তাসলিমুল হাসান সিয়াম,গাইবান্ধা প্রতিনিধি: ১১ বছর বয়সী সোহাগ মিয়া পড়াশোনা করেছে স্থানীয় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত। যে হাতে থাকার কথা কলম সেই হাতে এখন উঠেছে হাতুড়ি আর বাটালি। জীর্ণ শীর্ণ ভাঙা শরীর নিয়ে তাই তাকে কাজ করতে হচ্ছে গাইবান্ধা সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের একটি আসবাবপত্র তৈরির কারখানায় । দৈনিক ১৫০ টাকা মজুরিতে সকাল ৮ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত প্রতিদিন কাজ করতে হয় তাকে । সোহাগ জানান ,বাবার সীমিত আয়ে সংসার চলে না তাই পরিবারের আর্থিক চাহিদা পূরণে সে নেমে পড়েছে জীবন সংগ্রামে।
উত্তরের দারিদ্র্য পীড়িত গাইবান্ধায় অসংখ্য শিশু প্রতিদিন সকালে সকালে স্কুল না গিয়ে কাজে যাচ্ছে। অপরিণত বয়সে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করায় এসব শিশু শ্রমিকের ভবিষ্যত এখন অনিশ্চিত।
গাইবান্ধায় ঠিক কত সংখ্যক শিশু শ্রমিক আছে তার হিসেব নেই সরকারি কোন সংস্থার কাছে । তবে এই সংখ্যা যে হাজার অতিক্রম করেছে তা নিশ্চিত। শিশু শ্রমিক বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে শিশু অধিকার নিয়ে কাজ করা কয়েকটি সংগঠনের নেতারা বলছেন পরিবারের অভাব অনটন থাকায় গাইবান্ধার অনেক পরিবারের শিশু বিদ্যালয় না গিয়ে বিভিন্ন কলকারখানায় খুব সামান্য মজুরিতে কাজ করছে ।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো’র ২০২২ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী দেখা যায়, গাইবান্ধা জেলার ৭টি উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি দারিদ্র্য হার ফুলছড়ি উপজেলায় ৪৮ শতাংশ। এ ছাড়া সুন্দরগঞ্জে ৬৭ দশমিক ৬ শতাংশ, গাইবান্ধা সদরে ৪৬ দশমিক ৬ শতাংশ এবং সাঘাটায় ৪৪ দশমিক ৯ শতাংশ দারিদ্র্য হার আছে। সেই সঙ্গে সাদুল্লাপুরে ৪২ দশমিক ৫, গোবিন্দগঞ্জে ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ এবং পলাশবাড়ীতে ৪১ দশমিক ৯ শতাংশ দারিদ্র্য হার রয়েছে।
আর্থিক দৈন্যতার শিকার অনেক পরিবারে বাবা মা তাদের সন্তানদের কাজে পাঠাচ্ছে। গাইবান্ধা পলাশবাড়ী উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের দিনমজুর ফারুক হোসেন বলেন, আমি মানুষের বাড়িতে কাজ করে দৈনিক চারশত টাকা পাই কিন্তু তাও আবার প্রতিদিন কাজ থাকে না । এক মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ দশ দিন কাজ করতে পারি । চার জনের একটি পরিবার চালাতে যেখানে মাসে ১৫ হাজার টাকার প্রয়োজন সেখানে ৪ হাজার টাকা দিয়ে কিভাবে সংসার চলে বাধ্য হয়ে ১৭ বছর বয়সী ছেলেকে কাজে পাঠিয়েছি । সে এখন পড়াশোনার পাশাপাশি অটোভ্যান চালায় ।
গাইবান্ধা শহরের ডিবি রোডে অবস্থিত একটি মোটর বাইক সার্ভিস সেন্টারে কাজ করা শিশু (১১) বলেন, দুই বছর থেকে এখানে কাজ করছি । বাবা মারা যাওয়ায় মা একা সংসার চালাতে পারে না। তাই আমার এক চাচা এই গ্যারেজে কাজের নিয়ে এসেছে । দৈনিক ২০০ থেকে ২৫০ টাকা মজুরি পাই এ দিয়ে আমাদের মা -ছেলের দিন কাটে।
শিশুশ্রম বেশি হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সেভ দ্যা চিলড্রেনস গাইবান্ধা জেলা ইয়ুথ মেন্টর মোঃ মেহেদী হাসান বলেন জেলায় দারিদ্র্যের হার বেশি তা ছাড়া শিক্ষা সম্পর্কে মানুষের সচেতনতাও কম। শিক্ষা যে একটা দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ, তা এখানকার মানুষ বুঝতে চান না। সচেতনতা ও সঠিক শিক্ষার অভাবই এখানকার শিশুশ্রমের অন্যতম কারণ। তিনি আরও বলেন, শিশুশ্রম কমানো সম্ভব যদি পরিবারের কর্তা ব্যক্তিদের স্থানীয়ভাবে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যায়।