মুহাম্মদ আবদুল হামিদ
একুশে পদক প্রাপ্ত জাতীয় প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি প্রখ্যাত সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠক মরহুম মুজীবুর রহমান খাঁ এর ১১৩ তম জন্ম বার্ষিকী আজ।
মুজীবুর রহমান খাঁ ১৯১০ সালের ২৩ অক্টোবর নেত্রকোণা জেলার উলুয়াটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মরহুম ইসমাইল উদ্দিন খাঁ, মাতার নাম মরহুমা নজিরুন্নেসা খাতুন। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়।
তিনি ১৯২৮ সালে নেত্রকোণার আঞ্জুমান হাইস্কুল থেকে প্রবেশিকা পাস করেন। পরবর্তীতে তিনি ১৯৩৪ সালে আনন্দ মোহন কলেজ থেকে বি এ পাস করেন এবং ১৯৩৮ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ ডিগ্রি অর্জন করেন।
ভারতের ২৪ পরগণার হারুয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদে যোগদানের মাধ্যমে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন, পাশাপাশি শুরু করেন সাংবাদিকতা। তিনি ১৯৩৬ সালে কলকাতার সাপ্তাহিক মোহাম্মদীতে সাংবাদিক হিসেবে যোগ দেন। একই বছরের ৩১ অক্টোবর তিনি দৈনিক আজাদে সহ-সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন এবং সেখানে ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত এই পদে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৩৯ সালে তিনি যুগ্মসম্পাদকের পদ লাভ করেন। ১৯৪৮ সালে সৈনিক আজাদ ঢাকায় আসার পর তিনি একই পদে তার দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। পাশাপাশি তিনি ১৯৫৩ সাল থেকে মাসিক মোহাম্মদীর সম্পাদক হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত আজাদ ও মোহাম্মদীতে তার দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৫ সালে তিনি ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক পয়গামের সম্পাদক পদে যোগ দেন এবং ১৯৭১ সাল পর্যন্ত এই দৈনিকের সাথে জড়িত ছিলেন। স্বাধীনতা উত্তর ১৯৭৬ সালে দৈনিক আজাদ পুনঃপ্রকাশিত হলে তিনি এই পত্রিকার সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতির পদ লাভ করেন। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি এই পদে বহাল ছিলেন।
মুজীবুর রহমান খাঁ বিভিন্ন সামাজিক, সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন। তিনি অল বেঙ্গল অ্যান্টিফ্যাসিস্ট রাইটার্স গিল্ডের প্রতিষ্ঠাতা সহ-সভাপতি এবং ১৯৪৪ সালে বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতির সম্পাদকের পদ লাভ করেন। ১৯৪৬ সালে তিনি ভারতের প্রথম বঙ্গীয় গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৫২ সালে মিশর এবং ১৯৫৪ সালে হল্যান্ড সফরে যান। ১৯৫৪ সালের ২০ অক্টোবর ঢাকায় পূর্ব পাকিস্তান প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি এর প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি নির্বাচিত হন এবং ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত এই পদে নিযুক্ত ছিলেন। এছাড়া তিনি ১৯৫৪ সালে গঠিত পূর্ব পাকিস্তান রেনেসাঁ সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা আহবায়ক, পাকিস্তান আর্টস কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক এবং বুলবুল ললিতকলা একাডেমির সহ-সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করেন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি বাংলা একাডেমী, নজরুল একাডেমী, জাতীয় সাহিত্য সংস্কৃতি সংসদ ও আলাপন সাহিত্য গোষ্ঠীর সাথে জড়িত ছিলেন
তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থ সমূহ: বিলাতে প্রথম ভারতীয় (১৯৩৯),পাকিস্তান (১৯৪২), ইকনমিক প্রবলেম অব ইস্ট পাকিস্তান, সাহিত্যের সীমানা (১৯৬৭), সাহিত্য ও সাহিত্যিক (১৯৭১), মহানবী (১৯৮০), সাহিত্যেও বুনিয়াদ, আমাদের ইতিহাস, নয়া তারিখ ইত্যাদি।
তিনি সাহিত্য ও সাংবাদিকতায় অবদানের জন্য তৎকালিন পাকিস্তান সরকার প্রদত্ত সেতারা-ই-কায়েদে আজম, ১৯৮০ সালে বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত সরকারি সম্মাননা একুশে পদক লাভ করেন। মৃত্যুর ৩৫ বছর পর সাংবাদিক, সম্পাদক ও সাহিত্যজন মুজিবুর রহমান খাঁ কে মননশীলতার ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘সৈয়দ আলী আহসান সিএনসি পদক’ (মরণোত্তর) দেওয়া হয়েছ।
তিনি ১৯৮৪ সালের ৫ অক্টোবর ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁকে ঢাকার বনানি কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।
নেত্রকোনার কৃতি সন্তান মরহুম মুজীবুর রহমান খাঁ এর জন্ম বার্ষিকীতে দ্যা মেইল বিডি. কম পরিবারের পক্ষ থেকে গভীর শ্রদ্ধা ও তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।