মশিউর রহমান ( জামালপুর) থেকেঃ-
জামালপুরের সরিষাবাড়ীর তারাকান্দিতে প্রতিষ্ঠিত
তারাকান্দি যমুনা সারকারখানায় গ্যাস সংকটে কারনে দীর্ঘ প্রায় সাত মাস ধরে বন্ধ রয়েছে ইউরিয়া সার উৎপাদন।
এতে করে প্রতিমাসে প্রায় শত কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার এমনটি জানিয়েছেন শ্রমিকনেতারা।
অপর দিকে দীর্ঘ সময় কারখানা বন্ধ থাকায় মুল্যবান যন্ত্রাংশ মরিচা ধরে নষ্ট হওয়ার উপক্রম হতে চলেছে। পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন পার করছে কারখানার সাথে জড়িত সহস্রাধিক শ্রমিক।
এভাবে কারখানা বন্ধ থাকলে সামনের আমন মৌসুমে যমুনার সার নির্ভর এলাকাগুলোতে সারের সংকটের শঙ্কায় রয়েছে কৃষকরা।
কারখানার সুত্রে জানা যায়, ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়ে ১৯৯১ সালে ইউরিয়া উৎপাদনে যায় তারাকান্দি যমুনা সারকারখানা।
বাংলাদেশ রাসায়নিক শিল্প সংস্থা (বিসিআইসি) নিয়ন্ত্রণাধীন কেপিআই-১ মানসম্পন্ন যমুনা সার কারখানাটি প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে দৈনিক ১ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন ইউরিয়া উৎপাদন করে আসছিল। কারখানার নিরবিচ্ছিন্ন উৎপাদনের জন্য দৈনিক ৪২-৪৩ পিএসআই গ্যাসের প্রয়োজন।
গ্যাসের চাপ স্বল্পতা ও বিভিন্ন ত্রুটির কারনে উৎপাদন কমে বর্তমানে ১ হাজার ২০০ মেঃ টন ইউরিয়া উৎপাদন হয়। সম্প্রতি ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার কোম্পানিতে সার উৎপাদন নিরবিচ্ছিন্ন রাখার সিদ্ধান্ত নেয় বিসিআইসি।
এ জন্য সেখানে পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে যমুনা সারকারখানায় গত ১৫ জানুয়ারী থেকে গ্যাসের চাপ কমিয়ে দেয় তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন আন্ড ডিস্ট্রিবিউশর কোম্পানি। এর পর থেকেই যমুনায় ইউরিয়া উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।
দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় কারখানার মুল্যবান যন্ত্রাংশ মরিচা ধরে নষ্ট হওয়ার উপক্রম হতে চলেছে। দ্রুত গ্যাস সংযোগ দিয়ে বৃহৎ এ শিল্প কারখানাটি সচল রাখতে না পারলে পুরোপুরি নষ্ট হওয়ার শঙ্কায় রয়েছে কারখানার কর্তৃপক্ষ।
এ কারখানা থেকে জামালপুর, শেরপুর, ময়মনসিংহ, টাংগাইল, রাজবাড়ি ছাড়াও উত্তরবঙ্গের ১৬ জেলার প্রায় আড়াই হাজার ডিলার যমুনার সার উত্তোলন করে কৃষকদের মাঝে বিক্রয় করে আসছেন। দীর্ঘদিন সময় উৎপাদন বন্ধ থাকলে কারখানার কমান্ডিং এরিয়ায় সার সংকটে হওয়ায় শঙ্কায় আছে সার ব্যবসায়ীরা।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, যমুনার সার জমিতে ব্যবহারে ফসল বৃদ্ধি পায়। গাছও সতেজ হয়। বাইরের দেশ থেকে আমদানি করা সার জমিতে ব্যবহার করলে ফসল ভালো হয়না। জমির উর্বরতা কমে যায়। এভাবে দীর্ঘদিন যমুনা সার কারখানা বন্ধ থাকলে পূর্ব পুরুষের ব্যবহার করা এই সার সংকট হওয়ার আশংকায় স্থানীয় কৃষকরা।
কারখানার শ্রমিকরা জানান, জীবনযাপন অনেক নিম্নমানে চলে গেছে। সেই সাথে কারখানা বন্ধ থাকায় কারখানার যন্ত্রাংশও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
জামালপুর জেলা ট্রাক ও ট্যাংকলড়ি মালিক সমিতি তারাকান্দি নিয়ন্ত্রন শাখার সহ-সভাপতি মশিউর রহমান মোর্শেদ বলেন, কারখানার সাথে জড়িত প্রায় ৩-৪ শতাধিক পরিবহন। দীর্ঘদিন ধরে কারখানা বন্ধ থাকায় এ পরিবহন শ্রমিক ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
যমুনা সার কারখানায় গ্যাস সংযোগ দিয়ে পরিবহন শ্রমিক, ব্যবসায়ীদের মানবেতর জীবনযাপন থেকে উদ্ধার করবে এমনটাই দাবি পরিবহন মালিক এ নেতার।
যমুনা সারকারখানার শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের (সিবিএ) সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান আলী বলেন, যমুনা সারকারখানা এক টন ইউরিয়া সার উৎপাদন করতে খরচ লাগে ১৮-২০ হাজার টাকা। আর দেশের বাইরে থেকে আমদানি করতে এক টন সারের খরচ লাগে প্রায় এক লাখ টাকা।
আমদানি নির্ভরতা থেকে সরে দাড়িয়ে দেশীয় শিল্পকে সচল রাখা হলে দেশের রাজস্ব বাড়বে। এতে বাইরে থেকে সার আনতে সরকারের ভর্তুকি ভার বহন করতে হবে না। কারখানা বন্ধ থাকায় প্রতিদিন সাড়ে ৩ কোটি টাকা সরকারের রাজস্ব ঘাটতি হচ্ছে বলে জানান এ শ্রমিক নেতা।
যমুনা সার কারখানার উপ প্রধান প্রকৌশলী (রসায়ন) ফজলুল হক এ প্রতিবেদককে জানান, গ্যাস সংযোগ না থাকায় দীর্ঘ ৬ মাসের বেশি সময় ধরে কারখানা বন্ধ,কারখানায় বড় ধরনের কোন ত্রুটি নেই,ছোট ছোট যা ছিল তা মেইনটেন্স করা হয়েছে আগেই। গ্যাস পেলে কারখানা চালু করা হবে বলে জানান তিনি।