শেরেবাংলা সরকারি কলেজের ২০২৪ সালের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। কিন্তু আর্থিক সমস্যার কারণে কলেজ কর্তৃপক্ষ তার পরীক্ষা বাতিল করে দেয়। যা ছিল তার স্বপ্নভঙ্গের প্রথম ধাক্কা।

ঢাকার রামপুরা ওয়াব্দারোড এলাকায় নানাবাড়িতে থেকে লেখাপড়া ও কাজ চালিয়ে নিচ্ছিলেন আখি। পাশাপাশি তিনি মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজে ব্র্যান্ড প্রোমোশনের কাজ করতেন, যার কর্মক্ষেত্র ছিল কাওরান বাজার। জীবন চালানোর লড়াইয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল আরেক লড়াই বৈষম্য ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলন।

২০২৪ সালের ১৮ জুলাই রামপুরা ব্রিজ এলাকায় পুলিশের লাঠিচার্জে আখি গুরুতর আহত হন। তার ঠোঁট ফেটে যায়, একটি দাত ভেঙে যায় এবং হাতে ও পিঠে আঘাত পান। কয়েকদিন বিশ্রামের পর ২৪ জুলাই তিনি আবার রাজপথে ফেরেন, অংশ নেন ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সামনে চলমান বিক্ষোভে। ২৮ জুলাই শাহবাগে পুলিশের আরেক দফা লাঠিচার্জে আখির বা চোখে আঘাত লাগে। ফলে চোখ ফুলে ওঠে এবং দৃষ্টিশক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে।

পুলিশি হয়রানি এখানেই শেষ হয়নি। অফিসে যাওয়ার পথে পুলিশ তার মোবাইল ফোন জোর করে চেক করতে চাইলে তিনি আপত্তি করেন। এতে পুলিশ গালাগালি করে এবং মানসিকভাবে হেনস্তা করে তাকে। পাশাপাশি এলাকায় ছাত্রলীগের কিছু কর্মীর কাছ থেকেও তিনি হুমকি পান। তাকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার ভয় দেখানো হয়।

তবু আখি মনি থেমে থাকেননি। গত ৩ আগস্ট শহিদ মিনারে গণসমাবেশ, ৪ আগস্ট মিছিল এবং ৫ আগস্ট “লং মার্চ টু ঢাকা” সবখানেই ছিলেন দৃপ্ত উপস্থিতিতে। কিন্তু ৫ আগস্টের পর গল্প নেয় নতুন মোড়। আন্দোলনে পাওয়া শারীরিক আঘাত ধীরে ধীরে তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটায়। একপর্যায়ে কাজ চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে, এবং তিনি চাকরি হারান।

পরবর্তীতে কিছু ব্যক্তি ও সামাজিক সংস্থার সহায়তায় চিকিৎসা চললেও এখনো তিনি পুরোপুরি সুস্থ হতে পারেননি।

তবুও আখি মনির নাম নেই ‘আহত জুলাই যোদ্ধাদের’ তালিকায়!

এমন একজন সংগ্রামী, আহত ও প্রতিনিয়ত লড়াইরত তরুণীর নাম যে তালিকায় থাকার কথা ছিল সবার আগে। সেই তালিকায় তার নাম নেই। এটি নিঃসন্দেহে একটি নির্মম উপেক্ষা। প্রশ্ন জাগে, এই তালিকা তৈরির মানদণ্ড কী ছিল? কারা সেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে, যেখানে আখি মনি’র মত একজন সাহসিনী অদৃশ্য হয়ে যান?

আখি মনি বলেন, আমি এখনো আশা করি কেউ একজন অন্তত বলবে। ‘তুমি যা করেছ, তা মূল্যবান।’ আমি হারিনি, থামিওনি। আমি আছি, লড়ছি, এবং থাকবো।

তার কণ্ঠে রয়েছে অসহায়ত্ব নয়, বরং এক অদম্য প্রত্যয়। আখি মনির মতো একজন নিঃস্বার্থ ও সাহসী তরুণীর নাম ‘আহত জুলাই যোদ্ধা’ তালিকায় যুক্ত না হওয়া শুধু একটি নামের অনুপস্থিতি নয়। এটি একটি প্রজন্মের আত্মত্যাগ ও প্রতিবাদের প্রতি অবজ্ঞার প্রতীক।

এখন সময় এসেছে আখি মনির নাম সেই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার। এটি শুধুই একজন ব্যক্তির প্রাপ্যতা নয়, এটি ন্যায়বিচারের দাবি।

Share.
Leave A Reply

মোঃ আব্দুল আওয়াল হিমেল
প্রকাশক ও সম্পাদক 
দ্যা মেইল বিডি ডট কম
মোবাইল: +৮৮০ ১৩১৪-৫২৪৭৪৯
ইমেইল: themailbdnews@gmail.com
ঠিকানা: ১০২/ক, রোড নং-০৪, পিসি কালচার হাউজিং সোসাইটি, শ্যামলী, ঢাকা-১২০৭

নিউজরুম: +৮৮০ ১৩১৪-৫২৪৭৪৯
জরুরী প্রয়োজন অথবা টেকনিক্যাল সমস্যা: +৮৮০ ১৮৩৩-৩৭৫১৩৩

© 2025 Themailbd.com. Designed and developed by Saizul Amin.
Exit mobile version