নাজমুল হাসান,মাদারীপুর প্রতিনিধি:
ভালোবাসা ও মমতা মাখানো নিপুন হাতে কারুকাজের মাধ্যমে মাটি দিয়ে তৈরি করে থাকেন নানা তৈজসপত্র। তাদের জীবন জীবিকার একমাত্র হাতিয়ার হলো মাটি। কিন্তু কালের বিবর্তনে তাদের ভালোবাসা ও মমতা দিয়ে নিপুন হাতে মাটির তৈরি তৈজসপত্র এখন বিলুপ্তির পথে। দিন যতই যাচ্ছে, ততই বাড়ছে আধুনিকতা। আর এই আধুনিকতা বাড়ার সাথে সাথে হারিয়ে যাচ্ছে মাটির তৈরি শিল্পপণ্যগুলো। এক সময় মাটির তৈরি তৈজসপত্রের প্রচুর ব্যবহার ছিল।
সেই তৈজসত্রের স্থান দখল করে নিয়েছে এ্যালুমিনিয়াম ও পাস্টিকের তৈরি তৈজসপত্র। এসবের দাম বেশি হলেও অধিক টেকসই। তাই টাকা বেশি হলেও এ্যালুমিনিয়াম ও পাস্টিকের তৈরি তৈজসপত্রই কিনে থাকে সাধারণ মানুষ। কাঁচ,প্লাষ্টিক আর মেলামাইনের ভিড়ে এখন মাটির তৈরি ঐ জিনিসপত্র গুলো প্রতিযোগীতায় টিকে থাকতে পাড়ছে না। অন্য কোন পেশা এর কাজ কর্ম জানলে এই পেশা ছেড়ে দিতেন বলে জানান তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাদারীপুরের কালকিনি থানা সংলগ্ন পালপাড়া,ডাসার উপজেলা ও গৌরনদী উপজেলার সীমান্তবর্তি বাকাই পালপাড়া এলাকায় প্রায় ১০০ টি কুমার পরিবার বসবাস করছে। এর মধ্যে ৯০টি পরিবার সরাসরি মৃৎ শিল্পের উপর নির্ভশীল। দিন রাত একাকার করে মাটি দিয়ে তৈরি করছে বিভিন্ন মৃৎ পণ্য। কিন্তু সঠিক দাম না পাওয়ায় আর বর্তমান অবস্থায় কাজ করতে হিমশিম খাচ্ছে এ সকল কারিগররা। বর্তমানে গ্রাম অঞ্চলের বিভিন্ন উৎসব, মেলায় তৈরি খেলনা পুতুল ছাড়া অন্য কোন মৃৎ শিল্পের গ্রাহক নেই বললেই চলে।
বর্তমানে অ্যালুমিনিয়াম, পাস্টিক ও স্টিলের জিনিসপত্রের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে না পেরে মৃৎশিল্প আজ বিলুপ্তির মুখে পড়েছে। ফলে এ পেশায় জড়িত বিশেষ করে এটাই যাদের জীবিকার একমাত্র অবলম্বন তাদের জীবনযাপন একেবারেই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মৃৎ শিল্পীরা মাটি দিয়ে তৈরি করছেন পুতুল, ফুলের টব, হাঁড়ি পাতিল,কলসি, ঝালা,ঝাজর, হাজ,হড়া,দধির পাতিল ও ব্যাংক ঘট সহ বিভিন্ন নৃত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। পরে সেগুলোকে বিভিন্ন রংয়ে সাজিয়ে তারা শহরের দোকান এবং বাসা বাড়িতে বিক্রয় করে থাকেন। বর্তমানে দেশের সব জায়গায়ই অ্যালুমিনিয়াম,প্লাস্টিক ও স্টিলের তৈরির ব্যবহার বেশী হওয়ায় মাটির তৈরি পন্যের বিক্রয় খুবই কম।
আলাপকালে নিমাই পাল নামের এক ব্যক্তি বলেন, বংশীয়ভাবে প্রায় ২০০ বছর আগের থেকে আমরা এ কাজের সাথে জড়িত।আগে এ সমস্ত মাটির তৈরি জিসিপত্র বিভিন্ন হাট বাজারে নিয়ে গেলে মুহুর্তের মধ্যে বেচা হয়ে যেতো।এখন সারাদিন বসে থেকে এক হাজার টাকাও বিক্রয় হয় না।
আগের চেয়ে এখন খরচও বেশী, কিন্তু মুল্য সে হিসেবে পাই না। ১০০ টাকা দিয়ে যে মাটি কিনতাম তা এখন দুই হাজার টাকায়ও পাই না। আমাদের জীবন জীবিকার এক মাত্র হাতিয়ার মাটি। অন্য কোন কাজ কর্ম জানিনা,জানলে এই পেশা ছেড়ে দিতাম। সরকার যদি আমাদের একটু সাহায্যে সহযোগীতা করতো,তাহলে আমাদের সংসারও চলতো আবার এই পেশাটাও ধরে রাখতে পারতাম।