ইয়েমেনে আল–কায়েদার হাতে অপহরণের দেড় বছর পর জাতিসংঘের কর্মকর্তা লে. কর্নেল (অব.) সুফিউল আনাম দেশে ফিরেছেন।
বুধবার বিকাল ৬টার দিকে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে তিনি রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন।
দেড় বছর পর ইয়েমেনে আল–কায়েদার জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হয়ে দেশে ফিরেছেন জাতিসংঘের কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সুফিউল আনাম। এমিরেটস এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে আজ বুধবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন তিনি।
ঢাকায় নেমে সাংবাদিকদের কাছে জিম্মিদশার বিবরণ দিয়েছেন সুফিউল আনাম। তিনি বলেছেন, ‘ভয়ংকর সন্ত্রাসীরা অপহরণ করার পর জীবন নিয়ে দেশে ফিরতে পারব, এটা ভাবতেও পারিনি। গত ১৮ মাস অত্যন্ত বিপৎসংকুল পরিবেশের মধ্যে ছিলাম। মনে হয়েছিল, যেকোনো মুহূর্তে সন্ত্রাসীরা আমাকে হত্যা করবে।’
সুফিউল আনাম ইয়েমেনের রাজধানী এডেনে জাতিসংঘের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা বিভাগের ফিল্ড সিকিউরিটি কো-অর্ডিনেশন অফিসার (প্রধান) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গত বছর ১১ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে কাজ করার সময় তিনি অপহৃত হন। ওই দিন জাতিসংঘের একটি ফিল্ড মিশন শেষে এডেনে ফিরছিলেন সুফিউল আনামসহ জাতিসংঘের আরও চার কর্মী। সে সময় ইয়েমেনের মুদিয়াহ প্রদেশ থেকে জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার সদস্যরা তাঁকে অপহরণ করে। সুফিউল আনামের মুক্তিপণ হিসেবে ৩০ লাখ ডলার দাবি করেছিল জঙ্গিগোষ্ঠীর সদস্যরা।
সুফিউল আনামের খোঁজে ইয়েমেন যায় বাংলাদেশের পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল। গতকাল তাঁকে উদ্ধার করে সংযুক্ত আরব আমিরাতে নেওয়া হয়। সেখান থেকে আজ দেশে ফিরলেন তিনি।
বিমানবন্দরে সুফিউল আনাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘১ বছর ৬ মাস আগে পেশাগত দায়িত্ব পালন শেষে ফেরার সময় আমাকে অপহরণ করা হয়। ইয়ামেনের চারজন সহযোগী ছিলেন। অবর্ণনীয় দিন কেটেছে। প্রতিটি দিনে ছিল মৃত্যুর ভয়। ভাষায় বর্ণনা করা যাবে না। তা কেবল সিনেমায় দেখা যায়।’
সন্ত্রাসীরা তাঁদের পাহাড়ে ও মরুভূমিতে রেখেছিল জানিয়ে সুফিউল বলেন, ‘সারাক্ষণ আমার চোখ বাঁধা ছিল। সন্ত্রাসীরা ১৮ বার আমার স্থান পরিবর্তন করে। এই সময় তারা আমাকে দশটি জায়গায় রেখেছিল। তবে ভাগ্য ভালো ছিল তারা নির্যাতন করেনি।’
অপহরণকারীদের টাকা শেষ হয়ে গেলে ভালোভাবে খাবার দিত না বলে জানান সুফিউল আনাম। তাঁদের কেন নিশানা করা হলো—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘে কাজ করি বলে টার্গেট করেছিল বলে মনে হয়। তারা ভিডিও করেছিল তাদের দাবিদাওয়া নিয়ে। নিরাপত্তার স্বার্থে কিছু বলতে চাইছি না। মুক্তি পাওয়ার পর গতকালই প্রথম পরিবারের সঙ্গে কথা হয়েছে।’
সুফিউল আনাম বলেন, ‘ভেবেছিলাম, সবাই আমাকে ভুলে গেছে। কিন্তু এনএসআইয়ের সদস্যদের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর মনে হলো আমাকে ভোলেননি তাঁরা।’
তাঁকে উদ্ধার করে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান সুফিউল আনাম। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দার (এনএসআই) কর্মকর্তাদের প্রতি। তিনি বলেন, ‘তাঁদের এই দায়িত্বপূর্ণতা ভুলব না।’ সাবেক সামরিক কর্মকর্তা হিসেবে দেশের প্রয়োজনে চ্যালেঞ্জ নেবেন বলেও উল্লেখ করেন সুফিউল আনাম।
এ সময় এনএসআইয়ের পরিচালক ইমরুল মাহমুদ বলেন, ‘স্যারকে উদ্ধার করার বিষয়টি ছিল দীর্ঘ প্রক্রিয়া। দেড় বছরের চেষ্টায় এই সফলতা এসেছে। অপহরণকারীরা ৩০ লাখ মার্কিন ডলার চেয়েছিল, কিন্তু কোনো টাকাপয়সা দিতে হয়নি।’
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন এনএসআইয়ের অতিরিক্ত পরিচালক বদরুল হাসান চৌধুরী ও উপপরিচালক বদরুল হাসান বিদ্যুৎ।