ঢাকা, ২৬ আশ্বিন (১১ অক্টোবর):
মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান চলাকালে আইন লঙ্ঘন করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
আজ সচিবালয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান ২০২৩ বাস্তবায়ন উপলক্ষ্যে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী একথা জানান।
এ সময় মন্ত্রী বলেন, মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান চলাকালে যারা আইন লঙ্ঘন করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মা ইলিশ রক্ষায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, আইন অমান্যকারীদের আইনের আওতায় আনা এবং মা ইলিশ সংরক্ষণের সময়ে কোন মাছ ধরা নৌযান যাতে নদী বা সাগরে যেতে না পারে সেজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষার সাথে সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। গতবছর মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান সফলভাবে বাস্তবায়ন হওয়ায় ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধের ২২ দিনে প্রায় ৫২ শতাংশ মা ইলিশ ডিম ছাড়তে সক্ষম হয়েছে।
মন্ত্রী আরো বলেন, বাংলাদেশের কৃষ্টির উল্লেখযোগ্য একটি অংশ জুড়ে রয়েছে ইলিশ মাছ। বিশ্বে উৎপাদিত মোট ইলিশের ৮০ ভাগের ঊর্ধ্বে বাংলাদেশে উৎপাদন হয়। দেশে ইলিশ মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি, গুণগত মানে সমৃদ্ধ করা, বড় আকারের ইলিশ উৎপাদন-এর সব ক্ষেত্রেই বিভিন্ন রকম নিয়মকানুন অনুসরণ করা হয়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে জাটকা নিধন না করা আর মা ইলিশ সংরক্ষণ।
শ ম রেজাউল করিম আরো বলেন, এ বছর ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান পালন করা হবে। অন্যান্য বছরের চেয়ে এ বছর সরকার আরও বেশি তৎপর রয়েছে যাতে মা ইলিশ কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। মা ইলিশ ও জাটকা সংরক্ষণের ফলে দেশে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে, গুণগত মান বেড়েছে, বড় ইলিশ মাছ পাওয়া যাচ্ছে। এ ধারা অব্যাহত রাখার জন্য সরকার এ বছর মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান পালন করতে যাচ্ছে। এর উল্লেখযোগ্য অংশ হিসেবে মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জলপথে, স্থলপথে এমনকি আকাশপথে মা ইলিশ রক্ষায় পর্যবেক্ষণ করবে। যারা এ সময় ইলিশ আহরণ থেকে বিরত থাকবে, তাদের যাতে কষ্ট না হয় সেজন্য সরকার ভিজিএফ সহায়তা দিচ্ছে। ইতোমধ্যে দেশের ইলিশসমৃদ্ধ ৩৭ জেলার ১৫৫ উপজেলায় এ সহায়তা পৌঁছে গেছে। এর আওতায় মোট ৫ লাখ ৫৪ হাজার ৮৮৭টি জেলে পরিবারকে ২৫ কেজি হারে মোট ১৩ হাজার ৮৭২ দশমিক ১৮ মেট্রিক টন খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।
ইলিশ রপ্তানির বিষয়ে এ সময় মন্ত্রী বলেন, ইলিশ এখন কূটনীতির অংশে পরিণত হয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে সীমিত পরিসরে ইলিশ রপ্তানি হয়ে থাকে, যা প্রতিবেশী দুই দেশের বাণিজ্যিকসহ কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। ২০১৯-২০ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত ৫ হাজার ৫৪১ মেট্রিক টন ইলিশ ভারতে রপ্তানি করা হয়েছে, যা থেকে রপ্তানি আয় হয়েছে ৪৩৯ হাজার কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকার ৩ হাজার ৯৫০ মেট্রিক টন ইলিশ ভারতে রপ্তানির অনুমোদন দিয়েছে। এ পর্যন্ত ৬০৯ মেট্রিক টন ইলিশ ভারতে রপ্তানি হয়েছে, যা থেকে রপ্তানি আয় হয়েছে ৬২ লাখ মার্কিন ডলার।
ইলিশের দাম বৃদ্ধি সংক্রান্ত সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ইলিশ উৎপাদনে ব্যয় না থাকলেও ইলিশ আহরণ, সংরক্ষণ ও পরিবহন খাতে ব্যয় রয়েছে। নিষিদ্ধ সময়ে যারা ইলিশ আহরণে বিরত থাকে তাদের জন্য ভিজিএফ সহায়তা, বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাসহ নানাভাবে সরকার সহায়তা করে। তবে ব্যবসায়ীদের অধিক মুনাফা লাভের কারণে ইলিশের দাম যে পর্যায়ে সহনীয় থাকা উচিত, তার চেয়ে বেশি দেখা যায়। এক্ষেত্রে বাজার ব্যবস্থাপনার সাথে সম্পৃক্তদের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে নানাভাবে তাগিদ দেওয়া হচ্ছে এবং দাম নিয়ন্ত্রণে ইতোমধ্যে তারা বেশ কিছু কাজও করেছে। মাছ আহরণের কেন্দ্র থেকে বিপণন পর্যন্ত আরও বেশি কঠোর নজরদারি এবং দেখভাল করা হলে ইলিশের দাম আরও সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা সম্ভব।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নাহিদ রশীদ, অতিরিক্ত সচিব মোঃ আব্দুল কাইয়ূম, মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খ মাহবুবুল হক এ সময় উপস্থিত ছিলেন।