কুষ্টিয়া প্রতিনিধি-
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ এমপি বলেছেন, মৃত্যুর আগ মুহুর্ত পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন সৃষ্টিশীল একজন মানুষ। একজন সৃষ্টিশীল সাহিত্যিক তার সৃষ্টির একশ বছর পর মানুষ কিভাবে ভাববে সেটা তিনি সে সময় ১৪০০ সাল কবিতায় লিখে গিয়েছেন। আজকে শতবর্ষ পরেও রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টি আমাদের কাছে এখনো মনে হয় যে অমর হিসেবে আছে এবং এই বাঙ্গালি জাতি যতদিন থাকবে, বাংলা ভাষার মানুষ যতদিন থাকবে, ততদিন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সারা বিশ্বের বাঙ্গালির হৃদয়ে থাকবেন চির অমর, চির ভাস্মর।
সোমবার বিকেলে ২৫ শে বৈশাখ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬১ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় পর্যায়ে বিশ্বকবির স্মৃতিবিজড়িত কুষ্টিয়ার শিলাইদহ কুঠিবাড়িতে তিন দিনব্যপী জাতীয় অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিনের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেন।
কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলামের সভাপতিত্বে এসময় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, কুষ্টিয়া-৪ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিষ্টার সেলিম আলতাফ জর্জ এমপি, পুলিশ সুপার খাইরুল আলম, জেলা পরিষদের প্রশাসক হাজী রবিউল ইসলাম, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক বীরমুক্তিযোদ্ধা আজগর আলী, কুষ্টিয়া প্রেসক্লাব কেপিসির সভাপতি হাজী রাশেদুল ইসলাম বিপ্লব। স্মারক বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সৈয়দ আজিজুল হক। আলোচক ছিলেন বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক এ্যাড. লালিম হক, কবি ও সাহিত্যিক আলমারা জুঁই। স্বাগত বক্তব্য রাখেন কুমারখালী উপজেলার নির্বাহী অফিসার বিতান কুমার মন্ডল।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জননেতা মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি আরও বলেন, রবীন্দ্রনাথ বাঙ্গালির গৌরব। বাংলা সাহিত্যের গৌরব। তিনি একাধারে কবি, লেখক, গল্পকার, নাট্যকার, চিত্রকর, সমাজ সংস্কারক। তিনি আরও বলেন, কবিগুরু ৮ বছর থেকে লেখা শুরু করেছেন যা ৮০ বছর পর্যন্ত অব্যাহত ছিলো। তাঁর হাতে আঁকা ২ হাজারেরও বেশি
চিত্র রয়েছে, যা ঐ সময়ের সবচেয়ে বেশি চিত্র। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বৃটিশ শাসকদের গুলিতে পাঞ্জাবের গণহত্যার প্রতিবাদে নাইট উপাধি প্রত্যাখান করেছিলেন।
আলোচনা শেষে রবীন্দ্র সংগীত, কবিতা আবৃতি, দলীয় নৃত্য ও রবীন্দ্রনাথের লেখা নাটক পরিবেশন করেন রবীন্দ্র শিল্পীরা। এদিকে তিনদিনের এই জন্ম উৎসবকে ঘিরে রবীন্দ্রপ্রেমী ও দর্শনার্থীদের ভীড়ে মুখর এখন কুঠিবাড়ি প্রাঙ্গন। করোনার কারনে গত দুই বছর এই অনুষ্ঠান না হওয়ায় এবারের আয়োজনকে ঘিরে তাদের মধ্যে ব্যপক উৎসাহ উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের সহযোগীতায় ও কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের আয়োজনে অনুষ্ঠান মালার মধ্যে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ছাড়াও গ্রামীন মেলা চলছে। আর এই উৎসবকে নির্বিঘ্ন করতে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহন করেছে প্রশাসন।
উল্লেখ্য, জমিদারী দেখাশোনার জন্য ১৮৯১ সালে প্রথম এই কুঠিবাড়ীতে আসেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। নিরিবিলি পরিবেশ, জমিদারী আর ব্যবসার কারনে বার বার কুষ্টিয়ার এই কুঠিবাড়িতে ফিরে আসতেন তিনি। নিভূত বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চল কুষ্টিয়ার শিলাইদহে কবীর জীবনের বেশকিছু মূল্যবান সময় কেটেছে। এখানে বসে রচিত গীতাঞ্জলী কাব্যই রবীন্দ্রনাথকে এনে দিয়েছে নোবেল পুরষ্কার আর বিশ্বকবির মর্যাদা। এছাড়াও তিনি এখানে বসেই আমাদের জাতীয় সঙ্গীতসহ অসংখ্য কালজয়ী সাহিত্য রচনা করেছেন। কুঠিবাড়িতে সংরক্ষন আছে সেসব দিনের নানা স্মৃতি।