বর্তমানে ক্যানসারের বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি প্রচলিত থাকলেও এই রোগ থেকে পুরোপুরি নিষ্কৃতি পাওয়ার নজির খুবই বিরল। বিজ্ঞানীরা সম্পূর্ণভাবে ক্যানসার থেকে নিরাময় পাওয়ার ওষুধ আবিষ্কারের চেষ্টা করছেন বহু বছর ধরেই। তবে মানব ইতিহাসে এই প্রথম এমন একটি ওষুধের সফল পরীক্ষামূলক প্রয়োগের তথ্য সামনে এলো, যা মাত্র ছয় মাসেই রোগীর শরীরের সমস্ত ক্যানসারের কোষকে ধ্বংস করতে সক্ষম।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে অবস্থিত মেমোরিয়াল স্লোন কেটারিং ক্যানসার সেন্টারের বিশেষজ্ঞ ড. আন্দ্রেয়া সেরসেকের নেতৃত্বে সম্পন্ন হয়েছে এ গবেষণা। মাত্র ১২ জন রোগী নিয়ে খুব স্বল্প পরিসরে করা এই গবেষণার ফলাফল দেখে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলেন গবেষকরা।
সম্প্রতি একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ গবেষণার কথা জনসম্মুখে আনেন ড. সেরসক। এ সংক্রান্ত একটি গবেষণাপত্র রোববার (৬ জুন) প্রকাশিত হয়েছে ওষুধ বিষয়ক সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন ‘নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন’-এ এবং গোটা গবেষণাটি করা হয়েছে ব্রিটিশ ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থা গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইনের তত্ত্বাবধানে।
বলা হচ্ছ, ডেস্টারলোম্যাব নামের এই ওষুধটি ক্যানসারের প্রচলিত অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতির মতো যন্ত্রণাদায়ক নয়। এটি একটি ট্যাবলেট জাতীয় ওষুধ। মূলত এই ওষুধটি প্রয়োগ করা হয়েছিল মলদ্বারের ক্যানসারে আক্রান্ত ১২ জন রোগীর ওপর। প্রতি তিন সপ্তাহ পরপর ছয় মাস ধরে একটি করে ট্যাবলেট নিতো তারা। ছয় মাস পর তাদের আবারও পরীক্ষা করা হয়। সেই পরীক্ষায় কোনো রোগীর শরীরেই আর বিন্দুমাত্র ক্যানসারের কোষ শনাক্ত হয়নি।
নিউইয়র্ক টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ড. আন্দ্রেয়া সেরসেক বলেন, এটি ছিল এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। যখনই গবেষণার ফল আমাদের সামনে এলো, খুশিতে তখন কেউই চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি আমরা। তিনি জানান, রেডিয়েশন, অস্ত্রপচার বা কেমোথেরাপির মতো প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতির মতো এই ওষুধ নেয়ার পর তেমন কোনো ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় না। শরীরের স্বাভাবিক ক্রিয়াকলাপ অক্ষুন্ন থাকে।
তবে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্তের আগে এই ওষুধ নিয়ে আরও গবেষণা করতে হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। তবে এখন পর্যন্ত এই ওষুধ যতটুকু সফলতা দেখিয়েছে তা মানব ইতিহাসে প্রথম।