কে. এম. সাখাওয়াত হোসেন: ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পূর্বে সাড়ে ১৫ বছর ধরে সুবিধাভোগী বেশ কিছু মহলের মানুষ। যারা নিজেকে আওয়ামীপন্থি হিসেবে জাহির করেছেন। তাদের অনেককেই দেখা মিলছে ভিন্ন চেহারায়। এখন ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরে গিয়ে তারা এখন আওয়ামীবিরোধী সাজার প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকার চেষ্টায় লিপ্ত।
বিগত সরকারের আমলে নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলায় যেসব যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মী-সমর্থক স্থানীয় সাংসদের প্লেকার্ডসহ মিছিলে সক্রিয়া অংশগ্রহণ এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনী পোষ্টারে, ঈদ ও নববর্ষ শুভেচ্ছা ফটোকার্ডে আ.লীগ নেত্রী, শেখ মজিবুর রহমান, স্থানীয় এমপিসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের ছবি দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যামে পোস্ট করে নিজেকে সক্রিয় আ.লীগের নেতাকর্মী হিসাবে জাহের করতে ব্যস্ত থাকতেন। সেসব নেতাকর্মী-সমর্থকরা বিগত সময়ের অপকর্ম ও ফ্যাসিস্ট তকমা আড়াল করতে এখন ভোল পাল্টে অন্য রাজনৈতিক দলে ছায়াতলে আশ্রয়ে।
আ.লীগের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী-সমর্থকরা এখন ভিপি নূরের দল গণ অধিকার পরিষদের (জিওপি) অঙ্গ সংগঠন যুব অধিকার পরিষদের পূর্বধলা উপজেলা শাখার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সহ-সভাপাতি, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদকসহ কার্যকরী সদস্য পদ ভাগিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। আরও অভিযোগ রয়েছে অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে নেত্রকোনা যুব অধিকার পরিষদের সভাপতি রাজু রায়হান চিহ্নিত আ.লীগের লোকজনকে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়েছেন।
যুব অধিকার পরিষদের ঘোষিত পূর্বধলা শাখার নতুন কমিটিতে ভোল পাল্টানো লোকজনের নাম দেখে সাবেক কমিটির সদস্যদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। এমনকি যুব অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ ও ময়মনসিংহ উপ-কমিটির বরাবরে বিতর্কিত কমিটি বিলুপ্ত করার জন্য লিখিত আবদন করেছেন বেশ কয়েকজন যুব পরিষদের সাবেক পদধারী নেতাকর্মীবৃন্দ।

গত ১৯ এপ্রিল ঘোষিত গণপরিষদের নতুন জেলা কমিটির যুগ্ম-সদস্য সচিব মো. হিরামণ তালুকদার হিরণ ও পূর্বধলা যুব অধিকার পরিষদের সাবেক অর্থ বিষয়ক সম্পাদক জোবায়ের হোসেন জানান, গত ১০ এপ্রিল পূর্বধলা যুব অধিকার পরিষদের যে কমিটি গঠন করা হয়েছে তাতে সভাপতি পদে মো. জাহিদ হাসান কাষ্ণন, সহ-সভাপাতি পদে আবু ব্ক্কর সিদ্দিক, সাধারণ সম্পাদক পদে মো. আক্কাস বেপারি, যুগ্ম-সম্পাদক মো. এনাম, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. রাসেল খান ও কার্যকরী সদস্য মো. রাব্বি কাওসার (বাবু) স্থান পেয়েছে। তারা যুবলীগ ও ছাত্রলীগের চিহ্নিত লোকজন অনেক অকাট্য তথ্য প্রমাণ রয়েছে। এরা সকলেই আ.লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও স্থানীয় সাংসদ আহমেদ হোসেনের ঘনিষ্টজন। বিগত দিনে আ.লীগের মিটিং, মিছিলসহ সকল ধরনের কর্মসূচীতে তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল দেখার মতো। অতীতের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড থেকে রক্ষা পেতে ও ফ্যাসিস্ট তকমা ঢাকতে অর্থের বিনিময়ে তারা যুব অধিকার পরিষদের পদ ভাগিয়েছেন এমন শঙ্কা এবং বিব্রত বোধ করছেন তারা।
পূর্বধলা যুব অধিকার পরিষদের সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মো. হক মিয়া শেখ বলেন, আমি যুব অধিকার পরিষদের জেলার সভাপতি রাজু রায়হানকে জিজ্ঞেস ও সত্যতা প্রমাণ সহকারে পূর্বধলার কমিটিতে চিহ্নিত আ.লীগের অনেক লোকজন স্থান পেয়েছে অবগত ও বিলুপ্ত করতে বলি। জবাবে তিনি (রাজু রায়হান) বলেন, কমিটি আমি দিয়েছি, প্রত্যাহার করবো না। সংগঠন চালাতে টাকার দরকার আছে। সংগঠন চালাতে টাকার দরকার আছে তাই বলে আ.লীগের লোকজনকে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ভাল পদ দিয়েছেন আমার (হক মিয়া) এমন প্রশ্নে রাজু রায়হান বলেন, স্বাক্ষর করার ক্ষমতা আছে। তাই কমিটি দিয়ে দিছি, কমিটি বিলুপ্ত করবো না।
নাম না প্রকাশে পূর্বধলা বাজারের আ.লীগ সমর্থক এক ব্যবসায়ী জানান, জাহিদ হাসান কাঞ্চন ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আহবায়ক ছিল এবং আ.লীগ করতো। কাঞ্চন একজন তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ও আড়ালে আড়ালে চাঁদাবাজি করে থাকে। কেউ বাড়ি-ঘর করলে তাদের কাছ থেকে টাকা পয়সা নেয়। এলাকায় ডুবার পাশে কিছু খাস জমি সেগুলো দখল করে রেখেছে। আবু বক্কর সিদ্দিক রক্তদানে কর্মসূচী মাধ্যমে রক্ত কেনাবেচার অনেক জালিয়াতি করে। আমরা রক্ত দেই, আর তারা বিমান দিয়ে ঘুরে।
এ বিষয়ে জানতে নেত্রকোনা যুব অধিকার পরিষদের সভাপতি মো. রাজু রায়হানকে একাধিকবার মোবাইলে ফোন দেওয়া হলে তিনি ফোন ধরেননি।
পূর্বধলা যুব অধিকার পরিষদ নতুন পূর্ণাঙ্গ কমিটির আহবায়ক জাহিদ হাসান কাঞ্চন বলেন, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আহবায়ক ছিলাম, এটা সত্য না এবং কেউ এটার ডকুমেন্ট দেখাতে পারবে না। আমি আ.লীগের কোন পদ-পদবীতে ছিলাম না এবং এমনকি সদস্য পদও নাই। আমি আ.লীগ সমর্থক ছিলাম ঠিক আছে। তবে কোন প্রকার বিরোধী মত, বিরোধী দল দমন-পীড়নের মতো অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে নাই। আমি এগুলো করি নাই। আপনার (প্রতিবেদক) কাছে যদি কোন প্রকার বস্তুনিষ্ঠু প্রমাণ থাকে আমি চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করেছি অভিযোগ স্বীকার করে নিবো। উপজেলায় চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কার্যকলাপের অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে পাবেন না। খাস জমি আমার নামে বন্দোবস্ত আছে।
নিজেকে আবারও একজন আ.লীগ সমর্থক দাবি করে তিনি (কাঞ্চন) আরও বলেন, যেহেতু বিগত সরকারে প্রাক্তন এমপি ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল আমার বিরুদ্ধে চারটি মিথ্যা মামলা দিয়েছে। আত্মরক্ষার জন্য একজনের (সাবেক সাংসদ ও কেন্দ্রীয় আ.লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেন) ছত্রছায়ায় যেতে হয়েছে নিজেকে রক্ষার্থে। ৫ আগস্টের পর থেকে এখনো পূর্বধলায় অবস্থান করছি এবং পালাই নাই। কারণ আমি দুর্নীতি, অপরাধ করি নাই। অপরাধী হিসেবে কোন প্রকার সম্পৃক্ততা আমার নাই, শতভাগ নিশ্চিত থাকেন।
যুব অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মঞ্জুর মোর্শেদ মামুন তিনি জানান, উপজেলা কমিটি গঠন, তা কেন্দ্রীয় কমিটির জানার বিষয় না। কয়েকজন অভিযোগ দিয়েছে। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে যেহেতু জেলা কমিটির সভাপতি কাজটি করেছে জেলা কমিটি বিলুপ্ত করে দিবো। পূর্বধলা কমিটিতে কাকে কাকে যুক্ত করেছে তা যাচাইয়ে আভ্যন্তরিনভাবে কয়েকজনকে খোঁজ নিতে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বিতর্কিত কেউ যুক্ত থাকলে কমিটি রাখবো না। এনিয়ে অনেক অসন্তোষ্ট দেখা দিয়েছে।