নিজস্ব প্রতিবেদক:
সিট বাণিজ্য, শিক্ষার্থী থেকে হল চার্জ আদায় করে হল প্রশাসনকে না দেয়া, প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে সংগঠনের পক্ষ থেকে ছাত্রীদের দেয়া সাইকেল কবজায় নেয়া, ছাত্রলীগের বিভিন্ন বড় অনুষ্ঠানে মেয়েদের জন্য উপহারের শাড়ি অনুষ্ঠানের পর ফেরত নিয়ে বিক্রি করাসহ বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবীবা আক্তার সাইমুনের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে উঠেছে। এ ব্যাপারে নিশ্চুপ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ও হল প্রশাসন।
জানা যায়, সব শেষ পহেলা সেপ্টেম্বর ছাত্রলীগের ছাত্র সমাবেশের দিন খাবার নিয়ে মারামারির ঘটনায় ভেঙ্গে যাওয়া ফোন কেনার জন্য সেশন অনুযায়ী ৫০/৩০/২০ টাকা করে চাঁদা তুলে আবারও বিতর্কিত হয়েছেন বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবীবা আক্তার সাইমুন। এই ঘটনায় সভাপতি সেলিনা আক্তার শেলীর কর্মী লাকী ইসলাম অহিকে ইতোমধ্যে বহিষ্কার করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এর আগে হল থেকে নিজের অনুসারিদের দিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মোবাইল হাতিয়ে নেন সাইমুন। পরে ফোন কেনার জন্য চাঁদা তুলে তা নিজেই রেখে দেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছিক এক ছাত্রলীগ কর্মী জানান, “কলেজ ক্যাম্পাস থেকে নিয়মিত প্রায় ৬০-৭০ হাজার টাকা তুলেন সাইমুন। কোন মাসে টাকা কম উঠলেই সে মেয়েদের দিয়ে কারও না কারও ফোন হাতিয়ে নিয়ে চাঁদা উঠিয়ে মাসিক হিসাব মিলায়।”
এর আগে অনুসারীদের নিয়ে কলেজের নতুন ভবনের ২০০৭ নম্বর কক্ষে কয়েক ছাত্রীকে নির্যাতন ও জোর করে কয়েকজনের কক্ষ পরিবর্তন করে দেন কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবা আক্তার সাইমুন। এ সময় ভুক্তভোগীরা কক্ষ ছাড়তে না চাইলে তাঁদের বিছানাপত্র ফেলে দেয়া হয়। সেই রাতের ঘটনার বেশ কয়েকটি ভিডিও এবং অডিও রেকর্ড প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।
সাইমুন কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী হিসেবে এত দিনে ছাত্রত্ব শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু তিনি বর্তমানে চতুর্থ বর্ষে অধ্যয়নরত এবং বিভিন্ন বর্ষের কোর্স মানোন্নয়ন পরীক্ষা দিচ্ছেন। ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের অনুসারী ছিলেন সাইমুন। বর্তমানে তিনি সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের সমর্থক বলে জানা গেছে।
সাইমুন নেতা হওয়ার পর থেকেই সিট বাণিজ্যে যুক্ত। প্রশাসনের নাম করে তিনি শিক্ষার্থীদের বার্ষিক হল চার্জের সাড়ে ৫ হাজার টাকা তুলে পকেটে রাখেন। তাঁর কারণে হলের সুপাররা চার্জ চাইলে বিপদে পড়তে হয় ছাত্রীদের। বিষয়টি জানালে সাইমুন শিক্ষকদের কাছ থেকে লুকিয়ে থাকতে পরামর্শ দেন। বাধ্য হয়ে আবারও হল চার্জ দিতে হয় ছাত্রীদের। হোস্টেলের ডাইনিংয়ের বাজার খরচ থেকেও মাসে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা নেন সাইমুন। ডাইনিং ম্যানেজাররা দিতে অস্বীকৃতি জানালে দুর্ব্যবহার ও হুমকি-ধমকি দেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হলে ছাত্রী তোলার সময় সাইমুন প্রত্যেকের কাছ থেকে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা করে নেন। কিন্তু কক্ষে ঢুকিয়ে দিয়ে দায় সারেন। ফলে বাধ্য হয়ে ছাত্রীদের কক্ষের মেঝেতে থাকতে হয়। গত বছর ২৯ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে মেয়েদের ৭৬টি সাইকেল উপহার দেয়া হয়। বিশেষ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বদরুন্নেসা কলেজের আট শিক্ষার্থী সাইকেল পান। কিন্তু সেই সাইকেলগুলো বর্তমানে সাইমুনের কবজায়। চাবি নিজের কাছে রেখেছেন। ইচ্ছা হলে চাবি দেন। তবে সাইকেল ব্যবহার শেষে আবার তাঁকে চাবি ফেরত দিতে হয়।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের চারজন করে আট মেয়ে সাইকেল পান। কৌশলে তাঁদের কাছ থেকে সাইকেল কবজায় নেন সাইমুন। এর পর সেগুলো বিক্রি করার প্রস্তাব দেন সভাপতিকে। তবে সভাপতি সম্মতি না দেয়ায় সাইকেলগুলো বিক্রি করতে পারেননি তিনি। এ ছাড়া সাইকেল দেওয়ার সময় প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ৪ হাজার টাকা করে দেয়া হয়। সেখান থেকে ২ হাজার টাকা করে সাইমুন নিয়েছেন। সাইমুনের বিরুদ্ধে সংগঠন থেকে বিভিন্ন সময় দেয়া উপহারের শাড়ি অনুষ্ঠান শেষে ছাত্রীদের কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে বিক্রি করে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। একবার কয়েকজন শাড়ি দিতে না চাইলে তাঁদের কান ধরিয়ে দাঁড় করিয়ে রেখেছিলেন তিনি।
এ ব্যাপারে কথা বলতে বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবীবা আক্তার সাইমুনের সঙ্গে বারবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।