টানা বেড়েই চলেছে এলপিজি ও অটোগ্যাসের দাম। এবার ১২ কেজি এলপিজির দাম ৪৮ টাকা বাড়িয়ে এক হাজার ৩৯১ টাকা থেকে এক হাজার ৪৩৯ টাকা পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। ১২ কেজিতে বাড়ানো হয়েছে শতকরা সাড়ে তিন ভাগ। ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত তিন মাসে ১২ কেজি এলপি গ্যাসের দাম বাড়ানো হলো ২০০ টাকা।গ্রাহকপর্যায়ে এলপি গ্যাসের দাম বাড়ানোর ফলে সব শ্রেণীর গ্রাহকের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাবে। এমনিতেই সব ধরনের দ্রব্যমূল্য এর মধ্যে বেড়ে গেছে। এর ওপর নতুন করে এলপি গ্যাসের দাম বৃদ্ধিতে এলপি গ্যাস ব্যবহারীদের দুর্ভোগ আরো বেড়ে যাবে।
রোববার ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে নতুন এই দর ঘোষণা করেন বিইআরসির চেয়ারম্যান আবদুল জলিল। এতে অন্যদের মধ্যে অংশ নেন কমিশনের সদস্য মকবুল ই-এলাহী চৌধুরী, মোহাম্মদ আবু ফারুক, মোহাম্মদ বজলুর রহমান, কামরুজ্জামান, সচিব খলিলুর রহমান খান। নতুন দর গতকাল সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে কার্যকর হয়েছে।
জানা গেছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে সব ধরনের জ্বালানির দাম বেড়ে গেছে। এলপি গ্যাসের দাম সাম্প্রতিক বছরগুলোর সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। এপ্রিল মাসে (সৌদি আরামকো) যথাক্রমে প্রতি টন প্রোপেন ৯৪০, বিউটেন ৯৬০ ডলারে বিক্রি হচ্ছে। ২০১৪ সালের পর আর কখনো এত বেশি দরে বেচাকেনা হয়নি রান্নার কাজে বহুল ব্যবহৃত জ্বালানি পণ্যটি।
বিইআরসির গত তিন মাসের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত ফেব্রুয়ারিতে ১২ কেজি এলপি গ্যাসের দাম ছিল এক হাজার ২৪০ টাকা। গত মাসে তা বেড়ে এক হাজার ৩৯০ টাকা করা হয়। চলতি মাসে আরেক দফা বাড়িয়ে এক হাজার ৪৩৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আলোচ্য সময়ে ১২ কেজি এলপি গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে ২০০ টাকা।
একই সাথে বাড়ানো হয়েছে পরিবহনে ব্যবহৃত এলপি গ্যাসের দামও, যা অটোগ্যাস নামে প্রচলিত। মার্চ মাসে অটোগ্যাসের দাম প্রতি লিটার ৬৪ টাকা ৭৮ পয়সা করা হয়, চলতি মাসে আরেক দফা বাড়িয়ে ৬৭ টাকা ২ পয়সা নির্ধারণ করা হয়। অথচ গত ফেব্রুয়ারিতে যা ছিল ৫৭ টাকা ৮১ পয়সা।
অতীতে দাম কমানো হলেও বেশি দামে বিক্রির অভিযোগ ছিল। কিন্তু দাম বাড়ানোর পর তা বাস্তবায়ন হয় সাথে সাথে। আবার বিইআরসি যেহারে দাম বাড়ায় তার চেয়ে কোথাও কোথাও বেশি দামে বিক্রির অভিযোগও ছিল। সম্প্রতি বিইআরসি এ বিষয়ে তদারকি জোরদার করেছে। অন্যান্য পণ্যের মতোই এলপি গ্যাসের জন্যও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা শুরু হয়েছে। ঢাকার একটি দোকানে অভিযান চালিয়ে বেশি দামে বিক্রির প্রমাণ পাওয়ায় জরিমানা ও দোকানটি সিলগালা করে দিয়েছে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। বিইআরসির সদস্য (গ্যাস) মকবুল ই-ইলাহী চৌধুরী বলেছেন, সামনের দিনগুলোতে আরো কঠোর ভূমিকা পালন করবে বিইআরসি। শুধু খুচরা বিক্রেতা কিংবা ডিলার নয়, বেশি দামে বিক্রির প্রমাণ পাওয়া গেলে কোম্পানির বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।গত বছরের ১২ এপ্রিলের আগে পর্যন্ত এলপিজির দর ছিল কোম্পানিগুলোর ইচ্ছাধীন। ১২ এপ্রিল প্রথমবারের মতো এলপি গ্যাসের দর ঘোষণা করে বিইআরসি। তখন বলা হয়েছিল আমদানিনির্ভর এই জ্বালানির সৌদি রাষ্ট্রীয় কোম্পানি আরামকো ঘোষিত দরকে ভিত্তি মূল্য ধরা হবে। সৌদির দর ওঠানামা করলে ভিত্তিমূল্য ওঠানামা করবে। জানুয়ারি মাসে সৌদি সিপির দর ছিল প্রোপেন ৮৯৫, বিউটেন ৯২০ ডলার; যা চলতি মাসে বেড়ে প্রোপেন ৯৪০, বিউটেন ৯৬০ ডলারে বিক্রি হচ্ছে। ঘোষণার পর থেকে প্রতি মাসে এলপিজির দর ঘোষণা করে আসছে বিইআরসি।