ডা.এম.এ.মান্নান
নাগরপুর(টাঙ্গাইল)সংবাদদাতা:
টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলায় বিভিন্ন স্থানে অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে নদী থেকে বালু-মাটি লুট করে নিচ্ছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। এতে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সহ বিভিন্ন প্রভাবশালী মহলের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাঝে মধ্যে নামমাত্র অভিযান পরিচালনা করা হলেও অভিযান শেষে বিরতি দিয়ে পুনরায় চলে রমরমা এই বালু-মাটির অবৈধ ব্যবসা। অতিষ্ঠ হয়ে উঠা স্থানীয় এলাকাবাসীরা বলছে, এদের দৌরাত্ম্যে নদী ভাঙন, পরিবেশ দূষণ সহ বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে, তবে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার মতো কেউ নেই।
বছর জুড়েই উপজেলার পাকুটিয়া ও মোকনা ইউনিয়নের অন্তর্গত ধলেশ্বরী ও বংশী নদীর বিভিন্ন স্থান থেকে বালু উত্তোলন করে পাড়ে স্তুপ করে রাখা হয় এবং পরবর্তীতে ৬ চাকার অবৈধ ট্রাক্টর গাড়ি দিয়ে পরিবহনের মাধ্যমে সেটি বিক্রয় করে রাতারাতি অর্থ-বিত্তশালী বনে যাচ্ছেন মাটি খেকো ব্যবসায়ীরা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পাকুটিয়া ইউনিয়নের পুখুরিয়া বাজারের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বংশী নদীতে অবৈধ ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এলাকাবাসীরা বলছে, এই বালু উত্তোলন ও বিক্রি বছরব্যাপী ধরেই চলমান থাকে। স্থানীয় প্রশাসন সব জেনেও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে না। নদী ড্রেজিং করায় পাড়ের অনেক জমি ও সড়ক প্রতিনিয়ত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়াও দিন-রাত ড্রেজার মেশিন চলায় ব্যাপক শব্দ দূষণ এবং বালু পরিবহনের গাড়ি সড়কে চলাচলে ধুলোবালিতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের সৃষ্টি হচ্ছে।
এলাকাবাসীর সূত্রমতে, বালু-মাটি ড্রেজিং সিন্ডিকেটে জড়িত আছে পাকুটিয়া ইউপি সদস্য মো. রফিকুল,পাকুটিয়া বাজার ব্যবসায়ী মো. শহিদুল, আউটপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মো. মুক্তার হোসেন, পুখুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা মো. রবিউল ইসলাম, আবুল কাশেম সহ অনেকেই। এ বিষয়ে পাকুটিয়া ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী মো. নজরুল ইসলাম বলেন, একটি সিন্ডিকেট সব সময়ই তৎপর বালু-মাটি উত্তোলন ও বিক্রিতে। আমরা অভিযানে গেলে এরা পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে পুনরায় কাজ শুরু করে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মহোদয়কে অবগত করা হয়েছে।
পাকুটিয়া ইউনিয়ন আ.লীগ সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শামীম খান মুঠোফোনে জানায়, আমাদের পুখুরিয়া, মানড়া ও বাঘুটিয়া তিনটি ঘাটে এই অবৈধ ড্রেজার চলছে। এখানে প্রশাসনের অভিযানের আগেই সিন্ডিকেটরা জেনে যায়। কয়েকদিন আগেই প্রশাসন লাল নিশান দিয়ে ড্রেজিং নিষিদ্ধ করে গেছে, সেখানে পুনরায় বালু বিক্রি ব্যবসা চলছে। এই অবৈধ ব্যবসা বর্তমান পাকুটিয়া ইউপির বিএনপি পন্থী চেয়ারম্যান সহ অনেক প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় টিকে আছে। আমি এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে এই সিন্ডিকেট বন্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানাচ্ছি।
নাগরপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দীপ ভৌমিক বলেন, অবৈধ বালু-মাটি ব্যবসা বন্ধে আমাদের অভিযান চলমান আছে এবং থাকবে। আমি মনে করি প্রশাসনের পাশাপাশি এলাকাবাসীকে সচেতন হতে হবে। এই সিন্ডিকেট অনেক চালাক-চতুর, অভিযানে ব্যবস্থা নেওয়ার পরের দিনই পুনরায় তারা একই কাজে লেগে যায়। এর স্থায়ী সমাধানে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এর সাথে আলোচনা করে আরো কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। উপজেলার কোথাও এই অবৈধ সিন্ডিকেট ব্যবসা করতে দেওয়া হবে না।