তিমির বনিক,মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:
মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় পরকীয়ায় আসক্ত হয়ে প্রথম স্ত্রীর অনুমতি বিহীন দ্বিতীয় বিয়ে করার অভিযোগে পৌর কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন তারই স্ত্রী। গত ১৭ আগস্ট কুলাউড়া পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তানভীর আহমদ শাওনের (৫০) বিরুদ্ধে মামলাটি করেন স্ত্রী ইয়াছমিন সুলতানা চৌধুরী (৪৪)। মামলা দায়েরের পর থেকে কাউন্সিলর শাওন পলাতক রয়েছেন।
এ ছাড়া এই মামলায় আসামি করা হয়েছে সিলেটের বিয়ানীবাজারের চক্রবানী গ্রামের বাসিন্দা মৃত ময়ুর আলীর মেয়ে ও কাতার প্রবাসী আবু শাহজানের স্ত্রী ছায়েরা আক্তারকে (৩৮)। সায়রা বর্তমানে শাওনের দ্বিতীয় স্ত্রী। শাওন পৌর এলাকার উত্তর মাগুরা এলাকার বাসিন্দা মৃত খলিল উদ্দিনের ছেলে। তিনি কুলাউড়া পৌরসভার বর্তমান প্যানেল মেয়রের দায়িত্বে।
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ২০০৫ সালের ২৬ আগস্ট কুলাউড়া পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শাওনের সঙ্গে বিয়ে হয় হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট থানার নরপতি গ্রামের বাসিন্দা মৃত আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরীর মেয়ে ইয়াছমিন সুলতানা চৌধুরীর। তাদের ২ মেয়ে ও ১ ছেলেসন্তান রয়েছে। ঘর নির্মাণের জন্য শাওন তার স্ত্রী ইয়াছমিনের কাছ থেকে যৌতুক হিসেবে ৬০ লাখ টাকা নেন। এরপরও বিভিন্ন অজুহাতে শ্বশুরবাড়ি থেকে টাকা এনে দেওয়ার জন্য স্ত্রীকে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করতেন শাওন। কয়েক বছর ধরে পার্শ্ববর্তী উপজেলা কমলগঞ্জের শমশেরনগর বিএএফ শাহিন স্কুলে সন্তানদের পড়াশোনার জন্য ভাড়া বাসা নিয়ে সেখানে বসবাস শুরু করেন। শাওনের নিজস্ব বাসায় ক্যাবল নেটওয়ার্কের ব্যবসা রয়েছে। সেই ব্যবসা পরিচালনায় শাওন অফিস সহকারী হিসেবে নিয়োগ দেন ছায়েরা আক্তারকে। স্ত্রী ও সন্তানরা বাসায় না থাকার সুযোগে ছায়েরার সঙ্গে পরকীয়া প্রেমে লিপ্ত হয়ে পড়েন শাওন। পরে বিষয়টি শাওনের স্ত্রী জানতে পারলে উল্টো যৌতুক দাবি করেন এবং সেটা না দিলে ছায়েরাকে বিয়ে করে তাকে (ইয়াছমিনকে) তালাক দিবেন। এমন হুমকি দিতে থাকেন। সম্প্রতি ছায়েরাকে বিয়ে করে ইয়াছমিনকে বাসা থেকে বের করে দেন শাওন।
গত ১৩ আগস্ট রাত সাড়ে ৯টায় ইয়াছমিন সন্তানদের নিয়ে শাওনের বাসায় প্রবেশ করতে চাইলে বাধা দেন। পরে তিনি এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে সন্তানদের নিয়ে বাসায় ঢুকেন। শাওন ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী ছায়েরা মিলে ইয়াছমিনকে ঘরে আটকে নির্যাতন করেন। ১৭ আগস্ট বৃহস্পতিবার ইয়াছমিনের মা এসে তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসা করান।
এ বিষয়ে ইয়াছমিন সুলতানা চৌধুরী বলেন, ‘আমি সন্তানদের পড়াশোনার জন্য শমসেরনগরে থাকতাম। সেই সুযোগে ছায়েরার সঙ্গে পরকীয়ায় আসক্ত হয়ে পড়েন শাওন। আমার অনুমতি ছাড়া শাওন দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন। একমাস পূর্বে আমার বাসার তালা ভেঙে ওই মহিলাকে নিয়ে বাসায় জোরপূর্বক প্রবেশ করেন এবং আমাকে বের করে দেন।’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত তানভীর আহমদ শাওনের মোবাইলে বার বার যোগাযোগ করলেও মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এবিষয়ে কুলাউড়া থানার ওসি মো. আব্দুছ ছালেক বলেন, যৌতুক ও নির্যাতন প্রতিরোধ আইনে মামলা হয়েছে শাওনের বিরুদ্ধে। শাওন ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী পলাতক রয়েছেন। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।