শনিবার, জুন ২৯, ২০২৪

পায়ের ঘষায় উঠে যাচ্ছে ৪ কোটি টাকার সড়কের কার্পেটিং

যা যা মিস করেছেন

রুহুল আমিন,ডিমলা(নীলফামারী)

নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার তিস্তা সেচ ক্যানেলের পরিদর্শন সড়ক চার কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কারের এক সপ্তাহ পরই পিচ গলে উঠে যাচ্ছে। পথচারীর পায়ে লেগে যাচ্ছে সড়কের পিচ। আবার যানবাহনের চাকার দাগ বসে যাচ্ছে সড়কে। এমনকি পা দিয়ে ঘষলেই উঠে যাচ্ছে কার্পেটিং।

সড়ক ব্যবহারকারীরা জানান, সড়কের প্রায় ৯ কিলোমিটার এলাকার অধিকাংশ জায়গার পিচ গলে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, নিম্নমান ও কম পুরুত্ব দিয়ে অপরিকল্পিত কার্পেটিং করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

ডালিয়া পাউবো সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৪ কোটি টাকা বরাদ্দে তিস্তা সেচ ক্যানেলের ডালিয়া-দুন্দিবাড়ী পর্যন্ত ১৭ কিলোমিটারের মধ্যে ৯ কিলোমিটার সড়কের সংস্কারের কাজ পান আবুল কালাম নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে কাজটি সম্পন্ন করেছেন লোকমান হোসেন নামের সাব-ঠিকাদার। শতভাগ ভাঙা পাথর আর উন্নতমানের বিটুমিন দিয়ে রাস্তাটি সংস্কার করার কথা। গত ১৫ জুন সড়ক সংস্কারের কাজ শেষ করেন ঠিকাদার।

জানা গেছে, সড়ক-মহাসড়কে যে পিচ ব্যবহার করা হয়, তার মান ৬০-৭০ গ্রেডের। এই পিচের গলনাঙ্ক ৪৮-৫২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ তাপমাত্রা ৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে পিচ গলে যাওয়ার কথা। এর আগে নয়। উপজেলা আবহাওয়া অফিস জানায়, গত কয়েক দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩২ থেকে ৩৫ ডিগ্রি। এই তাপমাত্রায় পিচ গলে যাওয়ায় ব্যবহৃত পিচের মান নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

গত সোমবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, সড়কের বিভিন্ন স্থানে পিচ গলে যাচ্ছে। কয়েকটি স্থানে সড়ক ধসে বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া সড়কের দুই ধারে বেশির ভাগ অংশে ইটের রেজিং নেই। সড়কে হাঁটতে গিয়ে এই প্রতিবেদকের পায়ের জুতায় লেগে বিটুমিন ও কার্পেটিং উঠে আসে।

এ সময় স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করে বলেন, সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার ছোট-বড় যানবাহন চলাচল করে। অথচ সড়ক কার্পেটিংয়ের পুরুত্ব মাত্র ৭ থেকে ৯ মিলিমিটার দেওয়া হয়েছে। বিটুমিনও কম দেওয়া হয়েছে। সংস্কারের পর সড়ক গলে ঢিবির মতো উঁচু-নিচু বা ঢেউয়ের আকৃতি ধারণ করেছে। এ ছাড়া কমপ্রেশার মেশিন দিয়ে সড়ক পরিষ্কার না করে ধুলা-ময়লার ওপরই পিচ ঢালাই করেছেন ঠিকাদার।

ভাঙা পাথরের পরিবর্তে স্থানীয় গোটা পাথর ব্যবহারের সময় প্রতিবাদ জানালেও কোনো লাভ হয়নি। একপর্যায়ে এলাকার লোকজন সড়কের কয়েক স্থানে হাত দিয়ে কার্পেটিং উঠে যাওয়া ও বিটুমিন গলে যাওয়ার দৃশ্য দেখান। এলাকাবাসীর ভাষ্য, ঠিকাদার পাউবোর প্রকৌশলীদের সঙ্গে মিলে নিম্নমানের ও কম সামগ্রী দিয়ে রাস্তাটি তড়িঘড়ি সংস্কার করেছেন। সড়ক সংস্কারের নামে সরকারের কোটি টাকা জলে গেল।

পিচ গলে যাওয়ার খবর পেয়ে সড়ক পরিদর্শনে আসা ডালিয়া পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী হাশেম আলী জানান, বিটুমিন গলে কার্পেটিং উঠে যাওয়ার বিষয়টি নির্বাহী প্রকৌশলীকে জানানো হয়েছে।

ওই সড়ক দিয়ে পণ্যবোঝাই পিকআপ ভ্যান নিয়ে জলঢাকা থেকে ডালিয়া আসছিলেন চালক জলিল হোসেন বলেন,
‘১০ বছর ধরে বিভিন্ন সড়কে পণ্য নিয়ে যাতায়াত করতে হয়, কিন্তু এমনভাবে পিচ গলতে কখনো দেখিনি। এমন সড়কে যানবাহন চালালে দ্রুত টায়ার নষ্ট হবে, যেকোনো সময় টায়ার ফেটে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’ ইজিবাইকের চালক জাকির আলী বলেন, সাত দিনেই সড়কের পিচ গলে উঠে যাচ্ছে। কার্পেটিং অনেক উচুঁ-নিচু। ফলে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা হতে পারে।

তবে রাস্তাটির সংস্কারকাজে নিম্নমানের ও কম পরিমাণে পাথর-বিটুমিন ব্যবহারের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ঠিকাদার লোকমান। তিনি বলেন, ‘রাস্তার কিছু জায়গায় বিটুমিনের পরিমাণ বেশি পড়েছে। ফলে রোদের তাপে এ রকম হচ্ছে। কার্যাদেশ অনুযায়ী কাজ হয়েছে। দরপত্রেই সড়ক কার্পেটিংয়ের পুরুত্ব ৯ মিলি ধরা হয়েছে।’

এসব নিয়ে ডালিয়া পওর বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদদৌলা বলেন, ‘বিষয়টি শুনেছি। বর্তমান তাপমাত্রায় বিটুমিন গলে যাওয়ায় কথা নয়। সরেজমিন পরিদর্শন করে অনিয়ম পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।

প্রিয় পাঠক অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্যামেইলবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন themailbdjobs@gmail.com ঠিকানায়।

More articles

সর্বশেষ

x  Powerful Protection for WordPress, from Shield Security
This Site Is Protected By
Shield Security