মঙ্গলবার, এপ্রিল ১৬, ২০২৪

সামাজিক সচেতনতার অভাবে গাইবান্ধায় বেড়েছে আত্নহত্যার প্রবণতা 

যা যা মিস করেছেন

তাসলিমুল হাসান সিয়াম, গাইবান্ধা প্রতিনিধি : সুন্দর এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে নিজের জীবনকে স্বেচ্ছায় বলি দেওয়া কোনো সাধারণ বিষয় নয়। তারপরও আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। নারী-পুরুষ, তরুণ-বৃদ্ধ সব বয়সের মানুষ আত্মহননের তালিকায়। সবচেয়ে ভীতিকর তথ্য হলো, অনেকে আবার চুপিসারে নয়, ফেসবুক লাইভে এসে সবাইকে জানিয়ে আত্মহননের পথে যাচ্ছে ।

সম্প্রতি গাইবান্ধায় বেড়েছে আত্নহত্যার প্রবণতা । প্রায় প্রতি মাসেই জেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘটছে অনাকাঙ্ক্ষিত এসব মৃত্যুর ঘটনা । বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও অনলাইন নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত সংবাদ বিশ্লেষণে দেখা যায় গাইবান্ধা জেলায় ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত মোট চারটি আত্নহত্যার ঘটনা ঘটেছে ।যদিও বাস্তবে সংখ্যাটি আরো বেশি হতে পারে ।কারন অনেক সময় সব আত্নহত্যার খবর আইনি জটিলতার ভয়ে গনমাধ্যম পর্যন্ত আসে না ।

এর মধ্যে গত ৮ এপ্রিল শনিবার বিকেলে পারিবারিক কলহের জেরে ফেসবুক লাইভে এসে চলন্ত ট্রেনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন ২২ বছর বয়সী শাকিল মিয়া নামের সদ্য বিবাহিত এক যুবক । গাইবান্ধা সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের ভগবান পুর গ্রামের ঐ যুবক প্রতিবেশী এক মেয়েকে বিয়ে করায় পরিবারে নানা রকম অশান্তি সৃষ্টি হয় ।

শাকিলের বড় ভাই স্বপন মিয়া অভিযোগ করে বলেন প্রায় এক মাস আগে প্রতিবেশী শাহিন মিয়ার মেয়ের সঙ্গে আমার ভাইয়ের বিয়ে হয় । কিন্তু বিয়ের পর পরেই শশুর বাড়ির লোকজন আমার ভাইয়ের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনসহ হত্যার হুমকি দেয় । এই অপমান ও নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আমার ভাই আত্নহত্যার পথ বেছে নেয় ।

এর আগে গত ২৯ মার্চ সাঘাটা উপজেলায় শিলা আক্তার (১৬) নামের এক কিশোরী পারিবারিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেন । স্থানীয়রা জানান কামালের পাড়া ইউনিয়নের ওসমানের পাড়া গ্রামের আব্দুল বারীর ছেলে আপেল মাহমুদের সাথে কচুয়া ইউনিয়নের চন্দনপাট গামের শহিদুল ইসলামের স্কুল পড়ুয়া মেয়ে শিলা আক্তারের সাথে তিন মাস আগে বিয়ে হয়। বিয়েতে শিলা রাজি না থাকলেও পরিবারের চাপে সম্মতি হতে বাধ্য হয়। অল্প বয়সে বিয়ের ফলে সংসারে বিভিন্ন কাজকর্ম নিয়ে পারিবারিক দ্বন্দের ফলে কিছু দিন আগে তালাক হয় শিলার। তালাকের পর থেকে বাবার বাড়ি থেকেও মানসিক নির্যাতন শুরু হয় । এসব নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করে শিলা।

মূলত আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে বেকারত্ব, দরিদ্র্যতা, গৃহহীনতা এবং বৈষম্যতাজনিত উপাদানগুলো আত্মহত্যায় উৎসাহিত করে থাকে।তবে বর্তমানে প্রেমে ব্যর্থতা , পারিবারিক কলহ এবং ঋণের বোঝা সইতে না পেরে আত্মহত্যা করার প্রবণতা বেড়ে চলেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা: কৃষ্ণ রায় মুঠোফোনে জানান , আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি আত্মহত্যাকে মানসিক অসুস্থতাসংক্রান্ত বিষয় হিসেবে চিহ্নিত করেছে। উপযুক্ত চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণের মাধ্যমে এ ব্যাধি থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। যখন একজন ব্যক্তি আত্মহত্যার বিষয়ে ব্যাপক চিন্তাভাবনা শুরু করেন, তখনই তাকে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে। মনোবিদরা বলেন, যখন ব্যক্তি নিজেকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে তা জানামাত্রই সংশ্লিষ্টদের উচিত হবে কাউকে জানানো। ভুক্তভোগী ব্যক্তি ইতোমধ্যেই যদি সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন যে কীভাবে আত্মহত্যা করবেন, তা সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

আত্নহত্যা প্রতিরোধ করতে প্রয়োজন সামাজিক সচেতনতা জানিয়ে পলাশবাড়ী উপজেলার হরিণাবাড়ী ডিগ্রী কলেজের মনোবিজ্ঞানের শিক্ষক মোঃ রেজওয়ানুল হক বলেন সব ধর্মেই আত্নহত্যা নিষিদ্ধ ও গর্হিত কাজ । আমাদের ভিতরে নৈতিক বোধ জাগ্রত করতে হবে পরিবার বা রাষ্ট্রের যেকোন সমস্যা আমাদের জীবনের গতি বাধাগ্রস্ত করতে পারে কিন্তু মৃত্যু এর কোন স্থায়ী সমাধান হতে পারে না । যারা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত তাদের জন্য বিশেষ কাউন্সিলিং প্রতিষ্ঠান প্রতিটি জেলায় সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে গড়ে তোলা উচিত ।

অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।

প্রিয় পাঠক অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্যামেইলবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন themailbdjobs@gmail.com ঠিকানায়।

More articles

সর্বশেষ

x  Powerful Protection for WordPress, from Shield Security
This Site Is Protected By
Shield Security