দ্যা মেইল বিডি / খবর সবসময়

; ;

দ্যা মেইল বিডি ডট কম

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধিত অনলাইন পত্রিকা, নিবন্ধন নং- ১১

সময়টা ২০১৯, মার্চ কী এপ্রিল হবে। গৃহিণী ফেরদৌস জাহান খান বাসায় রাখা একটি পত্রিকায় দেখলেন বিনামূল্যে ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। সংবাদটি পড়ে তার মনে ধরলো। ঘরে বসে অর্থ উপার্জন—বিষয়টি তার ভালো লাগলো। কিন্তু নিজে কম্পিউটার চালাতে জানেন না। ঘরে ডেস্কটপ থাকলেও সেখানে তার মেয়েই বসে থাকতো সারাদিন। তাই মেয়ের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বললেন। মেয়েও তার সঙ্গে অবসর সময়ে ঘরে বসে ফ্রিল্যান্স কাজ করতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। ফেরদৌস জাহান মেয়েকে ফ্রিল্যান্স কাজ শেখানোর সিদ্ধান্ত নেন।

তাই দেরি না করে বিনামূল্যে কর্মশালায় অংশ নিতে মা-মেয়ে দুজনই উপস্থিত হন ক্রিয়েটিভ আইটি ইনস্টিটিউট আয়োজিত বিনা মূল্যের ফিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ কর্মশালায়। কিন্তু কর্মশালায় অংশ নিয়ে বেশ অবাক হন তিনি। দেখেন শুধু তরুণ-তরুণী-ই নয়, তাদের পাশাপাশি ৬০ থেকে ৬৫ বছরের অনেকেই কর্মশালায় উপস্থিত রয়েছেন।

অনেকের মধ্যে দুইজন এসেছেন আবার ছোট সন্তান নিয়ে। এসব দেখে মনে একটু সাহস পান পঞ্চাশোর্ধ্ব ফেরদৌস জাহান। তবে শুরুতে নিজে কম্পিউটার ব্যবহার করতে পারতেন না বলে মেয়েকে কর্মশালা শেষে ফ্রিল্যান্স প্রশিক্ষণে ভর্তি করান। কিন্তু ফ্রিল্যান্স কাজের প্রতি তাঁর আগ্রহ বেশ বাড়ছে বৈ কমছে না। বাসায় নিজে নিজে মেয়ের সঙ্গে চেষ্টা করলেন কিছু শেখার। এক পর্যায়ে ক্রিয়েটিভ আইটি ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেন তিনি।

কর্মকর্তারা জানান, তিনিও ফ্রিল্যান্স কাজ শুরু করতে পারবেন এবং অনেকেই তার মতো আছেন যারা ফ্রিল্যান্স কাজ করছেন। সবার উৎসাহ পেয়ে তিনিও গ্রাফিক ডিজাইন কোর্সে ভর্তি হন। শুরু করেন নিয়মিত ক্লাস। এভাবে নিজেই দক্ষ হয়ে ওঠেন ফেরদৌস জাহান। এখন তিনি একজন দক্ষ ফ্রিল্যান্সার। আয় করছেন অর্থ। যা দিয়ে নিজের খরচ মেটানোর পাশাপাশি পরিবারেও অবদান রেখে চলেছেন। জানালেন, এতে পরিবারে তার গুরুত্ব ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা বেড়েছে।

সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে এই ফ্রিল্যান্সার নিজের কাজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরলেন। বললেন, ২০২০ সালে প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার পরপরই দেশে করোনা মহামারির প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ে। তখন সবাই ঘরবন্দি। এই সময় বাসায় পুরো পরিবার অনলাইনে শিখতে থাকেন ফ্রিল্যান্স কাজ। এভাবে ধীরে ধীরে ক্যালেন্ডার, বিজনেস কার্ড, লোগো ব্র্যান্ডিংয়ের কাজের দক্ষতা বৃদ্ধি পেতে থাকে আমার।

জানালেন, এই সময় অ্যাডোবি ইলাস্ট্রেটরের কাজগুলোও আনন্দের সঙ্গে করতে থাকি। প্রথমে অনলাইনে ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ দেওয়া-নেওয়ার ওয়েবসাইট ফাইভআর মার্কেটপ্লেসে তিনি কাজ শুরু করেন। তবে পরে স্থানীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য কাজ করেছেন।

একই সঙ্গে ফেরদৌস জাহান অ্যাডবি স্টক ও সাটার স্টকেও বিভিন্ন কাজ জমা দেন। কাজগুলো জনপ্রিয়তা পাওয়ায় ফ্রিল্যান্সিং কাজ ভালোভাবেই চালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি।

এরপর তিন বছর ধরে একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি করছেন ফেরদৌস জাহান। প্রশাসনিক কাজের পাশাপাশি নিজ প্রতিষ্ঠানের পরিচয়পত্র ও ব্যানার থেকে শুরু করে গ্রাফিক ডিজাইনের বিভিন্ন কাজও করেন তিনি।

নিজের ফ্রিল্যান্স প্রশিক্ষণের শুরুর দিনগুলোর কথা তুলে ধরে ফেরদৌস জাহান এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘মেন্টর যখন কম্পিউটার রিফ্রেশ দিচ্ছিলেন, তখন আমি ভেবেছিলাম মেন্টর কিছু একটা করেছেন, যেটা আমি বারবার বুঝতে পারছি না। আমিও মেন্টরকে জিজ্ঞাসা করছিলাম, এটা কী করলেন আমি তো মিস করছি। মেন্টর হেসে জানান, ‘কই কিছুই তো করিনি। যেটা আপনি মিস করবেন।’ তারপর মেন্টর বললেন, ‘ও, এটা তো রিফ্রেশ।’ তখন আমি ‘বিষয়টা বুঝতে পারি’।

ফেরদৌস জাহান খান গ্রাফিক ডিজাইন, করপোরেট ইংলিশ ও মোশনের ওপরে দক্ষতা অর্জন করেছেন। শুধু তাই নয়, নিজে শিখে মেয়ে নওরিন খানকেও শিখিয়েছেন। বর্তমানে নওরিন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগে পড়ালেখা করছেন।

তার কাজ দেখে স্বামী রিয়াজ খানও অনলাইনে কাজ করার বিভিন্ন বিষয় শিখেছেন। এখন স্বামী ও স্ত্রী দুজন মিলে ফ্রিল্যান্স কাজ করেন। আয়ও বেশ ভালো। ফেরদৌস জাহানের স্বামী রিয়াজ খান বলেন, ‘এক্সেল গ্রাফিক ডিজাইন ও ওয়েব ডিজাইন শিখেছি। আসলে শেখার ব্যাপারটা আমরা আনন্দ নিয়েই করতাম। অনলাইনে শিখতাম কিন্তু ফেরদৌস জাহান এই বিষয়ে সাহায্য করতেন। আমরা তিনজন তিন রুমে ক্লাস করতাম। করোনার দিনগুলো এভাবে কেটেছে। আমাদের যে কাজ বা দক্ষতা বাড়িয়েছি, সেটা আমাদের চাকরিতে খুব ভালোভাবে কাজে লাগাতে পেরেছি, যা কাজের ক্ষেত্রকে অনেক সহজ করে দিয়েছে।’

ফেরদৌস জাহানের বাড়ি সাতক্ষীরা। তিনি এইচএসসি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন সেখানেই। তারপর হোম ইকোনমিকস থেকে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি সম্পন্ন করেন।

বেশি বয়সে ফ্রিল্যান্স কাজ শেখার বিষয়ে ফেরদৌস জাহান বলেন, ‘বয়স কোনো বিষয় না। আমি ৪৮ বছর বয়সে নিজের দক্ষতা বাড়িয়ে চাকরি করছি। আর নিজের দক্ষতা বাড়াতে পারলে একা একা অনেক কিছু করা সম্ভব। সেটাই এখন আমি করছি। আমি বলব, মেয়েদের ঘরে বসে না থেকে নিজের দক্ষতা বাড়ানো উচিত। আর ভয় পেয়ে পিছিয়ে যাওয়া যাবে না। আমি পারব- এই কথাটি মাথায় সেট করে ফেলতে হবে। তারপর পেছনে না তাকিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।’

ভবিষ্যতে নিজের প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে অনেকের কর্মসংস্থান তৈরিরও পরিকল্পনা রয়েছে ফেরদৌস জাহানের। বললেন, আমি এসব বিষয় মাথায় রেখেই এগিয়ে চলছি। আশা করছি সফল হবো।

ক্রিয়েটিভ আইটি ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তা পারভিন আক্তার বলেন, আমরা আইটি বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান করে নারীদের স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তুলতে নানা ধরনের বাস্তব পরামর্শ দিয়ে আসছি। ফেরদৌস জাহানও এমনই একজন। তার মতো যারা কিছু করতে চান আমরা সেইসব শিক্ষার্থীদের জন্য একটি ভালো কর্মসংস্থান তৈরি করতেও সচেষ্ট রয়েছি।

বিজ্ঞপ্তিতে জানা যায়, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়াধীন যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উদ্যোগে সম্প্রতি এ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণের লক্ষ্যে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। ‘দেশের ৪৮ জেলায় শিক্ষিত কর্মপ্রত্যাশী যুবদের ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ফ্রিল্যান্সিং-এর মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করে আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে বেকারত্ব দূরীকরণ ও উদ্যোক্তা তৈরির লক্ষ্যে দেশের ৮টি বিভাগের ৪৮টি জেলায় যুব ও যুব মহিলাদের ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এই প্রকল্পটি পরিচালনা করছে দেশের স্বনামধন্য আইটি প্রতিষ্ঠান ‘ই-লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং লিমিটেড’।

Share.
Leave A Reply

মোঃ আব্দুল আওয়াল হিমেল
প্রকাশক ও সম্পাদক 
দ্যা মেইল বিডি ডট কম
মোবাইল: +৮৮০ ১৩১৪-৫২৪৭৪৯
ইমেইল: themailbdnews@gmail.com
ঠিকানা: ১০২/ক, রোড নং-০৪, পিসি কালচার হাউজিং সোসাইটি, শ্যামলী, ঢাকা-১২০৭

নিউজরুম: +৮৮০ ১৩১৪-৫২৪৭৪৯
জরুরী প্রয়োজন অথবা টেকনিক্যাল সমস্যা: +৮৮০ ১৮৩৩-৩৭৫১৩৩

© 2025 Themailbd.com. Designed and developed by Saizul Amin.
Exit mobile version