স্বীকৃতি বিশ্বাসঃ
আজ হিন্দু সম্প্রদায়ের আরাধ্য ভগবান শ্রী কৃষ্ণের শুভ জন্মাষ্টমী। ভগবান শ্রী কৃষ্ণের জন্মতিথি।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস সনাতন ধর্মের প্রবর্তক ও মহাবতার পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ৫ হাজার ২শত ৫০ বছর আগে দ্বাপর যুগে ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে শ্রীকৃষ্ণ স্বর্গ থেকে পৃথিবীতে আবির্ভূত হন।
হিন্দু পঞ্জিকা মতে, সৌর ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে যখন রোহিণী নক্ষত্রের প্রাধান্য হয়, তখন জন্মাষ্টমী পালিত হয়। উৎসবটি গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে প্রতি বছর মধ্য-আগস্ট থেকে মধ্য-সেপ্টেম্বরের মধ্যে কোনো এক সময়ে পড়ে।
এবছর জন্মাষ্টমী তিথির বিস্তার ২ দিন ধরে। তাই ভক্তদের মনে সংশয় কবে তাঁরা রাখবেন জন্মাষ্টমীর উপবাস । পঞ্জিকা অনুসারে ৬ ও ৭ সেপ্টেম্বর পড়েছে জন্মাষ্টমী তিথি। ভাদ্র মাসের কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী তিথি শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ সময় অনুযায়ী ৬ সেপ্টেম্বর বুধবার বিকাল ৪টা ০৭ মিনিটে। অষ্টমী তিথি শেষ হবে ৭ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা ৪৪ মিনিটে ।
পুরাণ অনুসারে, রাত্রি বারোটায় রোহিণী নক্ষত্রে শ্রীকৃষ্ণের জন্ম হয়েছিল। এই বিশ্বাস অনুসারে, ৬ সেপ্টেম্বর গৃহস্থরা জন্মাষ্টমী ব্রত পালন করতে পারেন। বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের নিয়ম অনুসারে তাঁরা শ্রী কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী পালন করবেন ৭ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার ।
যেহেতু জন্মাষ্টমীর পুজো রাতে হয়, তাই ৬ সেপ্টেম্বর বুধবারই অনেকে বেছে নিচ্ছেন কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী পালনের জন্য। জন্মাষ্টমী পুজোর শুভ ক্ষণের কথা যদি বলা হয় তবে তা মাঝরাত ১২টা ৩২ মিনিটে শুরু হবে এবং চলবে ১টা ১৮ মিনিট পর্যন্ত।
রোহিণী নক্ষত্রের সূচনা- ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ বুধবার সকাল ১০টা ২০ মিনিটে। রোহিণী নক্ষত্র শেষ হবে ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা ৫৫ মিনিটে।
জন্মাষ্টমীর শুভ মুহূর্ত : শ্রী কৃষ্ণ পূজার সময় – মধ্যরাত ১২.৩২ – মধ্যরাত ১টা ১৮ মিনিট (৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ বৃহস্পতিবার ) পূজার সময়কাল – ৪৬ মিনিট।
শাস্ত্রীয় বিবরণ ও জ্যোতিষ গণনার ভিত্তিতে এবং লোকবিশ্বাস অনুযায়ী কৃষ্ণের জন্ম হয়েছিল খ্রীষ্টপূর্ব ৩২২৮ সালে ১৮ অথবা ২১ জুলাই মথুরা নগরীতে অত্যাচারী রাজা কংসের কারাগারে। তিনি বসুদেব ও দেবকীর অষ্টম পুত্র। তার পিতামাতা উভয়ের যাদববংশীয়। দেবকীর দাদা কংস, তাদের পিতা উগ্রসেনকে বন্দী করে সিংহাসনে আরোহণ করেন। একটি দৈববাণীর মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন যে,দেবকীর অষ্টম গর্ভের সন্তানের হাতে তার মৃত্যু হবে। এই কথা শুনে তিনি দেবকী ও বসুদেবকে কারারুদ্ধ করেন এবং তাদের প্রথম ছয় পুত্রকে হত্যা করেন। দেবকী তার সপ্তম গর্ভ রোহিণীকে প্রদান করলে
বলরামের জন্ম হয়। এরপরই কৃষ্ণ জন্মগ্রহণ করেন। কৃষ্ণের জীবন বিপন্ন জেনে জন্মরাত্রেই দৈবসহায়তায় কারাগার থেকে নিষ্ক্রান্ত হয়ে বসুদেব তাকে গোকুলে তার পালক মাতাপিতা যশোদা ও নন্দের কাছে রেখে আসেন। কৃষ্ণ ছাড়া বসুদেবের আরও দুই সন্তানের প্রাণরক্ষা হয়েছিল। প্রথমজন বলরাম (যিনি বসুদেবের প্রথমা স্ত্রী রোহিণীর গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন) এবং সুভদ্রা (বসুদেব ও রোহিণীর কন্যা, যিনি বলরাম ও কৃষ্ণের অনেক পরে জন্মগ্রহণ করেন)।ঘোর অমানিশার অন্ধকারে ভগবান শ্রী কৃষ্ণ জন্মগ্রহণ করায় কৃষ্ণের গায়ের রং শ্যামল। অন্য অর্থে ধূসর, পীত, কিংবা কালো। সংস্কৃত কৃষ্ণ শব্দটির অর্থ কালো, ঘন বা ঘন-নীল। কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তি বোঝাতে এই শব্দটি ব্যবহৃত হয়।
সমগ্র ভারতবর্ষে যখন হানাহানি, রক্তপাত, সংঘর্ষ, রাজ্যলোভে রাজন্যবর্গের মধ্যে যুদ্ধবিগ্রহ তথা পৃথিবী যখন মর্মাহত, পাশে অবনত, ঠিক সেই সময় সৃষ্টি স্থিতি-প্রলয়ের যুগ সন্ধিক্ষণে ভগবান শ্রী কৃষ্ণের আবির্ভাব অনিবার্য হয়ে পড়ে। অত্যাচারী ও দুর্জনের বিরুদ্ধে শান্তিপ্রিয় সাধুজনের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কংসের কারাগারে জন্ম নেন তিনি। শিষ্টের পালন ও দুষ্টের দমনে তিনি ব্রতী ছিলেন। সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তাই ভগবানের আসনে অধিষ্ঠিত শ্রীকৃষ্ণ।
কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী ব্রতের তাৎপর্যঃ পৃথিবীতে কংসের ক্রমবর্ধমান অত্যাচারের অবসান এবং ধর্ম প্রতিষ্ঠার জন্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্ম হয়েছিল। এইদিনটিই জন্মাষ্টমী হিসেবে পালিত। কৃষ্ণকে শ্রী হরি বিষ্ণুর সবচেয়ে অপরূপ অবতার বলে মনে করা হয়। এমনটা বিশ্বাস করা হয় যে , জন্মাষ্টমীতে কৃষ্ণের পুজো করলে অকাল মৃত্যুর ভয় থাকে না এবং পরকালে স্বর্গে স্থান হয়। শ্রীকৃষ্ণের আরাধনায় জগতের সকল সুখ লাভ হয়। সন্তানের মঙ্গলের জন্য এই দিনে কৃষ্ণ পুজো করেন অনেকে। বিশ্বাস করা হয়, যাঁরা জন্মাষ্টমীতে বালগোপালকে মাখন, মিছরি, নিবেদন করা হয়।
শ্রীকৃষ্ণের অপ্রাকৃত লীলাকে কেন্দ্র করেই জন্মাষ্টমী উৎসব পালিত হয়। দেশের হিন্দু সম্প্রদায় ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে জন্মাষ্টমী পালন করেন।