তিমির বনিক,মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:
কেউ ভিক্ষা করে, কেউ বা কাগজ কুড়ায়। বেশিরভাগ শিশুদেরই নেই মাতা-পিতা। কারো বা মা আছে, তো আবার কারোও নেই বাবা জানে কে বাবা। আমরা যাদের বলি ছিন্নমূল বা পথশিশু। এদের সাথে আছে সমাজের সুবিধাবঞ্চিত শিশু। সবাইকে একত্র করে সপ্তাহে একদিন শেখানো হয় লেখাপড়া। যারা এই উদ্যোগ নিয়েছেন তারা বিশাল হৃদয়ের অধিকারী। রেলওয়ে স্টেশনের খোলা মাঠে প্রতি শুক্রবার বসে এই আলোর হাট। যার নাম ‘আলোর পাঠশালা’।
মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়ায় এসো খেলার ছলে পড়ি, নিজেকে গড়ি- এমন স্লোগান নিয়ে এই আলোর পাঠশালার পথচলা শুরু ২০১৯ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর। মাঝে করোনার চোখ রাঙানীতে কিছুটা স্থবিরতা কাটিয়ে পর নতুন উদ্যমে চলছে আলোর পাঠশালার কার্যক্রম। কিছু স্বপ্নবাজ কলেজ পড়ুয়া প্রথম এ উদ্যোগ নেন। যারা প্রথম শুরু করেছিলেন তাদের বেশির ভাগ উন্নত জীবনের আশায় পাড়ি জমিয়েছেন ইউরোপ আমেরিকায়। তাতে ক্ষতি নয় বরং এই আলোর পাঠশালার পথচলার সম্ভাবনার দ্বার খুলেছে। যারা দেশের বাইরে গেছেন তারা এটি চালিয়ে নেয়ার জন্য হয়েছেন অর্থের যোগানদাতা।
বর্তমানে আলোর পাঠশালার শিক্ষার্থী সংখ্যা ৬০। তাদের পাঠদানের জন্য রয়েছেন ১৫ জন শিক্ষক। সবাই একদিন পাঠদান করেন না। প্রতি সপ্তাহে অন্তত ৫ জন শিক্ষক পাঠদানের জন্য উপস্থিত থাকেন। বেলা আড়াইটা থেকে ৫টা পর্যন্ত চলে পাঠদান কার্যক্রম। যারা পাঠদান করান তারা বিনিময়ে টাকা পয়সা নেন না বরং সাপ্তাহিক একটা চাঁদা দেন। এই টাকায় প্রতি সপ্তাহে এখানে শিক্ষা নিতে আসা শিশুদের আপ্যায়ন করানো হয়। বিভিন্ন দাতা স্কুল ব্যাগ এবং ড্রেস দিয়ে তাদের অনুপ্রাণিত করেন আলোর পাঠশালাকে এগিয়ে নিতে।
আলোর পাঠশালায় পাঠদানের সাথে জড়িত ইয়াছিনুর রহমান নাঈম জানান, চলতি বছর ৫ জন শিক্ষার্থী পঞ্চম শ্রেণির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে। ১২ জানুয়ারি আলোর পাঠশালা পরিবারের পক্ষ থেকে বিদায় সংবর্ধনা দেয়া হয়। সেইসাথে শিক্ষার্থীদেরকে একটি করে স্কুল ব্যাগ, সার্টিফিকেট, খাতা-কলম এবং স্কুলের একটি করে টি-শার্ট উপহার দেয়া হয়। এছাড়া ইংরেজি নতুন বছর উপলক্ষে সকল শিক্ষার্থীর মাঝে খাতা কলম বিতরণ করা হয়।
ইয়াছিনুর রহমান নাঈম আরও জানান, এ ধারাবাহিকতাকে ধরে রেখে সমাজের ছিন্নমূল এবং সুবিধা বঞ্চিতদের তারা আলোর পথে এগিয়ে নিতে চান। কোনো কিছু পাওয়ার জন্য নয়, সমাজকে কিছু উপহার দেয়াই তাদের লক্ষ্য। তাদের দেখে যদি সারাদেশে এই কার্যক্রম ছড়িয়ে পড়ে তবেই হবে স্বার্থকতা।