চরফ্যাশন (ভোলা) প্রতিনিধি
উচ্চমূল্যের কারণে লাইভ জ্যাকেটের মতো নিরাপত্তা সরঞ্জামাদি ছাড়া নদীতে মাছ শিকার করতে যান জেলেরা। এতে প্রতিবছর ভোলার চরফ্যাশন এলাকার অনেক জেলে নদীতে দূর্যোগ কবলে পড়ে অকালে প্রাণ হারাচ্ছেন। এমন অবস্থায় নদীতে জাল ভাসিয়ে রাখার কাজে ব্যবহৃত প্লাস্টিকের বল দিয়ে তৈরি হচ্ছে লাইভ জ্যাকেট বা লাইফবয়া।
ভোলার মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীতে মাছ ধরার কাজে নিয়োজিত জেলেরা নিজেরাই এই জীবন রক্ষাকারী লাইফবয়া তৈরি করছেন। আর তাদের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন চরফ্যাশন উপজেলা মৎস্য অফিস।
মেঘনা-তেঁতুলিয়া ও বঙ্গোপসাগরবেষ্টিত দেশের সর্ব দক্ষিণের দ্বীপ জেলা ভোলা। এই জেলার প্রায় ২ লাখ মানুষ নদী ও সাগরে মাছ ধরার কাজ করে প্রতিনিয়তই জীবন জীবিকা চালান। এই জেলার সর্ব দক্ষিণের উপজেলা চরফ্যাশন। এটি সমুদ্র উপকূলবর্তী হওয়ায় এখানকার জেলেদের কাছে ঝড় যেন নিত্যসঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জেলেদের জানমালের ক্ষতির পরিমাণ অনেকটাই বেড়ে গেছে। সর্বশেষ ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে জেলার উপকূলীয় উপজেলা মনপুরার নদীতে মাছ ধরতে যাওয়া একটি ট্রলার ডুবে নিখোঁজ হয়েছেন ২০ জেলে। তারা আর কখনো ফিরবেন কিনা তাও জানে না ওই জেলেদের পরিবার পরিজন।
এই ট্রলার থেকে বেঁচে আসা মাঝি জানান, ঝড়ের সময় নদীর মাঝখানে ঝড়ের কবলে পড়ে আমাদের ট্রলার ডুবে যায়। মাছ, জাল, মানুষ সবই হারাতে হয় ঝড়ের কবলে পড়ে।
মেঘনা-তেঁতুলিয়ায় মাছ ধরতে যাওয়া জেলেরা জানান, নদীতে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেদের জীবন রক্ষাকারী জিনিসপত্রের দাম উচ্চমূল্য হওয়ায় সব ট্রলারে লাইভ জ্যাকেটসহ নিরাপত্তা সামগ্রী থাকে না। তাই প্রতি বছরই বাড়ছে নদী সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেদের প্রাণহানি। তবে জেলের মৃত্যুর ঝুঁকি কমাতে সম্প্রতি নদী ও সাগরে জেলদের জাল ভাসিয়ে রাখতে ব্যবহৃত বল দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে এক ধরনের লাইফবয়া। যেখানে একটি লাইভবয়া বা লাইফ জ্যাকেট ক্রয় করতে এক থেকে পাঁচ হাজার টাকা গুনতে হয়; সেখানে এই ভাসমান বল দিয়ে তৈরি লাইভবয়ায় খরচ হয় মাত্র চার থেকে পাঁচশ টাকা।
জেলেরা জানান, ২০ প্লাস্টিক বল দিয়ে একটি লাইট বয়া তৈরি করা যায়। এতে ঝড় বাদলের সময় একটি লাইফবয়ায় দুই থেকে তিনজন জেলে নদীতে অনায়াসে ভেসে থাকতে পারেন।
জেলেদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় কম খরচে লাইটবয়া তৈরির প্রশিক্ষণ দেয় একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা। ওই সংস্থার প্রোগ্রাম অফিসার বাবু অশোক কুমার রায় জানান, এখন জীবন রক্ষার তাগিদে জেলদের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে এই লাইফবয়া তৈরি কৌশল। এ যাবত আমরা ভোলার চরফ্যাশন ও মনপুরা উপকূলীয় এলাকায় মোট ১৬৮ জন জেলেকে এ বিষয়ে প্রশিক্ষক দিয়েছি। সামনে আরও ৭ হাজার জেলেকে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও সহায়তা প্রদান করা হবে।
মনপুরা ক্ষুদ্র জেলে সমিতির সভাপতি নাসির মহাজন জানান, যদি প্লাস্টিকের বল দিয়ে তৈরি এই লাইফবয়ার কৌশল দেশের সব জায়গায় ছড়িয়ে দেওয়া যায় তবে নদীতে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেদের মৃত্যুর হার অনেকটা কমানো যাবে।
নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় লাইফবয়া তৈরির কাজকে স্বাগত জানিয়েছেন চরফ্যাশন উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মারুফ হোসেন মিনার। তিনি বলেন, জেলেদের এ উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। পাশাপাশি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে এর পরিধি কিভাবে আর বাড়ানো যায়, সেই বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে।