তিমির বনিক,মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:
মৌলভীবাজারের বড়লেখায় ছেলের নির্বাচনী সভায় প্রতিদ্বন্দ্বী এক প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে কটূক্তির প্রতিবাদে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আজির উদ্দিনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ও ঝাড়ু মিছিল করেছেন স্থানীয় লোকজন। গতকাল সোমবার (১৫ই জুলাই) সন্ধ্যায় উপজেলার দক্ষিণভাগ বাজারে কয়েকটি এলাকার বিক্ষুদ্ধ লোকজন এই ঝাড়ু মিছিল দিয়ে প্রতিবাদ করেন। এসময় তারা বড়লেখা-কুলাউড়া আঞ্চলিক মহাসড়কে অবস্থান নেন। তখন বিক্ষুদ্ধ লোকজনের রোষানলে পড়েন উপজেলা চেয়ারম্যান আজির উদ্দিনের ব্যক্তিগত গাড়িচালক সানুর (৩০)। এতে পরিস্থিতি উস্তপ্ত হয়ে ওঠে। খবর পেয়ে বড়লেখা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
স্থানীয় সূত্রের বরাতে জানা গেছে, উপজেলার দক্ষিণভাগ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান পদ এর উপ-নির্বাচনে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আজির উদ্দিনের ছেলে মাসুম আহমদ হাসানসহ ৬জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। সম্প্রতি ছেলের পক্ষে এক নির্বাচনী সভায় বক্তব্য দিতে গিয়ে ইউনিয়নের গজভাগ, দোহালিয়া এলাকার অধিকাংশ মানুষ ও ছেলের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সমর্থকদের উদ্দেশ্যে করে কটূক্তিমূলক বক্তব্য দেন আজির উদ্দিন। কটূক্তির ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে এসব এলাকার মানুষ ও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। এরই জের ধরে সোমবার (১৫ই জুলাই) সন্ধ্যায় দক্ষিণভাগ বাজারে ওইসব এলাকার লোকজন ঝাড়ু নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে আজির উদ্দিনের বিরুদ্ধে ও বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেন। এসময় তারা বড়লেখা-কুলাউড়া আঞ্চলিক মহাসড়কে অবস্থান নেন। এসময় উপজেলা চেয়ারম্যান আজির উদ্দিনের ব্যক্তিগত গাড়িচালক সানুর বিক্ষুদ্ধ লোকজনের রোষানলে পড়েন। একপর্যায়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠে। খবর পেয়ে বড়লেখা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেছে।
এদিকে উপজেলা চেয়ারম্যান আজির উদ্দিনের কটূক্তির ভিডিও টি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এনিয়ে এলাকার সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন। ভিডিও তে দেখা যায় উপজেলা চেয়ারম্যান আজির উদ্দিন তার ছেলের নির্বাচনী সভায় বক্তব্য রাখছেন। তার পাশে কয়েকজন মানুষ বসা রয়েছেন। ওই ভিডিওতে আজির উদ্দিনকে বলতে শোনা যায়-‘আমি যেটা দেখিয়ার এখন শাহীনে সম্মানজনক ভোট পাইতা নায়। যেহেতু তান পিছনে গজভাগ বা দোহালিয়ার যে মানুষগুলা ঘোরাইরা, আপনারা দেখছইন তো? এই মানুষগুলোরে কোনো না কোনো প্রার্থীয়ে লগে নিছে। যে ঘটনা করছলা আপ্তাব উদ্দিন হাজী সাবর লগে, জলাল মিয়ার লগে, ঠিক তদ্রুপ ওলা। যে যত পারো টাকা খাও সময় মতো জাগাত দেও-এই স্লোগান।
যা পারো খাও চলো সীল মারিও জাগাত। বুঝচ্ছইন নি আপনারা? এই শাহীনরে ডিগ দিয়া ভর দিয়া রাখছইন। ওউ শাহীনে ঘোরার। আর ইগুন ফুয়ান দেখছইনতো আপনারা কোন ক্লাসের ফুয়াইন? আচ্ছা খউক্কা যতগু ফুইয়াইন ঘোরাইরা এর মাঝে একশ’র মাঝে আশিগু ইয়াবা, গাঞ্জা, মদ ছাড়া আছেনি? এরার মূল লক্ষ্য অইলো খাইয়া বাঁচা চলা। সময় মতো ভোট তারা তারার পছন্দের প্রার্থীরেউ দিব। শাহীনরে ভোট দিত নায়। একমাত্র টিকাইয়া রাখার মূল কারণ অইল যেমন হাটলিঘাট, সফরপুর, খানপাড়া, কলাজুরা বা দুইয়ো বাগান তনেতো আমার ছামাদে বা ইকবালে ভোট আনার ক্ষমতা আছেনি? ইতা তনে ভোট আনতা পারতা নায়….। এখন মার্কেট বা বাজারে যে বিষয়টা ছাড়া অইছা যে ২৩ বছরে এই সুযোগ পাইছি। এখন যদি ক্ষমতায় ইকবালরে নিয়া বওয়াইতাম পারি। ইটা আমরার জীবনের সুবর্ণ একটা সুযোগ-খইয়া সাম্প্রদায়িক মাত পর্যন্ত শুরু করিয়া মানসরে বুঝাইরা। এখন গাংকুল-দোহালিয়ার আমার ভক্ত দক্ষিণভাগসহ অনেক মানুষ, আমার ভক্ত যারা এরা এই কথা মানিয়া নের না। কিছু সংখ্যক মানসে আবার হুজুগে বাঙালি আমরা। হুজুগে আবার ফিরিয়া কর, কেউ কর জাতর পেট লাথর কিতাত মারো লাথ আর নিজর পেটও দেও ভাত। ওতদিন তুই কই আছলে জাত লইয়া-ইলা কেউ খর। কেউ খর না, ঠিকাছে। এই সুযোগ হাত ছাড়া করা যাইত নায়। আসলে আমরা ই কথা যদি ছামাদরে খই। ইটা হে মানবনি? ছামাদরে যদি এখন কইন তুমি প্রার্থী অইওনা বা প্রার্থীতা প্রত্যাহার করো আর নায় তুমি বও মানত নায়। মাছুমরে যদি কই বাদ দেও মানবনি? শাহীনরে যদি কই বাদ দেও মানবনি?…।’
উপজেলা চেয়ারম্যান আজির উদ্দিন জানান, তিনি তার ছেলের নির্বাচনী সভায় বক্তব্যে রেখেছেন ঠিক। কিন্তু কাউকে নিয়ে কোনো কটুক্তি করেননি।
বড়লেখা থানার ওসি সঞ্জয় চক্রবর্ত্তী বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান আজির উদ্দিনের বিরুদ্ধে দক্ষিণভাগে বিক্ষোভ করেছে স্থানীয় লোকজন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেছি। উপজেলা চেয়ারম্যানের গাড়ি চালকের ওপর হামলার ঘটনায় তার পিতা থানায় অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।