নিজস্ব প্রতিবেদক: নেত্রকোনার মদন উপজেলার জাহাঙ্গীরপুর তহুরা আমিন সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জনাব আব্দুর রউফ ও সহকারী শিক্ষক আল মামুন তালুকদারের বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ এবং নানাবিধ দুর্নীতির গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।
বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের ময়মনসিংহ অঞ্চলের উপ-পরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আসমা বেগম ও খালেদ ইবনে সিরাজ । গত ২০ মে তারা রেজিস্ট্রি ডাকযোগে এ অভিযোগ পাঠান।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২০২৪ ও ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের সরকারি বরাদ্দকৃত বিভিন্ন খাত থেকে ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে অর্থ উত্তোলন করে তা যথাযথ খাতে ব্যয় না করে আত্মসাৎ করা হয়েছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, বিজ্ঞানাগারের সরঞ্জাম, কম্পিউটার সামগ্রী, ক্রীড়া সামগ্রী, মনোহারী পণ্যসহ একাধিক উপকরণ প্রকৃতপক্ষে না কিনেই কাগজে-কলমে কেনার দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
এছাড়া ভর্তি ফি বাবদ ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নির্ধারিত ফি’র চেয়ে অতিরিক্ত ৬০০-৭০০ টাকা আদায় করে বছরে লক্ষাধিক টাকা অতিরিক্ত আয় দেখিয়ে তা আত্মসাৎ করা হচ্ছে। ৭ম থেকে ১০ম শ্রেণির ক্ষেত্রেও একই ধরনের অভিযোগ রয়েছে।
আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ল্যাবরেটরি ফি, লাইব্রেরি ফি বাবদ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মাসে মাসে টাকা আদায় করলেও বছরের পর বছর কোনো উপকরণ ক্রয় করা হয়নি। এমনকি ২০২১ সালের করোনা পরিস্থিতিতে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ফেরতযোগ্য ফি’র ৭০% অর্থ শিক্ষার্থীদের না দিয়ে আত্মসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে।
বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা কমিটি ও মুদ্রণ কমিটির সহযোগিতায় আসন্ন অর্ধবার্ষিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র স্থানীয়ভাবে শিক্ষকদের দিয়ে প্রস্তুত না করে বাহির থেকে নিম্নমানের প্রশ্নপত্র কিনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, যার মাধ্যমে আবারো আর্থিক দুর্নীতি করার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
অভিযোগে আরও বলা হয়, ২০২৫ সালে অবসরগ্রহণের পূর্বে বর্তমান প্রধান শিক্ষক অযোগ্য, অনভিজ্ঞ এবং জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে পছন্দনীয় এক সহকর্মীকে নিজের স্থলাভিষিক্ত করার অপচেষ্টা করছেন, যা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশকে বিশৃঙ্খল করে তুলতে পারে।
এ বিষয়ে দ্রুত তদন্ত, দুর্নীতিতে জড়িতদের অপসারণ এবং প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদে একজন যোগ্য ও অভিজ্ঞ প্রধান শিক্ষক নিয়োগের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন শিক্ষকগণ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রউফ আজ (রবিবার) গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, অভিযোগটি মিথ্যা। ওই শিক্ষকদের সঙ্গে অন্যন্যা বিষয় নিয়ে সমস্যা থাকায় এমন অভিযোগ করেছে। এ বিষয়টি গতকাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিক্ষকদের নিয়ে বসে আলোচনা করে শেষ করে দিয়েছেন। এটা সরকারি বিদ্যালয় অনিয়ম থাকলে অডিটেই ধরা পড়বে।
বিষয়টি অবহিত করলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অলিদুজ্জামান বলেন, অভিযোগ সংক্রান্ত কোন বিষয়ে আলোচনা হয়নি। বিদ্যালয়ের দুজন শিক্ষকের মধ্যে একটা গ্যাপ ছিলো সেটা আলোচনা করে সমাধান করে দেওয়া হয়েছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের ময়মনসিংহ অঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক মোহা. নাসির উদ্দিন বলেন, অভিযোগটি তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।