সোমবার, এপ্রিল ২২, ২০২৪

তীব্র সমালোচনার পর অবশেষে সারাদেশসহ যশোর বোর্ডে আগামীকাল এইচএসসির ফল প্রকাশ

যা যা মিস করেছেন

রাত পোহালেই এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করা হবে। যশোর বোর্ডের ১ লাখ ৭০৯ জন পরীক্ষার্থী অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। নানা অঘটনের মধ্যে অনুষ্ঠিত যশোর বোর্ডের এবারের এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল নিয়েও শিক্ষা বিভাগে নানা আলোচনা রয়েছে। এদিন ১২ টার পর ফলাফল প্রকাশ করা হবে। যশোর বোর্ডের এইচএসসির ফলাফল অনলাইন, মোবাইল ফোনের এসএমএস ও নিজ কলেজ থেকে ফলাফল সংগ্রহ করতে পারবে পরীক্ষার্থীরা। অনলাইন ও মোবাইল ফোনের এসএমএসে দেখা যাবে মার্কশিটসহ প্রাপ্ত নম্বরও।
শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, করোনার কারণে ২০২০ সালে কোনো পরীক্ষা হয়নি। সকলকে অটো পাস দেয়া হয়। এরপর ২০২১ সালে পরীক্ষা গ্রহণ করা হয় মাত্র তিনটি বিষয়ে। ওই বছর বাংলা, ইংরেজি, আইসিটি এবং চতুর্থ বিষয়ের পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়নি। সর্বশেষ, ২০২২ সালে আইসিটি বাদে সকল বিষয়ে পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। দীর্ঘদিন ঠিকমতো ক্লাস করতে না পারা শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করা হবে আগামীকাল। এ কারণে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ রয়েছে।
ইতিমধ্যে এইচএসসি পরীক্ষার পাসের হার নিয়ে দুশ্চিন্তার কথা বলছেন শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্টরা। যদিও বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারের গাইড লাইন মেনে ক্লাস ও পরীক্ষা গ্রহণের বিষয়ে সর্বাত্মক চেষ্টা করা হয়েছে। এ কারণে ভালো ফলের প্রত্যাশা করছেন তারা।
এদিকে, এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় যশোর বোর্ডের এক সেটার ও চার মডারেটরের কর্মকান্ডে দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। ঢাকা বোর্ডের বাংলা প্রথমপত্রের সৃজনশীল প্রশ্নের একটি অনুচ্ছেদে সাম্প্রদায়িক উস্কানির অভিযোগ ওঠে।
সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক প্রশ্নপত্রটি তৈরি করেন ঝিনাইদহের মহেশপুরের ডা.সাইফুল ইসলাম ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক যশোর শিক্ষাবোর্ডের সেটার প্রশান্ত কুমার পাল। তার তৈরি বাংলা প্রথমপত্রের বিতর্কিত ওই প্রশ্নপত্রটি মডারেশন করেন এই বোর্ডেরই চারজন মডারেটর। এই চার মডারেটর ছিলেন, নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের সহযোগী অধ্যাপক সৈয়দ তাজউদ্দিন শাওন, সাতক্ষীরা সরকারি মহিলা কলেজের সহযোগী অধ্যাপক শফিকুর রহমান, নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের সহকারী অধ্যাপক শ্যামল কুমার ঘোষ ও কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা আদর্শ কলেজের সহকারী অধ্যাপক রেজাউল করিম।
এইচএসসি পরীক্ষায় দেশব্যাপী তোলপাড় করা এই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্দেশ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করে যশোর শিক্ষাবোর্ড। তিন সদস্যের ওই তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয় যশোর শিক্ষাবোর্ডের কলেজ পরিদর্শক কেএম রব্বানীকে। অপর দু’ সদস্য ছিলেন বিদ্যালয় পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম ও উপ কলেজ পরিদর্শক মদন মোহন দাস। পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয় কমিটিকে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর জড়িতদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করা হবে বলে কর্মকর্তারা তখন জানিয়েছিলেন।
এইচএসসির বাংলা প্রথমপত্রের প্রশ্নপত্রে যে অনুচ্ছেদটি লেখা হয় তা ছিল, “নেপাল ও গোপাল দুই ভাই। জমি নিয়ে বিরোধ তাদের দীর্ঘদিন। শেষমেষ ভাইকে শাস্তি দিতে আবদুল নামের এক মুসলমানের কাছে তার ভাগের জমি বেঁচে দেয় নেপাল। আবদুল সেখানে বাড়ি বানিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। ঈদুল আজহার সময় সে নেপালের বাড়ির সামনে গরু কুরবানি দেয়। এই ঘটনায় নেপালের মন ভেঙে যায়। কিছুদিন পর কাউকে কিছু না বলে সপরিবারে ভারতে চলে যায় সে।”
পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার পর বিতর্কিত অনুচ্ছেদটি অনেকের নজরে আসে। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। বহু মানুষ এ ঘটনায় ধিক্কার জানান। তারা ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তোলেন।
তীব্র সমালোচনার মধ্যে শিক্ষাবোর্ডের তৎকালীন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর মাধব চন্দ্র রুদ্র বলেছিলেন, ‘প্রশ্নপত্র তৈরিতে বোর্ডের কর্মকর্তাদের সামান্যতম কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। এমনকি তারা কেউই প্রশ্নপত্র দেখতে পারেন না। এ কারণে সংযোজন, বিয়োজন তাদের এখতিয়ারের বাইরে। তিনি বলেছিলেন, প্রথমে সেটাররা প্রশ্নপত্র তৈরি করার পর খামবদ্ধ করে মডারেটরদের কাছে পাঠান। মডারেটররা ওই প্রশ্নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে সংযোজন, বিয়োজন এমনকি বাতিল করার ক্ষমতা রাখেন। তারা সেটি করে ফের খামবদ্ধ করে শিক্ষাবোর্ডে জমা দেন। শিক্ষাবোর্ড কর্মকর্তারা কেবলমাত্র খামবদ্ধ প্রশ্নপত্র বিজি প্রেসে পাঠিয়ে দেন। আর সেখানেই ছাপার কাজ হয়। এ কারণে ভুল হোক আর সঠিক হোক বোর্ডের কারোর কিছুই করার থাকেনা।’ এখানকার সেটার ও মডারেটরদের কর্মকান্ডে বোর্ডের কর্মকর্তারা চরম বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন বলে জানিয়েছিলেন সাবেক এই পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক।
বিব্রতকর এই কর্মকান্ডের বিষয়ে যশোর বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর আহসান হাবীব ওইসময় বলেন, এ ধরনের ঘটনার জন্য তারা দুঃখিত, একইসাথে বিব্রতও। যারা এ কাজ করেছেন তারা তাদের চেতনার পরিপন্থি। যারা সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিয়েছে তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য শিক্ষা অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করা হবে।
এইচএসসির মতো পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে কেন সাম্প্রদায়িক কথাবার্তা লিখেছেন-এমন প্রশ্নের উত্তরে সেসময় প্রশান্ত কুমার পাল বলেছিলেন, ‘ভুলবশত অবচেতন মনে উৎপাদকটি লিখে ফেলেছি। খারাপ মতলব ছিল না। আমি নিশ্চিত ছিলাম না যে, আমার করা প্রশ্ন শেষ পর্যন্ত রাখা হবে।’
এদিকে, ফলাফল নিয়ে যশোর বোর্ডে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের চলতি দায়িত্বে থাকা সমীর কুমার বলেন, করোনার মধ্যে সরকারি নির্দেশনা মেনে পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। তারপরও ভালো রেজাল্ট হবে বলে প্রত্যাশা করেছেন তিনি।

অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।

প্রিয় পাঠক অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্যামেইলবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন themailbdjobs@gmail.com ঠিকানায়।

More articles

সর্বশেষ

x  Powerful Protection for WordPress, from Shield Security
This Site Is Protected By
Shield Security