জীবন বিধ্বংসী নতুন নতুন মাদকে ঝুঁকছে তরুণ প্রজন্ম। আর শহরে নতুন নতুন মাদকের খোঁজ মিলে তা উদ্ধার করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এবার উদ্ধার করা হয়েছে নতুন মাদক ‘ম্যাজিক মাশরুম’। এই মাদক যদি কেউ ৫ থেকে ১০ মিলিগ্রাম সেবন করে তাহলে হ্যালুসিনেশন শুরু হয় এবং এর প্রতিক্রিয়া ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত থাকে। পর মানসিক রোগ- সাইকোসিস ছাড়াও অবিরাম হ্যালুসিনেশনের কারণ হতে পারে। এছাড়াও অনিদ্রা হয়, চোখ ফুলে যাওয়ার কারণও হতে পারে।
কয়েক মাস আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হাফিজুর রহমানের ‘আত্মহত্যা’র কারণ অনুসন্ধানে নেমে নতুন নতুন শক্তিশালী মাদকের সন্ধান পায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তাদের অভিযানে এলএসডি (লাইসার্জিক অ্যাসিড ডাইথ্যালামাইড), ডিএমটি (এনএন ডাইমিথাইলট্রিপটামিন), ব্রাউনি বা গাঁজার কেক (টেট্রাহাইড্রোক্যানাবিনল), ক্রিস্টাল মেথ বা আইস (মিথাইল এম্পেফিটামিন) এবং খাট (ক্যাথিনোন ও ক্যাথিন) নামের মাদক ধরা পড়ে। দেখা গেছে, এসব মাদকের বেশির ভাগই দেশে এসেছে বিদেশফেরত শিক্ষার্থীদের হাত ধরে। বিশ্বজুড়ে প্রায় ১৫০ ধরনের ম্যাজিক মাশরুম রয়েছে।
এগুলোর বেশির ভাগই পাওয়া যায় ইউরোপ ও আমেরিকায়। এসব দেশে পড়াশোনা করতে যাওয়া ধনীদের সন্তানদের একটি অংশ মাদকে আসক্ত হয়। তাদের বেশির ভাগেরই ভয়ংকরভাবে শক্তিশালী মাদকে আসক্তি থাকে।
র্যাবের মিডিয়া উইংয়ের কমান্ডার বলেন, নতুন মাদক ম্যাজিক মাশরুমে’ সেবন করার পর জীব-জন্তুর সঙ্গেও কথা বলা শুরু করে মাদকসেবীরা। কখনো কখনো অক্সিজেনের জন্য গাছ জড়িয়ে ধরার মতো কাণ্ডও করে। এই মাদক মূলত উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের তরুণেরা সেবন করে থাকে।
তিনি বলেন, ম্যাজিক মাশরুম একটি সাইকেলেডিক (হ্যালোসিনোজেন) ড্রাগ। এই ড্রাগটি বিভিন্ন খাবারে- কেক ও চকলেট মিক্স অবস্থায় সেবন করা হয়। এছাড়াও পাউডার ক্যাপসুল হিসেবেও পাওয়া যায়। এই ড্রাগ ব্যবহারে সেবনকারীর নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ থাকে না। এমনকি কেউ কেউ ছাদ থেকে ঝাঁপিয়েও পড়তে পারে।
ম্যাজিক মাশরুম সেবনে শারীরিক ক্ষতি ছাড়াও দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে মানসিক রোগ- সাইকোসিস ছাড়াও অবিরাম হ্যালুসিনেশনের কারণ হতে পারে। এই ধরনের অপ্রচলিত ড্রাগের চাহিদা তৈরি হয় মাদক সেবীদের নতুনত্বের প্রতি আগ্রহের মাধ্যমে।
যে ছাত্র, তরুণ ও যুবসমাজ দেশের স্বাধিকার আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে, একসময় জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষার কেন্দ্রস্থল হিসেবে যারা বিবেচিত হয়েছে, আজ তারা মাদকের ভয়াল থাবায় বিপথগামী।
সন্ত্রাসবাদ ও কূপমণ্ডূকতার প্রতিভূ জঙ্গিবাদের সঙ্গে দৃশ্যত এদের জড়িয়ে পড়ার পেছনে মাদকের একটি বড় ভূমিকা রয়েছে। তবে সামাজিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার স্বার্থে মাদকাসক্তি রোধ ও সামাজিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় সবাইকে যত্নবান হতে হবে। দেশের প্রাণশক্তি তরুণ ও যুবসমাজকে সব ধরনের সর্বনাশা মাদকের থাবা থেকে মুক্ত করতে সংশ্লিষ্ট সবার দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।