মনিরুজ্জামান খান গাইবান্ধা: গাইবান্ধা জেলা কারাগারে এক হাজতিকে নির্যাতনের অভিযোগে প্রধান কারারক্ষিসহ এক মহিলা কারারক্ষিকে তাৎক্ষণিক বদলী করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৯ এপ্রিল) রাতে রংপুর বিভাগ, সদর দপ্তর, রংপুর কারা উপ-মহাপরিদর্শক মো. তৌহিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত পত্রে তাদের পৃথক এ অফিস আদেশ দেন। পরে পত্রটি গাইবান্ধা জেলা কারাগারে পৌঁছালে যোগদানের জন্য তাদের নির্দেশ দেয় গাইবান্ধা কারা কতৃপক্ষ।
বদলিকৃতরা হলেন, জেলা কারাগারের প্রধান কারারক্ষি মো. আশরাফুল ইসলাম ও কারারক্ষি সাবানা বেগম। আশরাফুল ইসলামকে দিনাজপুর জেলা কারাগারে ও সাবানা বেগমকে ঠাকুরগাঁও জেলা কারাগারে বদলী করা হয়েছে এবং বদলিকৃত কারাগারে ২৪ ঘন্টার মধ্যে যোগদানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
নির্যাতনের অভিযোগকারী নারী কয়েদি মোর্শেদা খাতুন সীমা দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার চৌপুকুরিয়া গ্রামের তোফাজ্জল হোসেনের মেয়ে। তিনি গোবিন্দগঞ্জ থানার মাদক মামলার আসামি। সীমা প্রায় পাঁচ বছর ধরে গাইবান্ধা জেলা কারাগারে বন্দি আছেন।
এর আগে গত ১৬ এপ্রিল কারাগারে নির্যাতনের অভিযোগ তুলে নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন সীমার মা করিমন নেছা।
গত মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) জেলা প্রশাসককে দেয়া লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন, হাজতি মোর্শেদা খাতুন সীমা প্রায় ৫ বছর ধরে গাইবান্ধা জেলা কারাগারে বন্দি। কিছুদিন আগে কারাগারে কর্মরত সুবেদার আশরাফুল ইসলাম ও মহিলা কয়েদি (রাইটার) মেঘলা খাতুনের মধ্যে চলমান অবৈধ কার্যকলাপ দেখে ফেলেন নারী হাজতি সীমা।
বিষয়টি জানতে পেরে সুবেদার আশরাফুল ও মহিলা কয়েদি মেঘলা খাতুন সীমার ওপর ক্ষিপ্ত হন। ঘটনা জানাজানির ভয়ে তারা কারাগারের ভেতরে সীমাকে বিভিন্নভাবে মানসিক নির্যাতন করতে থাকেন। হাজতি সীমা এসব ঘটনা জানিয়ে জেল সুপারের কাছে বিচার দেবেন জানালে সুবেদার আশরাফুল তাকে ভয়-ভীতি ও হুমকি দেন।
এক পর্যায়ে (২০ মার্চ) দুপুরে সুবেদার আশরাফুলের নেতৃত্বে মহিলা কয়েদি মেঘলা, কারারক্ষী সাবান বেগমসহ কয়েকজন তাকে শারীরিক নির্যাতন করে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত প্রধান কারারক্ষী আশরাফুল ইসলাম জানান, নির্যাতনের অভিযোগকারী মোশেদা খাতুন সীমা একজন উগ্রপন্থী কয়েদি। বিভিন্ন সময়ে সে বন্দি কয়েদির নানাভাবে নির্যাতন করে কারাগারে প্রভাব বিস্তার করে চলে। প্রতিবাদ করায় এর আগেও সে বিভিন্ন কয়েদি ও কারারক্ষীকে মারপিট পর্যন্ত করেছে। এসব ঘটনায় এর আগেও তাকে দুইবার অন্য কারাগারে বদলি করা হয়েছিল।
ঘটনার দিন সে তার থাকার কক্ষের কাপড় রাখার জন্য অতিরিক্ত একটি র্যক দখল করে। সেটি খালি করতে বললে সে ক্ষিপ্ত হয়ে দুই মহিলা কারারক্ষীকে মারপিট করে। পরে অন্য হাজতিদের সহযোগিতায় ওই দুই কারারক্ষীকে উদ্ধার করা হয়।
কারারক্ষীদের করা মারপিটের ঘটনা থেকে নিজেকে বাঁচাতে সে বিভিন্ন মিথ্যা তথ্য দিয়ে অভিযোগ করেছে।
গাইবান্ধা জেলা কারাগারের জেল সুপার জাবেদ মেহেদী তাদের বদলির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।