বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ১১, ২০২৪

রেল কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর মহিউদ্দিন রনির আন্দোলন স্থগিত

যা যা মিস করেছেন

বাংলাদেশ রেলওয়ের অব্যবস্থাপনা পরিবর্তনে ছয় দফা দাবিতে আন্দোলনরত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মহিউদ্দিন রনি তাঁর অবস্থান কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করেছেন।

সোমবার রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হুমায়ুন কবীর ও বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্রনাথ মজুমদারের সঙ্গে দীর্ঘ চার ঘণ্টার বৈঠক করেন মহিউদ্দিন। বৈঠক শেষে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আস্থা রেখে এবং রেল মন্ত্রণালয়ের সচিব ও রেলওয়ের মহাপরিচালকের প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে আমার আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে কোনো তৃতীয় পক্ষ যেন দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে, সে জন্য আমি আমার অবস্থান কর্মসূচি সাময়িক স্থগিত ঘোষণা করছি।’

রেলের অব্যবস্থাপনা পরিবর্তনে ৭ জুলাই থেকে রাজধানী ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মহিউদ্দিন। ১০ জুলাই ঈদুল আজহার দিনেও তিনি অবস্থানে ছিলেন। মহিউদ্দিনের একক এ আন্দোলনে বিভিন্ন পর্যায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও সাধারণ মানুষ সংহতি জানান। সর্বশেষ রোববার তাঁর সঙ্গে সংহতি জানান গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী। যদিও জাফরুল্লাহ ও মহিউদ্দিনকে রেলস্টেশনে ঢুকতে দেওয়া হয়নি ৷

মহিউদ্দিন রনির দাবিগুলো হচ্ছে, টিকিট কেনার ক্ষেত্রে সহজ ডট কমের যাত্রী হয়রানি অবিলম্বে বন্ধ করা এবং হয়রানির ঘটনায় তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া, যথোপযুক্ত পদক্ষেপের মাধ্যমে টিকিট কালোবাজারি প্রতিরোধ, অনলাইনে কোটায় টিকিট ব্লক করা বা বুক করা বন্ধ করা এবং অনলাইন-অফলাইনে টিকিট কেনার ক্ষেত্রে সর্বসাধারণের সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা, যাত্রীচাহিদার সঙ্গে সংগতি রেখে ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ রেলের অবকাঠামো উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়া, ট্রেনের টিকিট পরীক্ষক-তত্ত্বাবধায়কসহ অন্য দায়িত্বশীলদের কর্মকাণ্ড সার্বক্ষণিক নজরদারি ও শক্তিশালী তথ্য সরবরাহব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে রেলসেবার মানোন্নয়ন এবং ট্রেনে ন্যায্য দামে খাবার বিক্রি, বিনা মূল্যে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা৷

সোমবার বিকেল চারটায় ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বরাবর ছয় দফা দাবি সংবলিত স্মারকলিপি জমা দেন মহিউদ্দিন। সে সময় তিনি বলেন, ‘ছয় দফা দাবির বিষয়ে রেল কর্তৃপক্ষকে স্মারকলিপি দেওয়ার পর ৪৮ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়েও কোনো কার্যকর আশ্বাস মেলেনি। তাই আজ প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিলাম। নিশ্চয়ই প্রধানমন্ত্রী একটা আশ্বাস দেবেন। আশা করি, প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি পড়লে এই ছয় দফা দাবিও বাস্তবায়ন হবে।’

মহিউদ্দিনের এ স্মারকলিপি গ্রহণ করে আওয়ামী লীগের উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান সাংবাদিকদের বলেন, তাঁরা স্মারকলিপিটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়ে দেবেন। এর কিছুক্ষণ পরই মহিউদ্দিনকে রেল ভবনে ডাকেন রেলওয়ের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্রনাথ মজুমদার। সেখানে সোমবার বিকেল সাড়ে পাঁচটা থেকে রাত সাড়ে নয়টা পর্যন্ত বৈঠক হয়।

বৈঠক শেষে মহিউদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘রেল ভবনে হওয়া বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে কিছু সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাঁরা (সচিব ও মহাপরিচালক) বলেছেন, ছয় দফা দাবি বাস্তবায়নের জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নেবেন। রেল মন্ত্রণালয়ের সচিব ও রেলের মহাপরিচালকের সম্মতিতে একজন প্রতিনিধিসহ উপস্থিত হয়ে আমাকে যাবতীয় অব্যবস্থাপনার তথ্য উপস্থাপন ও ছয় দফা দাবি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার ফলোআপে রাখার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।’

মহিউদ্দিন বলেন, দাবি বাস্তবায়ন করা না হলে বা সময়ক্ষেপণ করা হলে আবার আন্দোলনে ফিরে যাবেন তিনি৷

গত ১৩ জুন বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়েবসাইট থেকে ঢাকা-রাজশাহী রুটের ট্রেনের আসন বুক করার চেষ্টা করেন মহিউদ্দিন। কিন্ত মুঠোফোনে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিকাশ থেকে যাচাইকরণ কোড দিয়ে তাঁর পিন কোড ছাড়াই অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কেটে নেওয়া হয়। মহিউদ্দিন ট্রেনের কোনো আসন পাননি, এমনকি কেন টাকা নেওয়া হলো, সে বিষয়ে কোনো রসিদ তাঁকে দেওয়া হয়নি। সেদিন কমলাপুর রেলস্টেশনে সার্ভার কক্ষে অভিযোগ জানালে সেখান থেকে তাঁকে ‘সিস্টেম ফল’ করার কথা বলা হয় এবং ১৫ দিনের মধ্যে টাকা না পেলে আবার যেতে বলা হয়। কিন্তু ওই মুহূর্তে ওই কক্ষে থাকা কম্পিউটার অপারেটর ৬৮০ টাকার আসন ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করেন বলে অভিযোগ মহিউদ্দিনের।

মহিউদ্দিন জানান, ওই ঘটনার বিষয়ে ১৪ ও ১৫ জুন দুবার তিনি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ করেন। কিন্তু সেখান থেকে কোনো জবাব বা শুনানির জন্য ডাক না পেয়ে ৭ জুলাই থেকে তিনি কমলাপুর রেলস্টেশনের টিকিট কাউন্টারের সামনে অবস্থান ও গণস্বাক্ষর কর্মসূচি শুরু করেন।

পরে মহিউদ্দিনের অভিযোগের ভিত্তিতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সহজ ডট কমকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করে।

সোমবার রাতে অবস্থান কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণার পর মহিউদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের যে ধাক্কা দেওয়া হয়েছে, আমি এর সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচার প্রত্যাশা করছি। গত বৃহস্পতিবার কার নির্দেশে কমলাপুর রেলস্টেশনে আমার শিক্ষার্থী ভাই-বোনদের গায়ে হাত দেওয়া হয়েছে, তার সুস্পষ্ট তদন্ত সাপেক্ষে বিচার প্রত্যাশা করছি। রোববার একজন মুক্তিযোদ্ধা, জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে কমলাপুর রেলস্টেশনে ঢুকতে না দিয়ে যে অসম্মান করা হয়েছে, এর পরিপ্রেক্ষিতে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, আমি তা দেখার অপেক্ষায় থাকব।’

অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।

প্রিয় পাঠক অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্যামেইলবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন themailbdjobs@gmail.com ঠিকানায়।

More articles

সর্বশেষ

x  Powerful Protection for WordPress, from Shield Security
This Site Is Protected By
Shield Security