ইবি প্রতিনিধি:
উত্তরবঙ্গের কৃষকদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিতের দাবিতে টানা সাতদিনের মত অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ল’ অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০২৩-২৪ বর্ষের শিক্ষার্থী খোকন চন্দ্র বর্মন।
জানা যায়, খোকন বর্মন গত রবিবার (২৫ মে) থেকে শনিবার (৩১ মে) পর্যন্ত প্রথমে বিশ্ববদ্যালয়ের স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে এ কর্মসূচি শুরু করে পরে তা প্রধান ফটকে এক ঘন্টা করে এ অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। দাবি আদায় না হলে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর পুনরায় অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তিনি।
এ সময় খোকন বর্মনের এ দাবির সাথে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক এস এম সুইট, সহ-সমন্বয়ক গোলাম রব্বানীসহ বিভাগের সহপাঠী এবং সিনিয়ররা সংহতি জানিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
এ সময় তারা ‘কৃষক বাঁচালে,বাঁচবে দেশ’, ‘ফসলের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত না হলে কৃষক মরবে ঋণগ্রস্থ আর হতাশায়’, ‘উত্তরবঙ্গের কৃষকদের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত হোক’‘ন্যায্য মূল্য চাই, অন্যায়ের শেষ চাই’ ইত্যাদি লেখা সম্বলিত প্লাকার্ডের মাধ্যমে নীরব প্রতিবাদ জানান।
কর্মসূচির বিষয়ে খোকন বর্মন বলেন, ‘আজকে সাতদিন ধরে আমি যে দাবি নিয়ে এখানে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছি তার অন্যতম হলো- আমাদের উত্তরবঙ্গ যেখানে ৯০ভাগ মানুষ কৃষির উপর নির্ভরশীল সেখানে কৃষকেরা তাদের পণ্যের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না। যেমন বাজারে যে আলু আছে তা সেখানে ৫-১০ টাকায় বিক্রি হয়। অথচ একই আলু অন্যান্য জায়গায় ২০-২৫ টাকা বিক্রি হয়। এমনকি বিভিন্ন জেলায় একই পণ্য বিক্রি হয় ৩০-৪০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া কুমড়া যেখানে মণ ২০০-২৫০ টাকা মধ্যস্বত্বভোগীরা তা বিভিন্ন জায়গায় কেজি প্রতি ৩০-৪০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছে। অর্থাৎ কৃষকরা মাঠ পর্যায়ে দাম পাচ্ছে ৫-৬ টাকা। এতে মূল দাম নিয়ে যাচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীরা। এই মধ্যস্বত্বভোগীরা শুধুমাত্র কৃষকদের ক্ষতি করছে তাই নয় বরং ভোক্তাদেরও শোষণ করতেছে। তারা সিন্ডিকেট করে পুরো দেশের ক্ষতি করছে।’
খোকনের দাবি, ‘সরকার যেন মধ্যস্বত্বভোগীদের সিন্ডিকেট দ্রুত নিরসন করে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে হবে। কৃষকরা যেন তাদের পণ্যের ন্যায্য মূল্য পায় তার জন্য সরকারকে পণ্যের ন্যূনতম দাম নির্ধারণ করতে হবে। কৃষিপণ্য দেশের যেকোনো প্রান্তে পৌঁছাতে উন্নত যোগাযোগের ব্যবস্থা করতে হবে।’
এস এম সুইট বলেন, ‘খোকন বর্মন কৃষকদের উপর শোষণ ও অন্যায় অবিচারের প্রতিবাদে ও তাদের ন্যায্য অধিকার নিয়ে সাতদিন ধরে যে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছে তার প্রতি আমি পূর্ণ সংহতি জানাচ্ছি।
আপনারা জানেন, উত্তরবঙ্গকে পুরো বাংলাদেশের শস্যভান্ডার বলা হয়। কিন্তু উত্তরবঙ্গের কৃষকরা সব সরকারের আমলেই বিভিন্নভাবে অবহেলার শিকার হয়েছে। তারা যেমন যোগাযোগের দিক দিয়ে অবহেলার শিকার হয়েছে। তেমনিভাবে ন্যায্য মূল্যও তারা পায় নি। এই জায়গা থেকে উত্তরবঙ্গের কৃষকরা যতদিন ন্যায্য অধিকার ফিরে না পাবে ততদিন খোকন বর্মনের মতো আমরা লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে যাবো।’
প্রসঙ্গত, উত্তরবঙ্গ হচ্ছে দেশের অন্যতম কৃষি অঞ্চল। উত্তরবঙ্গের কৃষি শুধু এখানকার মানুষের জীবিকা নির্বাহেই নয়, দেশের খাদ্য নিরাপত্তার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বাজার ব্যবস্থাপনা, বাজার সিন্ডিকেটসহ ইত্যাদি কারণে কৃষকরা বছরের পর বছর ধরে তারা তাদের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকেন।