নিজস্ব প্রতিবেদক: নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি আমতলা গ্রামের নিখোঁজ ব্যক্তি মো. নূরুল আমিন নূরু (৪০) এর লাশ উদ্ধারে দিনভর তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস।
সোমবার (২ জুন) সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রোয়াইলবাড়ি সংলগ্ন চান্দের হাওড়ে এ তল্লাশি অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানে কিছু গুমের আলামত মিললেও শেষ পর্যন্ত লাশ উদ্ধার সম্ভব হয়নি।
এরআগে গত ১৭ এপ্রিল রাত ১১টার দিকে পার্শ্ববর্তী বাড়ির মো. রবিকুল ইসলাম নূরুকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর থেকে তিনি নিখোঁজ। পরদিন ১৮ এপ্রিল তার স্ত্রী ডেইজি আক্তার কেন্দুয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। পরে গত ২১ এপ্রিল কেন্দুয়া থানায় একটি অপহরণ ও পরিকল্পিত হত্যার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন।
ভুক্তভোগী নূরুর স্ত্রী ডেইজি আক্তার অভিযোগে উল্লেখ, আমার স্বামীর সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে একই গ্রামের এডভোকেট রফিকুল ইসলাম, লিলু ও সাইদুলের জমিজমা নিয়ে বিরোধ চলছিল। তারা আমার স্বামীকে প্রাণনাশের হুমকি দিত। গত ১৭ এপ্রিল গভীর রাতে প্রতিবেশী রবিকুল ইসলাম আমার স্বামীকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর থেকেই তার কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা বিশ্বাস করি, এটি পূর্বপরিকল্পিত গুম।
ঘটনার পর থেকে পলাতক থাকা রবিকুল ইসলাম গত ২৪ মে মামলার হাজিরা দিতে গেলে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আদালতের নির্দেশে দুই দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে রবিকুল স্বীকার করেন, তিনি ও তার সহযোগীরা মিলে নূরুকে হত্যা করে বস্তাবন্দি করে চান্দের হাওরের পানিতে ডুবিয়ে রেখেছেন।
রবিকুলের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে আজ (২ জুন) দিনব্যাপী পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের যৌথ অভিযানে হাওড়ে তল্লাশি চালানো হয়। তবে এখন পর্যন্ত লাশের সন্ধান মেলেনি।
এ বিষয়ে কেন্দুয়া থানার ওসি মো. মিজানুর রহমান জানান, গ্রেফতারকৃত আসামি রবিকুল ইসলামের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে চান্দের হাওরে অভিযান চালানো হয়েছে। কিছু গুমের আলামত আমরা পেয়েছি। তবে লাশ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে।
নিখোঁজের পরিবারের দাবি, প্রধান সন্দেহভাজন রফিকুলসহ অন্যদেরকেও তদন্তে আনা হোক।
ভুক্তভোগী নূরুল আমিনের বড় ভাই সাইফুল ইসলাম, তাদের পিতা হাজী শামসুদ্দিন এবং ছেলে ইয়াসিন জানান, নূরুল আমিন নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় এডভোকেট রফিকুল ইসলামসহ কয়েকজনের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। তারা রফিকুলসহ অন্যদের গ্রেফতার ও কঠোর তদন্ত দাবি করেছেন তারা।
এদিকে ঘটনার সময় নূরুর সঙ্গে দেখা হয়নি বলে দাবি করেছেন রবিকুলের স্ত্রী শিল্পী আক্তার। তিনি জানান, ঘটনার রাতে আমার স্বামী রবিকুল, লিলু, আয়নাল, ইদ্রিস ও হাকিম ফিসারিতে কাজ করছিলেন। নূরু কাকা আমাদের বাড়িতে আসেননি। তবে তিনি (শিল্পী) এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাতে পারেননি।
ঘটনায় মূল সন্দেহভাজন এডভোকেট রফিকুল ইসলামের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। দ্রুত লাশ উদ্ধার এবং দোষীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন পরিবার ও এলাকাবাসী। পুলিশের পক্ষ থেকেও অভিযানের মাধ্যমে লাশ উদ্ধারে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।