তিমির বনিক,মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:
“ফুঁ” দিয়ে বরকত বাড়ানো চক্র টাকা হাতিয়ে নেয়া তারা, অবশেষে ধরা পড়লো।
মৌলভীবাজারের বড়লেখা পৌর শহরে একটি ব্যাংকের বড়লেখা শাখা থেকে ৭৫ হাজার টাকা উত্তোলন করেন কাতারপ্রবাসী ছুয়াব আলীর স্ত্রী ছাবিয়া বেগম। ব্যাংক থেকে বেরিয়ে তিনি পড়েন এক প্রতারকচক্রের ফাঁদে। চক্রটি টাকায় বরকত বাড়ানোর “ফুঁ” দেওয়ার নামে ছাবিয়া বেগমের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয় ৭৩ হাজার টাকা।
২৫ সেপ্টেম্বর রবিবার দুপুরবেলার পুরো এই ঘটনাটি ধরা পড়ে একটি সিসিটিভি ক্যামেরায়।
ওই দিনই প্রবাসীর স্ত্রী ছাবিয়া বেগম বড়লেখা থানায় মামলা করেন। তিনি বড়লেখা উপজেলার সুজানগর ইউপির বড়থল গ্রামের বাসিন্দা। মামলার পরই ঘটনাটি তদন্তে নামে পুলিশ। সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে অবশেষে র্যাবের সহায়তায় প্রতারকচক্রের হোতাসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে বড়লেখা থানার পুলিশ।
রবিবার (১৫ অক্টোবর) রাতে মৌলভীবাজারেরর শ্রীমঙ্গল শহর থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন মৌলভীবাজারেরর কমলগঞ্জ উপজেলার মৃত তুফান আলীর ছেলে ইব্রাহীম (৫৩), তার ছেলে শরীফ মিয়া (৩০), একই উপজেলার মৃত মতি মিয়ার ছেলে শাহাবুদ্দিন (৩২), মৃত কলিম উল্লাহর ছেলে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (৩৮) এবং শ্রীমঙ্গল উপজেলার হাবিব মিয়ার ছেলে জুবায়ের (২৮)।
সূত্র জানিয়েছে, ওই চক্রটি সিলেট বিভাগের বিভিন্ন স্থান থেকে বেশ কয়েকজনের কাছ থেকে বরকত বাড়ানোর ফুঁ দেওয়ার নামে অনেক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। মূলত তারা নারীদের টার্গেট করে বিভিন্ন ব্যাংকের সামনে আগে থেকে ওত পেতে থাকে।
যে নারী তাদের ফাঁদে পা দেয় মূলত তার টাকাই হাতিয়ে নিয়ে তারা সটকে পড়ে। এই চক্রের হোতা হিসেবে নেতৃত্ব দেন ইব্রাহিম।
জানা গেছে, ছাবিয়া বেগম ৭৫ হাজার টাকা উত্তোলন করেন। টাকা উত্তোলনের পর তিনি ব্যাংক থেকে বেরিয়ে বড়লেখা পৌর শহরের লক্ষ্মী মিষ্টি ঘরের সামনে পৌঁছলে ৫০ বছর বয়সী এক ব্যক্তি হঠাৎ ছাবিয়ার মাথা ও মুখে হাত বুলিয়ে বলেন, ‘আমি নামাজ পড়তে আসি।’ এ সময় ছাবিয়া ওই ব্যক্তির পাশ কাটিয়ে একটু এগিয়ে গেলে এক যুবক তার পথ আগলে বলেন, ‘ওই বাবা কী বলেছেন? উনি অনেক বড় পীর।
’পরে ছাবিয়ার পথ আগলে ওই ব্যক্তির নিকট নিয়ে যান। এ সময় ছাবিয়া দেখতে পান ৫০ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি মধ্যবয়স্ক আরো এক ব্যক্তির টাকা হাতে নিয়ে ফুঁ দিয়ে ফেরত দিচ্ছেন। তখন ওই ব্যক্তি ছাবিয়াকে বলেন, ‘তোমার নিকট টাকা আছে। টাকাটা দেও। টাকা পড়ে (ফুঁ) দিই। টাকার বরকত হবে।’ তখন ছাবিয়া তার কাছে থাকা ৭৩ হাজার টাকা ওই ব্যক্তির হাতে দেন। পরে ওই ব্যক্তি টাকাগুলো একটি ব্যাগের মধ্যে নিয়ে ছাবিয়ার ভ্যানিটি ব্যাগে দিয়ে বলেন, ‘পেছন দিকে তাকাবি না।’ সামান্য এগিয়ে যাওয়ার পর ছাবিয়া দেখতে পান তার ব্যাগের মধ্যে টাকা নেই।
সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, বোরকা পরা প্রবাসীর স্ত্রী ছাবিয়া বেগমের পাশে হলুদ টি-শার্ট পরা মূল প্রতারকের সহযোগী এক যুবক দাঁড়িয়ে আছেন। ডান পাশে পাঞ্জাবি পরা মূল প্রতারক টাকায় বরকত বাড়ানোর ফুঁ দিতে দিতে ওই নারীর কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। এ ঘটনায় ছাবিয়া বেগম থানায় মামলা করেন। এরপর বড়লেখা থানার এসআই আতাউর রহমান ঘটনাটি তদন্ত শুরু করেন।
এদিকে গত ৩ অক্টোবর জেলার জুড়ীতে একইভাবে এক প্রবাসীর স্ত্রীর কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় ওই চক্রটি।
বড়লেখা থানার ওসি ইয়ারদৌস হাসান সোমবার বিকেলে বলেন, র্যাবের সহায়তায় রবিবার রাতে শ্রীমঙ্গল এলাকা থেকে বড়লেখা থানা পুলিশ চক্রের হোতা ইব্রাহিমসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। চক্রটি প্রবাসীর কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছে। কিছু টাকাও তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। পাশাপাশি জুড়ী থেকে এক নারীর টাকা হাতিয়ে নেওয়ার কথাও তারা স্বীকার করেছে। সোমবার তাদের আদালতের নির্দেশে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।